বাংলাপ্রেস ডেস্ক: আওয়ামী লীগকে ক্ষমা প্রসঙ্গে বিএনপির সঙ্গে বাগযুদ্ধের পর অবস্থান স্পষ্ট করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে শেখ হাসিনার সরকার যে গণহত্যা করেছে, তাতে জড়িতদের ক্ষমার অধিকার কারও নেই। প্রতিশোধ না নেওয়ার মানে, আইন হাতে তুলে নেব না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অপরাধ যে করেছে, তার বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং শাস্তিও পেতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতের মজলিসে শুরার বৈঠকে এসব কথা বলেন শফিকুর রহমান। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর ধরপাকড়ে ২০১১ সালের পর সর্বোচ্চ এই নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক করতে পারেনি জামায়াত।
আজ বৈঠক থেকে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হলেও জামায়াত হিংসার ও প্রতিশোধের রাজনীতির অবসানে নির্যাতনকারীদের ক্ষমা করে দিচ্ছে। তবে ভুক্তভোগী কেউ আইনের আশ্রয় নিলে সহায়তা করা হবে। পরে এ বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপি নেতারা।
মঙ্গলবারের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় মজলিসে শুরায় জামায়াত আমির বলেছেন, গণহত্যা ক্ষমা করার কারও অধিকার নেই। নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া, কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া, দফায় দফায় নির্যাতন, শেষ সময়ে এসে নিষিদ্ধ করার মতো যেসব জুলুম জামায়াতের ওপর হয়েছে, এর প্রতিশোধ নেব না।
শফিকুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা গদি টিকিয়ে রাখতে শত শত মানুষ হত্যা করেছে। যা সুস্পষ্ট গণহত্যা। আকাশ থেকেও গুলি চালানো হয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ করে লাশ গুম করেছে। ভ্যানের ওপর লাশের স্তূপ! তারপর ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন! সরকারের কাছে দাবি, এই গণহত্যা যারা করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে।
আর্থিক খাতে লুটপাট এবং বিদেশি অর্থ পাচারকারী ব্যবসায়ীদের বিচারের দাবি করে জামায়াত আমির বলেন, কিছু চতুর ধনী জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে, ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দেশের টাকা পাচার করেছে। এদের আইনের আওতায় এনে টাকা ফিরিয়ে আনতে হবে। কোনোভাবেই ক্ষমা করা যাবে না।
বিএনপির ওপর আওয়ামী লীগ শাসনামলের নির্যাতন প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, শুধু জামায়াত নয়, বিএনপি, হাজারো আলেম উলামার ওপর তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। যদিও জামায়াতের ওপর তাণ্ডব ছিল অনেক বেশি মাত্রায়। তৃণমূলের সমর্থকরা পর্যন্ত মামলা গ্রেপ্তারের শিকার হন। অসংখ্য মানুষকে গুম করা হয়েছে। ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে জামায়াত কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। জামায়াত নেতাকর্মীদের প্রত্যেকটা রাত প্রত্যেকটা দিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছিল। কোনো জায়গায় জামায়াতকে সামান্য স্পেস দেওয়া হয়নি। নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মানবতা বিরোধী অপরাধের সাজানো মামলায় হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী নেতাকর্মীদের প্রতি জামায়াত আমির বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত যারাই মামলা করবেন, কোনো মানুষের ওপর যেন বেইনসাফ না হয় দৃষ্টি রাখবেন। নিরপরাধ ব্যক্তিকে যেন আসামি করা না হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমর্থনে আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করে দণ্ডিত ৫৭ বাংলাদেশির সাজা মওকুফ করাতে পারায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শফিকুর রহমান।
জামায়াতের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা শাসন করবেন। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছে মজলিসে শুরা। আন্তর্জাতিক তদন্তের মাধ্যমে গণহত্যার বিচার, গত ১৫ বছরের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বিদেশ পাচার সম্পদ ফিরিয়ে আনা, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলামের মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।
শুরার সদস্যরা ছাড়াও জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও মাওলানা আ ন ম শামসুল, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিপি/টিআই