বাংলাপ্রোস অনলাইন: যুবক শ্রেণি একটি দেশের বিপুল কর্মযজ্ঞের নিউক্লিয়াসে থাকে। সে কারণে যুব দিবসটি অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। জাতীয় যুবনীতিতে ১৮-৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে যুব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আদমশুমারি ২০১১ অনুযায়ী দেশে যুব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪ কোটি ৮০ লাখ ২৪ হাজার ৭০৪ জন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এবারের ‘জাতীয় যুব দিবসে’র প্রতিপাদ্য হলো—‘জেগেছে যুব গড়বে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। গতবছরের প্রতিপাদ্য ছিল—‘যুবদের জাগরণ, বাংলাদেশের উন্নয়ন।’ ইতোমধ্যে ‘জাতীয় যুবনীতি ২০১৭’ ঘোষিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত অঙ্গীকার অনুসারে শেখ হাসিনা সরকার দেশের যুবসমাজকে গঠনমূলক কাজে উত্সাহী করছে। আর ভবিষ্যত্ পরিকল্পনায় তাদের সহযোগিতা ছাড়া দেশের অগ্রগতি অসম্ভব—এই উপলব্ধিও রয়েছে সংশ্লিষ্ট সকলের।
দেশের অগ্রগতি জানান দিচ্ছে, যুবসমাজের এগিয়ে চলছে দিকনির্দেশনা মাফিকই। যেমন—দেশে অনুকূল ব্যবসা পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। বিনিয়োগের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ১০টি সেবাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম চলছে। অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম ‘পে-পল’ বাংলাদেশে চালু হয়েছে। এখন থেকে ফ্রিল্যান্স রেমিটেন্স উপার্জনকারীরা বিদেশ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে তাদের পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন। এই সেবার মাধ্যমে প্রবাসীরাও বৈধ চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠানোর সুবিধা পাবেন। অন্যদিকে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ব্যুরো অব পলিসি অ্যান্ড প্রোগ্রাম সাপোর্ট-এর সহকারী প্রশাসক ও পরিচালক ম্যাজি মার্টিনেজ সোলিম্যান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। আবার সামাজিক, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় এ বছর ‘জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’ লাভ করেছে ৪০টি যুব সংগঠন ও ব্যক্তি। এদের মধ্যে থেকে শীর্ষ ১০ সংগঠনকে নির্বাচিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ সংগঠন প্রতিনিধিদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। এই আয়োজনের শুরু থেকে আশাতীত সাড়া পায় আয়োজক ইয়ং বাংলা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৫০০ প্রতিষ্ঠানের আবেদন আসে। অর্থাত্ একদিকে দেশের এগিয়ে যাওয়ার বাস্তবতা, অন্যদিকে যুবদের কর্মকাণ্ড আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে।
যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদেরকে আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে উত্পাদনমুখী ও দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে অত্যন্ত সহজশর্তে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ নিউইয়র্কে UN-Women এবং Global Partnership Forum প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে Planet 50-50 Champion-এর স্বীকৃতি দেয় এবং Agent of Change Award প্রদান করে। ৩৬ পরিবারভিত্তিক কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ২৩৬টি উপজেলার ৬,২২,৮২১ জনকে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ঋণ আদায়ের হার ৯৭%। যুব প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ৬৪টি জেলার ৪৮৫টি উপজেলায় এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ১০টি থানায় ১৮,৮৬,২৮৪ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান অব্যাহত আছে। ঋণ আদায়ের হার ৯৪%। ঋণ বিতরণের টাকার পরিমাণ অপ্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডে ৫০ হাজার টাকা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডে ১ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছর ধরে চলছে জনবান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক এক সচেষ্ট উন্নয়ন অগ্রযাত্রা। ডেল্টা-২১০০, ভিশন-২০২১, রূপকল্প-২০৪১, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টকে সামনে রেখে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কার্যক্রম হচ্ছে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ ও ১০টি অর্থনৈতিক মেগা প্রকল্প উন্নয়নের গতিধারায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দুই মেয়াদে একটানা ১০ বছরে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এক্ষেত্রে যুবসমাজের অগ্রণী ভূমিকা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যুবকদের সংগঠিত করে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে উজ্জীবিত করেছিলেন, উদ্যমী করেছিলেন। এই যুবকরাই মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। এখন তাদের জাগরণেই দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব।
৩. দুই বছর আগে হলি আর্টিজানের ঘটনার পর শিক্ষিত যুবসমাজের একাংশের প্রতি জনমনে আতঙ্ক জাগ্রত হয়। সে বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় যুব দিবসে বলেছিলেন, ‘আমাদের যুবশক্তি বিপথে যাক, চাই না।’ সে সময় যুবসমাজকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে দূরে থেকে নিজস্ব মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি এবং পারিবারিক জীবনকে সুন্দর করার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হবার আহবান জানিয়েছেন তিনি। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে, ছেষট্টির ছয়দফার সংগ্রাম, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এবং নব্বইয়ের গণআন্দোলনে যুবসমাজ সম্পৃক্ত ছিল। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এ দেশের যুবসমাজ আত্মত্যাগের যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, জাতি তা চিরদিন স্মরণ করবে। আমাদের যুবসমাজকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে। দেশের উন্নয়নে যুবকদের ভূমিকা রাখতে হবে।’ তবে এদেশের যুবসমাজ অন্যায়ের প্রতিবাদে বারবার সোচ্চার হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে রাস্তায় নেমেছে।
এজন্য যুবসমাজকে নিয়ে হতাশার কিছু নেই। ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন ৪১’ ঘোষণা করা হয়েছে। সকল আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রচেষ্টা সে লক্ষ্যে নিবেদিত। এজন্য যুবদের সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সততা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে কর্তব্য পালন করলে আমরা অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো। আর এভাবেই জাতীয় যুব দিবসের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
লেখক : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল : [email protected]
বাংলাপ্রোস/এফএস