বাংলাপ্রেস ডেস্ক: দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে অমর একুশে বইমেলা। লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ হওয়ায় এ বছর বইমেলা চলবে ২৯ দিন। প্রথম দিন ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় কম থাকলেও দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) প্রথম ছুটির দিনেই পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বইপ্রেমীদের আনাগোনা আর ঘোরাফেরায় মুখর হয়ে ওঠেছে পুরো প্রাঙ্গণ। কেউ বই কিনছেন, কেউ হাতে নিয়ে দেখছেন আবার কেউবা প্রিয় লেখকের বই কবে আসবে খোঁজ নিচ্ছেন। তবে মেলার শৌচাগার পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থী ও পাঠকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ বছরের বইমেলায় বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অংশের মোট ৮টি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ দিয়ে পাঠক-দর্শনার্থীরা আসা-যাওয়া করতে পারছেন। তবে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে একটি বের হওয়ার পথে। বাংলা একাডেমির দিকে বের হওয়ার পথটিকে এবার একটু সরিয়ে রমনা মন্দির গেটের কাছাকাছি নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথমা প্রকাশ, জ্ঞানকোষ, অনন্যা, ঐতিহ্য, বেঙ্গল পাবলিশার্সসহ বিভিন্ন স্টলে ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়। এসব স্টলে পছন্দের লেখককে ঘিরে দেখা গেছে সেলফি তোলার হিড়িক। বিক্রেতারাও ব্যস্ত ছিলেন বই বিক্রিতে।
তবে বিক্রেতারা জানান, শুরুর ২য় দিন হওয়ায় খুব একটা বেচাকেনা হয়নি। মেলায় আসা বেশির ভাগ দর্শনার্থীই বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বইয়ের মলাট উল্টেপাল্টে দেখেছেন আর নতুন নতুন বইয়ের খোঁজ নিয়েছেন, জেনেছেন দামও।
প্রথমা প্রকাশনীর বিক্রেতা মেহেদি হাসান বলেন, আমাদের স্টলে অন্যান্য স্টলের তুলনায় বেশি বিক্রি হচ্ছে। ছুটির দিন হিসেবে মানুষ বেশি আসছে ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জ্ঞানকোষ প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মী তাহরিন সুমাইয়া বলেন, আমি কয়েকবছর ধিরে বইমেলায় কাজ করছি। বইমেলার ২য় দিন হিসেবে অন্য বছরের তুলনায় এবছর পাঠক ও দর্শনার্থী উভয়ই বেড়েছে। দর্শনার্থীরা শুধু মেলা ও বই দেখাতেই ব্যস্ত। পাঠকরা মেলায় সময় কম নিচ্ছেন। তারা এসে বই দেখে পছন্দ করে নিয়ে যায়। তিবে মানুষ সংখ্যা বিবেচনায় বিক্রি কম হচ্ছে।
তবে কর্তৃপক্ষের সার্ভিস নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন স্টল মালিকরা। শোভা প্রকাশ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ বলেন, বইমেলায় এত এত অব্যবস্থাপনা। আমাদের থেকে শুধু টাকাই নিচ্ছে কিন্তু ভালো সার্ভিস পাচ্ছি না।
ঈশিতা ইসলাম বলেন, শৌচাগারে ভালো পরিবেশ নেই। পানির সংকট রয়েছে। বইমেলা হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর হয়। এত্ত-এত্ত মানুষ, সব সময় কারও না কারও জরুরি প্রয়োজনে টয়লেট দরকার হতে পারে। কিন্তু টয়লেট যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হয় বিপদে পড়তে হয় আমাদের কে।
শুক্রবার ছিল মেলার ২য় দিন। মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ৩১টি। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : মহাকবি আলাওল শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইমন জাকারিয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মিল্টন বিশ্বাস এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোঃ আবুল কাসেম। সভাপতির বক্তব্যে মোঃ আবুল কাসেম বলেন, মধ্যযুগে প্রচলিত বিশ্বাস ছিল যে বাংলা ভাষা মুসলমানের ভাষা নয়, হিন্দুর ভাষা। তথাপি মধ্যযুগের মুসলমান কবিগণ বাংলা ভাষায় প্রচুর সাহিতকর্ম রচনা করেছেন। মহাকবি আলাওলও এর ব্যতিক্রম নন। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মের একাধিক পাঠ থেকে লেখকের অভিপ্রেত পাঠটি পুনরদ্ধার করাই পাণ্ডুলিপি বা পুথি সম্পাদনার মূল উদ্দেশ্য। এই কষ্ঠসাধ্য কাজে তরুণ গবেষকদের উৎসাহিত করতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাচীন ও দুষ্প্রাপ্য পুথি এবং পাণ্ডুলিপি সহজলভ্য করতে হবে।
বিপি/টিআই