তৌফিক ইসলাম: আজকের যুগে, প্রযুক্তির অগ্রগতি এক মুহূর্তের জন্য থেমে নেই। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে মানুষের জীবনধারা, শিল্প, ও ব্যবসার প্রতি। এটি এমন এক শক্তি যা আমাদের কাজের পদ্ধতিকে পরিবর্তন করে, সাধারণ নিয়মগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে এবং একটি নতুন প্রযুক্তিগত যুগের সূচনা করছে। তবে, এর একটি বড় প্রশ্ন উঠছে: এভাবে কি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের পরিধি সংকুচিত হয়ে যাবে?
এআইএবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের সম্পর্ক
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা প্রাথমিকভাবে AI তৈরি করার জন্য কোড লেখেন, মডেল ডেভেলপ করেন এবং সিস্টেম ডিজাইন করেন। তবে, AI প্রযুক্তির উন্নতিতে এই ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের অনেক অংশ এখন অটোমেটেড হয়ে যাচ্ছে। যেমন:
কোড জেনারেশন: AI কোড লেখার প্রক্রিয়া দ্রুত এবং স্বয়ংক্রিয় করেছে, যেমন GPT-3 এবং অন্যান্য মডেলগুলি। এর ফলে কিছু প্রাথমিক কোডিং বা বেসিক টাস্কের জন্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের সময় কমে যাচ্ছে।
ডিবাগিং এবং টেস্টিং: AI-এর সাহায্যে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা খুব দ্রুত কোডের বাগ খুঁজে পেতে পারেন এবং সেগুলি মেরামত করতে পারেন। এতে তাদের কাজের গতি বৃদ্ধি পায়।
ডেটা অ্যানালাইসিস এবং মডেল ট্রেনিং: AI মডেলগুলির প্রশিক্ষণ, ডেটা প্রক্রিয়াকরণ, এবং বিশ্লেষণ এখন ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলেও, এসব কাজের অনেকটাই AI স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করছে।
কিন্তু, কি সত্যিই কমছে ইঞ্জিনিয়ারদের “মরম”?
এটি অবশ্যই সত্য নয় যে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে। বরং, AI তাদের কাজের পরিসর আরও বিস্তৃত করেছে। AI যে কাজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারছে, সেগুলি মূলত রুটিন এবং স্বাভাবিক কাজ। তবে, প্রকৃত সমস্যাগুলোর সমাধান এবং নতুন সিস্টেম ডিজাইন করার জন্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা এখনও অপরিহার্য।
এছাড়া, AI সিস্টেমগুলো তৈরি, মেন্টেনেন্স, এবং ইন্টিগ্রেশন করার জন্য বিশেষজ্ঞ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন রয়েছে। নতুন নতুন ব্যবহারকারীর চাহিদা এবং ইন্ডাস্ট্রি নির্ভর চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান করতে দক্ষ পেশাদারদের ভূমিকা আরও বাড়বে।
এআইএর সুযোগে ইঞ্জিনিয়ারদের নতুন দক্ষতা অর্জন
এখনকার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য AI শেখা এবং নতুন প্রযুক্তির সাথে নিজেদের আপডেট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। AI এবং মেশিন লার্নিং এর দক্ষতা অর্জন তাদেরকে ভবিষ্যত প্রযুক্তির সাথেও খাপ খাইয়ে চলতে সহায়তা করবে। এছাড়াও, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা এখন নানা নতুন ডোমেইন, যেমন স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং, বায়ো মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, বা সাইবার সিকিউরিটি এ কাজ করতে পারছেন, যেখানে AI একটি বড় ভূমিকা পালন করছে।
এক কথায়, AI এর ফলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের “মরম” কমছে না, বরং নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। AI যদি একটি অংশের কাজকে সহজ বা স্বয়ংক্রিয় করে, তবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এখন আরও গভীর, সৃজনশীল এবং কৌশলগত হয়ে উঠছে। প্রযুক্তি যতই অগ্রসর হবে, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ততই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।
বিপি/টিআই