নোমান সাবিত: কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের টাইম স্কয়ার ও জ্যাকসন হাইটস এলাকায় পৃথক দুটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে এলাকা দু’টিতে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরলে অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটে। টাইম স্কোয়ারে বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। জ্যাকসন হাইটসের সমাবেশ থেকে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, বাংলা ব্লকেড ইউএসএ নামে একটি সংগঠন বৃহস্পতিবার বিকেলে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের টাইম স্কয়ারে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। সেখানে প্রায় দু’হাজারের বেশি মানুষ জড়ো হয়ে বাংলাদেশের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে সরকার বিরোধী নানা শ্লোগান দেওয়া শুরু করেন। সময় টিভির সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকী সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও করতে গেলে তার ওপর হামলা চালালে বিক্ষোভকারীদের হাতে সে আহত হয়। তবে বিক্ষোভকারীর দাবি করছেন সাকী আয়োজকেদের বিএনপি জামাতেরকর্মী বলে উল্লেখ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন আয়োজকরা। এক পর্যায়ে তাকে উদ্দেশ্য করে ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকার করলে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সাকী দ্রুত পুলিশের কাছে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ তাকে সস্ত্রীক গাড়িতে করে নিয়ে তিন ব্লক দূরে তার পার্কিং করা গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।।
সাংবাদিকের ওপর কেন হামলা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে অন্যতম আয়োজক আব্দুল্লাহ তামজিদ জানান, সময় টিভির সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকী আয়োজকদের কারো সাথে কোন কথা না বলেই ভিডিও করতে শুরু করেন। সবাইকে ঢালাও ভাবে বিএনপি-জামাতকর্মী বলে উল্লেখ করেন। ফলে অনেকেই উত্তেজিত হয়ে তাকে ভুয়া ভুয়া বলে ধাওয়া করলে সে পালিয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে আশ্রয় নেয়।
এ ব্যাপারে আহত সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যেহেতু বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় ইন্টারনেটের নেই। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও লাইভ করার কোন পরিস্থিতি সেখানে ছিল না। লাইভ করতে হলে একজন ক্যামেরাম্যান অথবা ট্রাইপড লাগে। আমার ট্রাইপড গাড়িতেই ছিল। সেটা নামানো হয়নি। তাদের কাউকেই আমি বিএনপি-জামাতকর্মী বলে উল্লেখ করি নাই। আমি কোটা সংস্কারের পক্ষে, তাই আমার স্ত্রীও সেখানে গিয়েছিল। আমার ওপর হামলা করে ওরা এখন নাঅরা কল্প-কাহিনী বানাচ্ছে।
এদিকে সন্ধায় নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে নাগরিক সমাজের আহবানে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ চলাকালে একই স্থানে আওয়ামীলীগের মিছিল প্রবেশ করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উভয়ের উত্তেজনা ঠেকাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে। এ সময় পুলিশ একজন মহিলাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান। তার সঠিক পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
এসব সমাবেশ থেকে সবধরনের সহিংসতার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানান বক্তারা। তারা ছাত্রহত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টার এমরি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা শার্লট, কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব অ্যালাবামা বার্মিংহাম, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব আইওয়াসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এসব কর্মসূচি পালন অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জনবহুল ও বাংলাদেশি অধুষ্যিত নিউ জার্সি, পেনসিলভানিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া, ম্যাসাচুসেটস, কানেকটিকাট, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ওহাইও, ইলিনয়স, কলারাডো, ডেলাওয়ার, জর্জিয়া, কানসাস, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগান, সাউথ ক্যারোলিনা, ওয়াশিংটন ও কেন্টাকি’র বিভিন্ন স্থানে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার নিউ ইয়র্কের কনস্যুলেট কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সচেতন নাগরিক সমাজ।
বিপি।এসএম