নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সেই বিপ্লবের সঙ্গে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক ধরনের মিল রয়েছে। ৭ নভেম্বরে আমরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। আর ২০২৪ সালের স্বৈরাচার উৎখাতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। একই চেতনা বুকে ধারণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন নিউ ইংল্যান্ড (বোস্টন) বিএনপির নেতারা। একই সঙ্গে তারা প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা জোরদার করারও দাবি জানান। স্থানীয় সময় রোববার (১০ নভেম্বর) ক্যামব্রিজের দারুল কাবাব রেস্তোরাঁয় আয়োজিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় নিউ ইংল্যান্ড (বোস্টন) বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেন।
নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির সভাপতি সৈয়দ বদরে আলম সাইফুলের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র সহ-সাধারন সম্পাদক আশরাফুল আলম টিটূর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির প্রধান উপদেষ্টা কাজী নুরুজ্জামান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বার্বেডোজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক শিক্ষাবিদ ড. জামাল খান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেন সাধারন সম্পাদক আলী হায়দার মনসুর।
সভায় প্রধান অতিথি কাজী নুরুজ্জামান বলেন, ২০২৪ সালের স্বৈরাচার উৎখাতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ছাত্ররা যে ভুমিকা পালন করেছে, তাদের যথাযথ সম্মান জানাতে হবে। আন্দোলনে নিহতের জন্য উপোযুক্ত ক্ষতিপুরণ এবং আহতদের দ্রুত বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে পালাতে দেওয়া ঠিক হয়নি। দ্রুত শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার স্বতস্ফুর্ত বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। এই বিপ্লবে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানকে সমর্থন করে সামরিক বাহিনী ও সাধারণ মানুষ পথে নেমে এসেছিল। জাতি পেয়েছিল এক যোগ্য নেতৃত্ব জিয়াউর রহমানকে, যিনি ’৭১ এ জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির সভাপতি সৈয়দ বদরে আলম সাইফুল বলেন, শহীদ জিয়া শুধু একটি নাম নয়, প্রতিষথান। যাঁর নাম বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জড়িয়ে আছে। তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে দেশের মানুষকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করেছেন। জিয়াউর রহমান ’৭১ এ জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সফল রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উন্মেষ ঘটিয়ে জাতিকে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির মহাসড়কে উঠিয়েছিলেন। আর সেজন্যই আমাদের জাতীয় জীবনে এই বিপ্লবের গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে আমরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। সেই একই চেতনা বুকে ধারণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন সাইফুল।
নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ও সিনিয়র সহ-সভাপতি সোহরাব এইচ খান বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান রণাঙ্গনে জীবন বাজি রেখে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। যার দেয়া নেতৃত্বে আমাদের বড় অর্জন মহান স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই আমাদের প্রিয় নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
তিনি আরও বলেন,আমাদের দেশপ্রেমিক সামরিকবাহিনী বারবার দেশকে বিদেশী আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছে। ৫ আগস্ট দেশের ছাত্র-জনতা অনেক তাজা প্রাণ ও রক্তের বিনিময় দেশকে সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত করেছে এবং দেশের সামরিকবাহিনী ছাত্র-জনতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা এমনি এক সময় ৭ নভেম্বর পালন করতে যাচ্ছি যখন জাতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ অতিথি সাবেক অধ্যাপক শিক্ষাবিদ ড. জামাল খান বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সরকার দলীয় লোকরা সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন এ কথা সকলেই এখন জানেন। এছাড়াও হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বাম দলীয় নেতারাও। তিনি বলেন ভাবতেও অবাক লাগে রাশেদ খান মেনন ২৫ হাজার কোটি টাকার মালিক। চুরির প্রবণতা বন্ধ না হলে সরকারে যেই আসুক না কেন দেশের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে। প্রধান উপদেষ্টার জীবনের নিরাপত্তা জোরদার করার অন্য তিনি জোর দাবি জানান।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি আবুল বশর, সাধারন সম্পাদক আলী হায়দার মনসুর, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজ্জাক হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম কাজল, ফলরিভার বিএনপির সভাপতি রাহেদুল আলম, ফারদিন ও শিশু বক্তা মাস্টার জারিফ প্রমুখ। স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বিপি।এসএম