জবি প্রতিনিধি: ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটালাইজ করার উদ্দ্যেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো কোড সামুরাই ২০২৪। ঢাকা সিটির বসতবাড়ি এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে নিষ্কাশিত বর্জ্য দ্রুত এবং অল্প খরচে ল্যান্ডফিল এ স্থানান্তরিত করার বিভিন্ন ডিজিটাল সিস্টেম তৈরির লক্ষ্যে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১৫ টি দলকে পেছনে ফেলে কোড সামুরাই ২০২৪ এ পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দল “কোয়ান্টাম গাইজ”। এই দলে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং মো. ফারহান মাসুদ সোহাগ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মুয়াম্মার তাজওয়ার আসফি।
বাংলাদেশ-জাপান জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি বিজেআইটি সহ বেশ কয়েকটি জাপানি আইটি কোম্পানির সহযোগিতায় ১০ থেকে ১১ মে দুদিনব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এই আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় হ্যাকাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
এই প্রতিযোগিতা তিনটি পর্বে সম্পন্ন হয়। ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম পর্বে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নেয় মোট ৪১৫ টি দল। এই পর্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় স্থান অর্জন করে। বাছাইকরা ৯৭টি দলের অংশগ্রহনে দ্বিতীয় পর্ব সম্পন্ন হয় যাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ নাম্বার অর্জন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইনাল পর্বে ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪৬টা দলের সাথে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘কোয়ান্টাম গাইজ’।
উক্ত প্রতিযোগিতায় প্রথম এবং অষ্টম স্থান অধিকার করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ এবং সপ্তম স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও নবম এবং দশম স্থান অধিকার করে যথাক্রমে গ্রিন ইউনিভার্সিটি এবং বুয়েট।
এই সাফল্যে দলের সদস্য মুয়াম্মার তাজওয়ার আসফি বলেন, এতো বড় মঞ্চে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উচ্চারিত হতে দেখে আমরা সত্যিই গর্বিত। এই সাফল্য আমাদের আরও বেশি পরিশ্রম করার এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পৌঁছে দেয়ার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে।
দলের আরেক সদস্য মো. ফারহান মাসুদ সোহাগ তার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে বলেন, এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করিনি। বরং দলবদ্ধ হয়ে কাজ করার গুরুত্বও বুঝতে পেরেছি। প্রতিটি সদস্য একে অপরকে সমর্থন করেছে এবং ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের পেশাগত জীবনেও অমূল্য হবে বলে বিশ্বাস করি।
সদস্য জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, কোড সামুরাই প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে আমরা অসাধারণ কিছু করব। সেই বিশ্বাসকে পাথেয় করে আমরা প্রতিটি রাউন্ডে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে লড়াই করেছি। আজ আমাদের সেই পরিশ্রম ও পরিকল্পনা সফল হয়েছে দেখে খুবই ভালো লাগছে। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন বড় একটি প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সত্যিই কঠিন। আমাদের এই সাফল্যের পেছনে দলের বাকি দুই সদস্যের অবদান অনস্বীকার্য। সকলের মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই আমরা এই অর্জন করতে পেরেছি। বিশেষ ধন্যবাদ জানাই আমাদের সিএসই বিভাগের শিক্ষকমণ্ডলী এবং সিনিয়র-জুনিয়র সহপাঠীদের প্রতি। প্রতিটি রাউন্ডে তাদের অগাধ ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজীব সাহা এই অসাধারণ সাফল্যে আনন্দিত। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের এই অসাধারণ সাফল্যে গর্ব না করে পারছি না। এই অর্জন জাতীয় পর্যায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বাড়িয়েছে। এটা শুধু একটি প্রতিযোগিতার জয় নয়, এটি আমাদের শিক্ষাপদ্ধতির সফলতাও বটে। আমরা শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্র্যাকটিকাল দক্ষতা অর্জনেও গুরুত্ব দিই। এই কৃতিত্ব সেই চেষ্টারই প্রতিফলন।
এই সাফল্য অন্য শিক্ষার্থীদেরও গবেষণা ও উদ্ভাবনী চিন্তায় উৎসাহিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আশা করি, আগামীতে আরও বেশি শিক্ষার্থী এসকল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।
এ নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য বলেন, আমি ‘কোয়ান্টাম গাইজ’ দলের অসাধারণ সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাতে চাই। তারা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় হ্যাকাথন কোড সামুরাইয়ে পঞ্চম স্থান অর্জন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। তাদের কঠোর পরিশ্রম, দক্ষতা এবং নিষ্ঠা প্রশংসনীয়। এই সাফল্য শুধুমাত্র ‘কোয়ান্টাম গাইজ’ দলের জন্যই নয়, বরং আমাদের বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও গর্বের। এটি প্রমাণ করে যে আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞান এবং দক্ষতা ব্যবহার করে বাস্তব জগতের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম।
তিনি আরও বলেন, আমি আশা করি এই সাফল্য অন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে এবং তারাও গবেষণা ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সর্বোত্তম শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের ভবিষ্যতের সাফল্যে সহায়তা করব।
এই প্রতিযোগিতার এবারের মোটো ছিলো ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটালাইজ করা। এর জন্য প্রতিযোগিদের বিভিন্ন ডিজিটাল সিস্টেম বানাতে বলা হয় যাতে বসতবাড়ি এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে নিষ্কাশিত বর্জ্য দ্রুত এবং অল্প খরচে ল্যান্ডফিল এ স্থানান্তরিত করা যায়। এছাড়াও একটি মোবাইল অ্যাপ বানাতে বলা হয় যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সহজে অভিযোগ জানাতে পারবে মেয়রকে এবং এতে পরিচয় গোপন রাখারও সুযোগ থাকবে। সর্বোপরি এই প্রতিযোগিতার এবারের লক্ষ্য ছিলো ঢাকা শহরকে একটি স্বচ্ছ শহরে রুপান্তর করা এবং জনগণের মধ্যে স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো।
উল্লেখ্য যে, দুই দিন ব্যাপী আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন সনামধন্য ব্যাক্তিগণ। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, ঢাকাস্থ জাপানের রাস্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাইকার চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ মি. ইচিগুচি তমোহিদি এবং জেট্রো এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্ন্টেটিভ মি. ইয়ুজি আন্দো।
বিপি/কেজে