Home বাংলাদেশ বাজেট বাস্তবায়ন করতে সক্ষম সরকার: প্রধানমন্ত্রী

বাজেট বাস্তবায়ন করতে সক্ষম সরকার: প্রধানমন্ত্রী

A+A-
Reset

বাংলাপ্রেস ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট বাস্তবায়ন করতে সরকার সক্ষম। কারণ তারা তাদের সক্ষমতা আগেই দেখিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের জাতীয় বাজেট দিয়েছি। আমরা এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারি এবং আওয়ামী লীগ তা করতে পারে।

রোববার চিলাহাটি-ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা গণভবন থেকে নীলফামারীর চিলাহাটি রেলস্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।

তিনি বলেন, অনেকেই এই বাজেট নিয়ে অনেক কথা বলবে। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল কীসে, তা জানি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৬ সালে বিএনপি শাসনামলে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আমাদের সরকার গত ১ জুন ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছে।

তিনি বলেন, একদল লোক দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক টেলিভিশন চ্যানেল থাকায় এর অপব্যবহার করছে, আওয়ামী সরকারই বেসরকারি খাতে যেগুলোর লাইসেন্স দিয়েছে। সরকার যাই করুক না কেন, তারা এসি রুমে বসে সরকারের সব কাজের সমালোচনা করে, আর ‘কিন্তু’ (ত্রুটি) খুঁজে বেড়ায়। তারা দেশের জনগণকে হতাশ করার জন্য এবং বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু কথাও ছড়িয়ে দেয়। তারা এ থেকে কী পায় তা আমি জানি না। তারা সম্ভবত কিছু হাদিয়া (টাকা) সংগ্রহ করে থাকতে পারে, আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলে তৃপ্তি পায়।

প্রতি বছর জাতীয় বাজেট পেশ করার পর সরকারের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না— যারা এসব বলে বেড়ায় তাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে তা করে দেখায়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি এই ধরনের লোকদের বলতে চাই— আপনি গত বছর কী বলেছিলেন এবং আজকের বাংলাদেশ কোথা থেকে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। অনুগ্রহ করে হিসাব করুন ও তুলনা করুন।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা- পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ অন্যান্য দেশ থেকে জ্বালানি তেল, গ্যাস, খাদ্যসামগ্রী, গম, চিনি ও অন্যান্য যা কিছু আমদানি করছে, তার দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবহন খরচ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৮০০ যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আন্তঃনগর ট্রেন ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ উদ্বোন করেন, যা সপ্তাহে ছয়দিন এই রুটে চলাচল করবে।

চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন নীলফামারী জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল। কারণ হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রুটটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার জন্য পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। পণ্য বোঝাই ওয়াগনের পাশাপাশি এই রুটে চলছে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শতভাগ বিদ্যুৎ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল এবং তারা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু আজ সারা বিশ্বে গ্যাস-তেল-কয়লার দাম বাড়ায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। টাকা দিয়েও এখন আর তা (গ্যাস-তেল-কয়লা) কেনা সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, আমি জানি এজন্য এই গ্রীষ্মে মানুষ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। একদিকে মুদ্রাস্ফীতি অন্যদিকে লোডশেডিং, এই দুটি সমস্যায় আমার দেশের মানুষ ভুগছে।

শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি বৈদ্যুতিক পাখায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তবে এটি ছাড়া থাকা তার পক্ষে আরো বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে। এটাও সত্য যে- আমরা এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু এটা এখন পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, যদি যুদ্ধ না হতো এবং এর কারণে নিষেধাজ্ঞা না থাকত, তাহলে দেশ এ ধরনের কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতো না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। আজ যুদ্ধের কারণে বিশ্বের প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখনো কোনো সংকটের মধ্যে পড়েনি। ইনশাআল্লাহ, দেশ এমন পরিস্থিতিতে পড়বে না।

তিনি বলেন, কিন্তু এ জন্য আমাদের দেশের জনগণকে একটা কাজ করতে হবে। আমি বারবার বলছি- আমাদের যত অনাবাদি জমি আছে তার সব চাষ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের যত জলাশয় আছে সেখানে মাছ চাষ করতে হবে।

দেশের উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলে চা উৎপাদন না হলেও আওয়ামী লীগ সরকার তার উদ্যোগে সেখানে চা চাষ শুরু করে। এখন পঞ্চগড় থেকে কুঁড়িগ্রাম পর্যনস্ত বিস্তীর্ণ এলাকা চা চাষের আওতায় আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য বহুবিধ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।

রেল যোগাযোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ট্রেন সাধারণ মানুষের পরিবহন এবং অধিকাংশ মানুষই এটি ব্যবহার করে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, চিলাহাটি-ঢাকা-চিলাহাটি রুটে এই ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে নীলফামারীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ভালো সুযোগ তৈরি হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এটি কেবল জনগণের যাতায়াতের সুবিধাই নিয়ে আসবে না, বরং এর পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও বাড়াবে।

প্রধানমন্ত্রী জনগণকে ট্রেনটি সাবধানে ব্যবহার করার, এর যত্ন নেয়ার ও এটি পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, সরকার সারাদেশে রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রারণ করছে এবং পদ্মাসেতুতে রেল চালুর পর ভাঙ্গা থেকে বরিশালের রেল যোগাযোগ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, বরিশালের মানুষ রেললাইন দেখতে পায়নি। তাই আমাদেরও বরিশাল থেকে পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করতে হবে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে তার সরকার বিএনপি ও অন্যান্য সরকারের দ্বারা বন্ধ হওয়া সমস্ত রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করে।

তিনি বলেন, এখন আমরা যমুনা নদীর ওপর একটি পৃথক রেল সেতু নির্মাণ করছি। একসময় বিশ্বব্যাংক বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে রেলপথের বিরোধিতা করলেও এখন তারা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণে অর্থায়ন করছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সরকার যাত্রীসেবা ও পণ্য সরবরাহের জন্য ৪৬টি নতুন ব্রড-গেজ লোকোমোটিভ, ৪৬০টি নতুন ব্রড-গেজ যাত্রীবাহী গাড়ি, ১৫০টি নতুন মিটারগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি, ১২৫টি আধুনিক লাগেজ ভ্যান ও ১৩১০টি নতুন ওয়াগন সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। পরিবহনের পাশাপাশি রেলের বহুমুখী ব্যবহার।

এছাড়াও ২০০টি যাত্রীবাহী গাড়ির পুনর্বাসনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি- এই নতুন লোকোমোটিভ, যাত্রীবাহী গাড়ি এবং ওয়াগনের মাধ্যমে রেলওয়ে পরিষেবা ৩/৪ বছরের মধ্যে একটি নতুন যুগে পা রাখবে।

মানুষ এর সুফল পাবে ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

গেট বন্ধ থাকার পরও মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইনে হেঁটে বা রেললাইন পার হওয়ার চেষ্টা না করার ব্যাপারে দেশবাসীকে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

শনিবার ভারতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা সাধারণত ঘটে না। এই ঘটনায় ২৮৮ জন মারা গেছে। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, এটি সত্যিই খুব দুঃখজনক। এ ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।

বিপি/কেজে

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী