আবু সাবেত: আগামী মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আগের নির্বাচনের ন্যায় এবারও সাত অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের রায়ই নির্ভর করছে কমলা-ট্রাম্পের ভাগ্য। অবশ্য ইতিমধ্যে কিছু অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোট প্রদান শুরু হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে দ্বিদলীয় প্রাধান্য রয়ে গেছে। আলাদাভাবে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির ভোটব্যাংক রয়েছে বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্যে। মূলত কিছু দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য প্রার্থীদের জয়-পরাজয় ঠিক করে দেয়, যেগুলো ‘সুইং স্টেট’ বা ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে পরিচিত।
শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় এসব অঙ্গরাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুজনের পক্ষে প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে ট্রাম্প–সমর্থক ইলন মাস্কের মতো ধনকুবের। পছন্দের প্রার্থীর জন্য প্রচারণায় নেমেছেন তারকারাও। সর্বশেষ জরিপগুলোর তথ্যমতে, দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য কয়টা, কেন গুরুত্বপূর্ণ
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য সাতটি। এদের ‘সেভেন সিস্টার্স’ও বলা হয়। অঙ্গরাজ্যগুলো হলো অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন।
যেসব অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক রয়েছে, সেগুলোতে জয়-পরাজয় আগে থেকেই অনেকটা বোঝা যায়। ফলে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোই শেষ পর্যন্ত প্রার্থীর চূড়ান্ত জয়-পরাজয় নির্ধারক হয়ে ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটাররা যে প্রার্থীদের দিকে ঝোঁকেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট হন। এ জন্য আলাদা গুরুত্ব দিয়ে এসব অঙ্গরাজ্যে প্রচার চালিয়ে থাকেন প্রার্থীরা।
অ্যারিজোনা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ইলেকটোরাল ভোটে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়। পপুলার ভোটে প্রার্থীরা যে অঙ্গরাজ্যে জয় পান, দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সেই অঙ্গরাজ্যের সব কটি ইলেকটোরাল ভোট তিনি পান। মোট ইলেকটোরাল ভোটে এগিয়ে থাকা প্রার্থীই প্রেসিডেন্ট হন।
অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ১১টি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যে জয় পান ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে ২০২০ সালের নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে এই অঙ্গরাজ্যে জয় ছিনিয়ে নেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফলে এবারের নির্বাচনেও এই অঙ্গরাজ্যের ওপর সবার নজর থাকছে।
অ্যারিজোনার বাসিন্দাদের মধ্যে জাতিগত বৈচিত্র্য আছে। যদিও সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ, ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এই অঙ্গরাজ্যের ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ জনগোষ্ঠী হিসপানিক। এ ছাড়া রয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রো-আমেরিকান আর ৫ দশমিক ২ শতাংশ ভারতীয় ও আলাস্কা বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী। সাধারণত হিসপানিক ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ডেমোক্র্যাটরা জনপ্রিয়। তবে জরিপ অনুযায়ী, শেষে দিকে এসে তাঁদের সমর্থনও টানতে পারছেন ট্রাম্প।
জর্জিয়া
জর্জিয়ার ইলেকটোরাল ভোট ১৬টি। সাধারণত এই অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী জয় পেয়ে থাকেন। তবে ২০২০ সালে এখানে জয় পান বর্তমান ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এর আগে সর্বশেষ ১৯৯২ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে বিল ক্লিনটন এই অঙ্গরাজ্যে জয়ী হয়েছেন। বাইডেনের জয়ের ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়।
এই অঙ্গরাজ্যে নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এখনকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৩৩ দশমিক ২ শতাংশ) জনগোষ্ঠী কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রো-আমেরিকান। এ ছাড়া ১১ দশমিক ১ শতাংশ হিসপানিক আর ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এশীয় বংশোদ্ভূত।
মিশিগান
এই অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ১৫টি। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে এই অঙ্গরাজ্যে বেশির ভাগ সময় ডেমোক্র্যাটরা জয় পেয়েছেন। তবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যে জয় পান ট্রাম্প। সাম্প্রতিক জরিপে এই অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেওয়ায় এবারও অঙ্গরাজ্যটির হাতবদলের সম্ভাবনা রয়েছে।
এই অঙ্গরাজ্যের ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীই নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ। এর পরেই রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী, যা প্রায় ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। হিসপানিক জনসংখ্যা ৬ শতাংশের মতো। এ ছাড়া রয়েছেন আরব-আমেরিকান বাসিন্দা। গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে না পারায় ডেমোক্র্যাটরা আরব-আমেরিকান ভোট হারাতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
নেভাদা
সাতটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের মধ্যে নেভাদায় ইলেকটোরাল ভোট সবচেয়ে কম, মাত্র ছয়টি। এরপরও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যের গুরুত্ব কমে না। ২০২০ সালে বাইডেনের জয়ে টানা চারবারের মতো এই অঙ্গরাজ্য ডেমোক্র্যাটদের দখলে ছিল। তবে ২০১৬ সালের চেয়ে ব্যবধান কম ছিল।
এই অঙ্গরাজ্যের জনগোষ্ঠী বৈচিত্র্যময়। ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী, এখানকার ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ। হিসপানিক ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রো-আমেরিকান, ১১ শতাংশ। এশীয় জনগোষ্ঠী ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।
নর্থ ক্যারোলাইনা
এই অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ১৬টি। নর্থ ক্যারোলাইনা রিপাবলিকানদের পক্ষে থাকতে পারে বলে মত যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিশ্লেষকদের। প্রেসিডেন্ট পদে হারলেও ২০২০ সালে ১ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটে এই অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছিলেন ট্রাম্প।
নর্থ ক্যারোলাইনার ৬১ শতাংশ জনগোষ্ঠীই নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ। তবে এই অঙ্গরাজ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কৃষ্ণাঙ্গ বাসিন্দাও রয়েছেন, ২২ দশমিক ১ শতাংশ। আর নন-হিসপানিক বাসিন্দা ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।
পেনসিলভানিয়া
এই অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ১৯টি, যা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে উভয় প্রার্থীর বিশেষ নজর এই অঙ্গরাজ্যের প্রতি। ২০১৬ সালে পেনসিলভানিয়ায় জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। তবে ২০২০ সালে ১ দশমিক ২ শতাংশ ব্যবধানে এই রাজ্যে জয় ছিনিয়ে নেন বাইডেন।
পেনসিলভানিয়ার ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ। কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রো-আমেরিকান জনগোষ্ঠী ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। আর হিসপানিক জনগোষ্ঠী রয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশের মতো।
উইসকনসিন
এই অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ১০টি। একসময় এ অঙ্গরাজ্যটিকে ডেমোক্র্যাট ভোটব্যাংক মনে করা হতো। তবে ২০১৬ সালে জয় ছিনিয়ে নিয়ে উইসকনসিনকে দোদুল্যমান রাজ্যের কাতারে নিয়ে আসেন ট্রাম্প।
উইসকনসিনের ৭৯ দশমিক ৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ। এর পরে রয়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ হিসপানিক জনগোষ্ঠী। কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রো-আমেরিকান ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
—
পরাজিত হলে এবারও ট্রাম্পের বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা
নির্বাচনে হেরে গেলে এবারও বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার ভোটের ফল বদলে দেওয়ার জন্য তিনি ও তাঁর মিত্ররা এবার আরও বিধ্বংসী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, এই অভিযোগ তোলার জন্য বেশ কিছু গ্রুপ কাজ করবে।
২০২০ সালের নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের ভবনে হামলা চালিয়েছিলেন ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম কালো দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয় ২০২১ সালের সেই ৬ জানুয়ারিকে। কারণ ওই দিন জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে যৌথ অধিবেশনের সভা বসেছিল। সেখানে ট্রাম্পের নির্দেশে হামলা হয়েছিল।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ভোটের আর তিন দিন বাকি রয়েছে। এরই মধ্যে সেই পথে আগাচ্ছেন ট্রাম্প। ইতিমধ্যেই তিনি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন।
২০২০ সালের ভোটের পর ২০২১ জানুয়ারির ঘটনা যাতে না ঘটে এ জন্য বেশ কিছু আইনও করা হয়েছে। তবে এই আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করেছেন ট্রাম্পের সহযোগীরা। এই আইন অনুসারে, ভোট গণনার পর অঙ্গরাজ্যগুলোকে তাদের চূড়ান্ত ফল ওয়াশিংটনে পাঠাতে হবে। প্রেসিডেন্টের জয় নিশ্চিত করার জন্য যে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির ভোট হয় সেই ভোটের আগেই তা পাঠাতে হবে। যদি কোনো অঙ্গরাজ্য ফল পাঠাতে না পারে সেই ক্ষেত্রে কী হবে সেটা জানানো হয়নি। আর এটা নিয়েই ফন্দি আটছেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। স্থানীয়ভাবে যাতে কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা না করা হয় সেই উদ্যোগ নেবেন তারা। প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ট্রাম্পের সমর্থকেরা এমনভাবে বাধা সৃষ্টি করবেন যাতে অঙ্গরাজ্যগুলো চূড়ান্ত ফলাফল পাঠাতে না পারে।
২০২০ সালের ভোটের পর নির্বাচন নিয়ে রিপাবলিকানপন্থী গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছিল। ভোটিং মেশিনে জালিয়াতির অভিযোগও তোলা হয়েছিল সেই সময়। এবারও তা শুরু হয়েছে এক্সে (সাবেক টুইটার) এসব ছড়ানো হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইলন মাস্ক নিজে এই তথ্য ছড়াচ্ছেন যে, ট্রাম্প এবার জিতে যাচ্ছেন। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মিথ্যা জরিপের ভিত্তিতে এসব প্রচার করছেন মাস্ক।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কাজ করা অদলীয় প্রতিষ্ঠান সেন্টার ইলেকশন ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেকার বলেন, ট্রাম্পের মিত্ররা ব্যাপক পরিমাণে অর্থ ব্যয় করছেন এটা প্রচারের জন্য যে তাঁর বিজয় অনিবার্য। এই প্রচার ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের প্রত্যাশা সৃষ্টি করছে।
আগেভাগে ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণা
নির্বাচনের পর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য কয়েক ধাপে কাজ করার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। এ নিয়ে সরাসরি কথা বলেছেন ট্রাম্পের সাবেক সহযোগী সদ্য জেল থেকে মুক্তি পাওয়া স্টিফেন কেভিন বেনন। তিনি বলেছেন, ভোটগ্রহণের পর রাতেই ট্রাম্পের উচিত হবে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করা।
ট্রাম্পকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, তার শুধু বলা উচিত এই নির্বাচনে আমি জিতেছি। আমাদের একটি দল আছে। তারা যাবে এবং ভোট গণনা কেন্দ্রে এটা নিশ্চিত করবে যে ভোটে কারচুপি হচ্ছে না।
নতুন আইন অনুসারে, অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণেতারা এবারের নির্বাচনে ভোট গণনা পরিবর্তী প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন না। শুধু রাজ্যের গভর্নর এবং অন্য নির্বাহীরা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাবেন, কে জিতেছে এবং রাজ্যের পক্ষ থেকে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট দিতে কে যাবেন। কিন্তু ট্রাম্পের সমর্থকেরা ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজ্যের আইনপ্রণেতারাই এই কাজ করবেন।
২০২০ সালে ফল বদলে দেওয়ার যারা চেষ্টা করেছিলেন তাদের একজন ট্রাম্পের সহযোগী জন ইস্টম্যান। নতুন আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই আইন অসাংবিধানিক।
সন্দেহ প্রকাশ
ভোট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্পের সমর্থকেরা। নিউইয়র্ক টাইমসে খবরে বলা হয়েছে, প্রতিটি নির্বাচনে প্রযুক্তিগত এবং কর্মীদের ভুল হয়। এসব ঘটনাকে ভুলভাবে উপস্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ট্রাম্প। ইতি মধ্যেই তিনি এ নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন।
২০২০ সালের নির্বাচনের সময় শুধু ট্রাম্প ও তাঁর একনিষ্ঠ সমর্থকেরা নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে আওয়াজ তুলেছিল। রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হয়নি। তবে এবার দল, দলের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থকেরাও এ নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। তারা বলছেন, একমাত্র কারচুপি করেই ট্রাম্পকে হারানো সম্ভব। পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও এ নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা শুরু করেছেন।
পদে পদে বাধা
২০২০ সালের ভোটের পর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যখন বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হবে তখন হামলা চালিয়েছিলেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। এবার পদ পদে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। অঙ্গরাজ্যের যেসব কেন্দ্রে ভোট গণনা হবে সেখানে থেকেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ট্রাম্পের প্রচারের শিবির বক্তব্য জানতে চাইলেও সাড়া পায়নি নিউইয়র্ক টাইমস। তবে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, ফল যাই হোক তিনি মেনে নেবেন। এদিকে ট্রাম্পের এমন বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে বেশকিছু পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
আমরা পরাজিত হবো না: ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকি। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। দুই প্রার্থীই তাদের চূড়ান্ত নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন।
রোববার (৩ নভেম্বর) বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর ক্যারোলিনায় তার চূড়ান্ত নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। সেখানে প্রায় ৯০ মিনিট ধরে ভাষণ দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, আমরা পরাজিত হবো না।
সমর্থকদের উদ্দেশে রিপাবলিকান প্রার্থী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন অধিকৃত দেশ কিন্তু শিগগিরই তা আর থাকবে না। ৫ নভেম্বর নির্বাচন হবে আমেরিকার মুক্তির দিন। আমেরিকা মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
এ ছাড়া সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমি কঠোর পরিশ্রম করছি কারণ আমাদের জিততে হবে।
এদিকে পরাজিত হলে এবারও ঝামেলা করতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছে তার প্রতিপক্ষ শিবির। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল এখনো মেনে নেননি ট্রাম্প। পাশাপাশি ট্রাম্প সমর্থকদের একটি বড় অংশ এখনো বিশ্বাস করে, সেই নির্বাচনের ফল চুরি করে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, একইরকম ‘চুরি’ যেন এবার না হতে পারে, তা নিয়ে বদ্ধপরিকর রিপাবলিকান শিবির। ‘চুরি’ হলে, অর্থাৎ ট্রাম্প নির্বাচনে হারলে কীভাবে ফলাফল পাল্টাতে হবে, সেই পরিকল্পনাও করে রেখেছে ট্রাম্পের ‘চুরি থামাও’ আন্দোলন।
এমন আশঙ্কার প্রেক্ষিতে কমলা হ্যারিস এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে ভোটারদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাতিল করে দিতে পারেন।
ভোটারদের ১০ লাখ ডলার পুরস্কারের মামলায় মাস্কের আবেদন খারিজ
ভোটারদের ১০ লাখ ডলার উপহার দেওয়াকে কেন্দ্র করে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে করা মামলা ফেডারেল কোর্টে নেওয়ার আবেদন খারিজ হয়েছে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) এক মার্কিন বিচারক এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ফলে অঙ্গরাজ্যের আদালতেই মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
অবশ্য মার্কিন ধনকুবের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তার আর্থিক উপহার দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে পারবেন কিনা, তা এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয় যায়নি। ফিলাডেলফিয়ার আদালতের বিচারক জেরাল্ড পাপ্পেরট এই রায় দিয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার মামলার শুনানির জন্য তলব করা হয়েছিল টেসলা ও স্পেস এক্সের মালিককে। পেনসিলভিনিয়ার ওই শুনানিতে বিচারক অ্যানজেলো ফজলিয়েট্টা বলেছেন, মামলাটি গ্রহণ করা হবে কিনা তা যাচাই করছে ফেডারেল কোর্ট। তাই প্রাথমিকভাবে শুনানি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণার জন্য উদারহস্তে ডলার খরচ করছেন মার্কিন ধনকুবের। সেই কার্যকলাপের একটা অংশ ছিল ১০ লাখ ডলারের লটারি ঘোষণা। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সাত অঙ্গরাজ্যের (সুইং স্টেট) ভোটারদের মধ্য থেকে নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিদিন একজনকে এই অর্থ প্রদান করার আয়োজন করেন তিনি। লটারিতে অংশগ্রহণের শর্ত ছিল দুটি- নিবন্ধিত ভোটার হতে হবে এবং বাকস্বাধীনতা ও বন্দুক বহন আইনের সমর্থনে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করতে হবে।
মাস্কের এই অর্থ উপহার উদ্যোগ বন্ধের চেষ্টা করছেন ফিলাডেলফিয়া ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ল্যারি ক্রেসনার। তিনি অভিযোগ করেছেন, চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য এই আয়োজন করেছেন টেসলা ও স্পেস এক্সের মালিক।
আসন্ন নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রধান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে সাতটি সুইং স্টেটের। ফলে মাস্কের লটারি ওভাল অফিসের নেতা নির্বাচনে যথেষ্ট প্রভাব রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিপি।এসএম