দিনাজপুর প্রতিনিধি: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে চলছে দু’দলের ব্যাপক প্রস্তুতি। বেগম খালেদা জিয়া এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন, লড়বেন ইকবালুর রহিমের সাথে এ গুঞ্জন দিনাজপুর শহরে বেশ আলোচিত হচ্ছে। এই প্রথম বিএনপি দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া দিনাজপুর-৩ আসনের প্রার্থী হচ্ছেন এখবরে ভোটারদের মধ্যে যেমন উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি হেভিওয়েট এ প্রার্থীর সাথে নির্বাচনী যুদ্ধে লড়ার জন্য আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ইকবালুর রহিম প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উভয় দলই নির্বাচনী কৌশল পর্যবেক্ষণ ও সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করেছে। এদিকে এ আশা ও প্রত্যাশায় দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনের ভোটাররা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। বিএনপি, আওয়ামী লীগ দু’দলই দাবি করছে এ লড়াই হবে মর্যাদার লড়াই। দুই দলই কোন প্রকার ছাড় দিতে নারাজ। আওয়ামী লীগ বলছে এ সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি জনগণ ভুলে যাবে না। এটাই তরুণ ও উদীয়মান নেতা ইকবালুর রহিমের পুঁজি। অপরদিকে বেগম খালেদা জিয়া দিনাজপুরের মেয়ে এমনটাই দাবি করে বিএনপি বলছে এ আসনেই খালেদা জিয়া শিশু থেকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করেছেন।
দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ১৪ হাজার। জনসংখ্যা প্রায় ৪ লাখের বেশি। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরছেন ও বিএনপি জামায়াতের নেতিবাচক কর্মকান্ড প্রচার করছেন। অপরদিকে বিএনপি ভোটারদের কাছে দাবি করছে গতানুগতিক উন্নয়ন ছাড়া এ সরকরারের আমলে কোন উন্নয়ন হয়নি। শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন জানান, আমরা পুরূপুরি প্রস্তুত।
খালেদা জিয়া প্রার্থী হলে নির্বাচন চ্যালেঞ্জমুখী হবে এতে কোন সন্দেহ্ নেই। তবে খালেদা জিয়াকে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে বিদায় নিতে হবে। ইতিমধ্যেই ১০টি ইউনিয়নে কমিটি গঠন ও ১৪৪টি ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন সম্পন্ন করা হয়েছে। ইকবালুর রহিম এক সময়ের বর্ষিয়ান নেতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর এড. এম. আব্দুর রহিমের কনিষ্ঠ পুত্র। তার তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। সামাজিক কর্মসূচিতেও তার ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য মানবপল্লী নামে পৃথক আবাসন ব্যবস্থা নির্মাণ করা, বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ ও সামাজিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখায় ওয়ার্ল্ড লিডারশিপ ফেডারেশন (ডব্লিউএলএফ) সোস্যাল ইনোভেটর ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী সমাবেশে লাখো মানুষের সমাগম ঘটিয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি। তিনি দিনাজপুর গোড়-এ শহীদ বড় ময়দানকে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দানে রুপান্তরিত করেছেন। এ ঈদগাহ্ মাঠে লাখ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সদর উপজেলার প্রতিটি বাড়িতে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান সম্পন্ন করায় গ্রামেগঞ্জে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইকবালুর রহিম আলোকিত মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
সন্তানদের লেখাপড়া সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, চুরি, ডাকাতি হ্রাস পেয়েছে, কৃষিখাতে উৎপাদন বেড়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানা সচল হয়েছে শতভাগ বিদ্যুতের কারণে। সরকারিভাবে ছাড়াও নিজস্ব তহবিল থেকে গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপ প্রদান ও লেখাপড়ার ব্যবস্থা করার ব্যাপক সুনাম রয়েছে হুইপ ইকবালুর রহিমের। এছাড়া যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যুবক-যুবতীদের চাকরি প্রদান করে তাদের কর্মসংস্থান করেছেন। ইকবালুর রহিমের পরিকল্পনায় আত্রাই নদীর উপর দেশের সর্ববৃহৎ রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে যা হাজার হাজার কৃষকের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। তার নির্বাচনী এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ রাস্তা পাকাকরণ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, মিটারগেজ ট্রেল লাইনকে ব্রডগেজে রুপান্তর, দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের নতুন ভবন নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন, স্কুল-কলেজ, মন্দির-মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারনকরণে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। দিনাজপুর এম.আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ, শিক্ষা ভবন, হাউজিং প্লট, খেলাধুলার জন্য আন্তজার্তিকমানের স্টেডিয়াম, হাবিপ্রবিসহ গত সাড়ে ৯ বছরে প্রায় ১৬শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদিকা তারিকুন বেগম লাবুন বলেন, মর্যাদার এ লড়াই মোকাবিলা করতে ইতিমধ্যে এ আসনে ওয়ার্ড, মহল্লা কমিটি গঠন সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিদিন চলছে পাড়া মহল্লায় মহিলাদের উঠান বৈঠক। মহিলাদের ৯০ শতাংশ ভোট ইকবালুর রহিমের নৌকায় পড়বে এ আশা প্রত্যাশা মহিলা লীগের। জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক মোকাররম হোসেন বলেন, বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মী ও ভোটারদের দাবি খালেদা জিয়া দিনাজপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। এ প্রত্যাশা নিয়ে বিএনপি জোরে সোরে নির্বাচনী কর্মকান্ড শুরু করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দিনাজপুরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর-৩ আসন বিএনপির ঘরেই ফিরে আসবে। তিনি দাবি করেন ১৯৯৬-২০০১ সালে এ আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালের সেনাবাহিনীর ছত্রছায়া ও ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে যায়। তবে বিএনপির শাসনামলে খুরশীদ জাহান হক চকলেট আপার নেতৃত্বে দিনাজপুরে দৃশ্যমান উন্নয়ন জনগণ ভুলে যায়নি।
বিগত সাড়ে ৯ বছরে এ আসনটি অবহেলিত হয়ে পড়েছে। সরকারের গতানুগতিক কাজ ছাড়া উন্নয়ন কোন কিছুই হয়নি। মানুষের নিরাপত্তা নেই, তেমন উন্নয়ন নেই। বেগম খালেদা জিয়া এ আসনে নির্বাচন করলে আসনটি বিএনপির ঘরেই ফিরে আসবে। তিনি বলেন, বিগত ৯ বছরে নেতাকর্মীদের ওপর মামলা গ্রেফতার ও নির্যাতন দিনাজপুরবাসী দেখেছে। ভুক্তভোগী ও নির্যাতিত, নিপীড়ত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা ম্যাডামের প্রার্থী হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে মো: মোকাররম হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের উপর অনেক সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে। বিএনপি নির্বাচনে না আসলে দিনাজপুরের ৬টি আসনে কেউ নির্বাচন করবে না। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) ও দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া (ম্যাডাম) দিনাজপুর সদর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করলে দিনাজপুর-৩ আসনসহ ৬টি আসনেই বিএনপির ঘরে ফিরে আসবে। তাই আমরা ম্যাডামকে এ আসনে নির্বাচন করার আহবান করেছি। দিনাজপুরের মেয়ে হিসেবে জেলার ৬টি আসনেই আওয়ামী লীগকে আসন ছেড়ে বিদায় নিতে হবে। জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী নাজমা মশির দাবি করেন মহিলা দল সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। ম্যাডাম নির্বাচন করলে ৯০ শতাংশ মহিলার ভোট ধানের শীষের বাক্সেই পড়বে। জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মোস্তফা কামাল মিলন দাবি করেন, যে কোন ছাত্র সংগঠনের চেয়ে ছাত্রদল এ আসনে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী। ম্যাডাম এ আসনের প্রার্থী হলে ছাত্রদল হবে নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান সৈনিক।
দিনাজপুরে খালেদা জিয়া-ইকবালুর রহিমের প্রার্থীতা নিয়ে আলোচনা
308