নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলা প্রেসে সংবাদ প্রকাশের পর চাকুরি হারালেন নিউ ইয়র্কের জামাইকায় অবস্থিত একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি মালিকানাধীন ‘বাড়িতে যত্ন’ (হোম কেয়ার) সেবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক। উক্ত মহাব্যবস্থাপকের হাতে কর্মস্থলে নারীকর্মীরা নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ ওঠে।
গত শনিবার (১১ মে) বাংলা প্রেসে ‘নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি হোম কেয়ার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের দিনেই তাকে মৌখিক ভবে হুশিয়ারি করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মাত্র দু’দিনে মাথায় সোমবার (১৩ মে) তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে।
নিউ ইয়র্কের জামাইকায় অবস্থিত একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি মালিকানাধীন ‘বাড়িতে যত্ন’ (হোম কেয়ার) সেবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক কাজী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ওরফে কাজীর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন প্রায় অর্ধ ডজন নারী। শুধু তাই নয় অনেক পুরুষকর্মীও তার দুর্ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে উঠেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক ও নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও প্রতিকার না হওয়ায় নারীকর্মীদের ওপর কাজীর যৌন হয়রানী ও পুরুষকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের মাত্রা দিন দিন বেড়েই যায়। বাংলা প্রেসে সংবাদ প্রকাশের পর দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক।
উল্লেখ্য, কাজী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ মাত্র ৮/৯ মাসে যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসে নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি মালিকানাধীন ‘বাড়িতে যত্ন’ (হোম কেয়ার) সেবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপকের চাকুরি পান। তিনি এখানে এসেছিলেন শুন্য হাতে। তার থাকা খাওয়াসহ কোন কর্মসংস্থান ছিল না। প্রতিষ্ঠানের মালিক তার অসহায়ত্বে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে তাকে ওই পদে নিয়োগ দেন। কিন্তু স্বল্প সময়ে বিভিন্ন কৌশলে এবং মালিকের সরলতার সুযোগে অঢেল অর্থের মালিক হয়েছেন। নিউ ইয়র্কের করোনাতে ‘মেজবান হাউস’ নামে একটি রেস্তোরাঁয় রয়েছে যৌথ মালিকানা। একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক নারীকর্মীকে উক্ত রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব দিয়ে গোপনে ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কাজী চাকুরিতে যোগদানের ৬ মাসের মাথায় কর্মচারিদের সাথে এমন ভাব দেখান যে তিনিই উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক। নারী ও পুরুষকর্মীদের নিয়মিত শাসাতেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানে যে কোন নতুন নারী-কর্মীকে দেখলেই তিনি কুপ্রস্তাব দেন। তার এমন আচরনের ফলে অনেকেই চাকুরি ছেড়ে দিয়ে এখন ঘরে বসে আছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারীকর্মী জানিয়েছেন। তিনি অনেক নারীকর্মীকে কুপ্রস্তাবসহ দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য ক্ষুদে বার্তাও পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তিনি আরও জানান, উক্ত প্রতিষ্ঠানের মম নামের একজন নারীকর্মী কুপ্রস্তাবে রাজী না হলে দাপ্তরিক কাজের ভুল ধরিয়ে তাকে তার ফাঁদে ফেলেন। এক পর্যায়ে তাকে রাতের সঙ্গী করতে বাধ্য করেন। তারা দু’জনে বর্তমানে একত্রে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। কাজীর স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে লন্ডনে। তার চারিত্রিক অবনতির কথা স্ত্রী জানেন বলে নিয়মিত স্ত্রীর সাথে তার ঝগড়া হয়ে থাকে। স্ত্রীর সাথে তার এ ঝগড়ার কথা উক্ত ‘বাড়িতে যত্ন’ (হোম কেয়ার) সেবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারিদের জানা রয়েছে, কারণ তিনি স্ত্রীর সাথে নিয়মিত ঝগড়া করতেন অফিসে বসেই। তার লাম্পট্যের কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রটি শতভাগ নিশ্চিত করলেও চাকরিচ্যুতের বিষয়টি নিশ্চিত হতে কাজী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ও উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক ও নির্বাহী কর্মকর্তার উভয়য়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি।
বিপি/এসএম