Home কলাম আইনের উচিত সহিংস প্রতিবাদকারীদের মুখোশ খুলে দেওয়া

আইনের উচিত সহিংস প্রতিবাদকারীদের মুখোশ খুলে দেওয়া

by bnbanglapress
Published: Updated:
A+A-
Reset

ছাবেদ সাথী
গত সপ্তাহে গাজায় মুখোশ পরা একদল সন্ত্রাসী কয়েকজন বন্দি মহিলাকে একটি জনসমক্ষে প্রদর্শন করেছে। এই মাসের শুরুতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখোশ পরা একটি দল শ্রেণিকক্ষে চিৎকার ও ড্রাম বাজিয়ে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।
মুখোশ আন্দোলনকারীদের সাহস যোগায়। যুক্তরাষ্ট্রে এগুলো নির্মমতা ও ভীতিপ্রদর্শনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। যেসব জনসমাবেশ বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, শারীরিক ভীতি প্রদর্শন, সম্পত্তি ধ্বংস এবং সহিংসতার আহ্বানে পরিণত হয়েছে তাদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো-প্রতিবাদকারীরা মুখোশ পরা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবাদকারীরা তাদের প্রথম সংশোধনী অধিকার চর্চা করছে, অর্থাৎ তারা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী মতপ্রকাশ করছে। কিন্তু একই সঙ্গে প্রচারণা চালানো এবং নিজের পরিচয় গোপন করা পরস্পরবিরোধী।
প্রচার বা অ্যাডভোকেসি মানে হলো কোনো জনগোষ্ঠীর পক্ষে কোনো মতাদর্শ সমর্থন করা। তাহলে কেউ যদি নিজের পরিচয়ই আড়াল করে, তবে কীভাবে সে অন্যদের প্রতিনিধিত্ব করছে? আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো যদি কোনো বক্তব্য সরাসরি ও ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠে তাহলে সেটিকে কীভাবে মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার বলা যায়?
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।যার মধ্যে মানহানিকর বক্তব্য, হুমকি, হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন এবং অন্যান্য বেআইনি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত। গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে এই সমস্ত সীমা বারবার লঙ্ঘন করা হয়েছে। তখন প্রতিবাদকারীরা তাদের মুখ ঢেকে রেখেছে।
প্রতিবাদের ভিডিওগুলোই প্রমাণ দেয় সবচেয়ে উচ্চস্বরে স্লোগান দেওয়া ও ঘৃণাত্মক ভাষা ব্যবহারের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুখোশ পরা ব্যক্তিদের কাছ থেকে আসে। আমাদের অবশ্যই এই বেনামি, বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা ও দায়িত্বহীনতার চক্র ভাঙতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম অ্যান্টি-মাস্ক আইন ১৮৪৫ সালে নিউইয়র্কে পাস হয়, যখন মুখোশ পরা জমিদার ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সশস্ত্র বিদ্রোহের দিকে গড়ায়। ২০১৩ সালে, কানাডা এমন একটি আইন পাস করে যা দাঙ্গার সময় মুখোশ পরাকে নিষিদ্ধ করে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যুক্তরাজ্য একটি আইন পাস করে যা বিক্ষোভকারীদের মুখোশ পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
মহামারির আগে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অঙ্গরাজ্যে মুখোশ পরার জন্য শাস্তিমূলক আইন ছিল। বেশিরভাগ অ্যান্টি-মাস্ক আইন কু ক্লাক্স ক্লান (কেকেকে) মিছিল প্রতিহত করার জন্য প্রণীত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ ওহাইও রাজ্যে ১৯৫৩ সালের ‘অ্যান্টি-ডিসগাইজ’ আইনটি কেকেকে-এর বিক্ষোভ রোধে তৈরি করা হয়েছিল, যা এখন মুখোশ পরা প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনতে ব্যবহৃত হতে পারে।
কানাডা ও যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভ বা দাঙ্গার সময় মুখোশ পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্টি-মাস্ক আইন রাজ্যভেদে ভিন্ন, তবে বেশ কিছু রাজ্যে কোনো ব্যক্তিকে ভীতি প্রদর্শন বা হয়রানি করার উদ্দেশ্যে মুখোশ পরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তবে কিছু ক্ষেত্রে মুখোশ পরার যৌক্তিকতা রয়েছে, যেমন নিরাপত্তার স্বার্থে—যেমন সাংবাদিকরা যখন সংবেদনশীল সংবাদ কভার করেন বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের সুরক্ষার জন্য। ইতিহাসে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা ব্যক্তিরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মুখোশ ব্যবহার করেছেন, যা ন্যায়সঙ্গত।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করে, তাদের জন্য এই নীতি প্রযোজ্য নয়। অনেকে ‘শান্তিপূর্ণ’ প্রতিবাদের পক্ষে সমর্থন জানালেও, গত এক বছরে বহু বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণতার বাইরে চলে গেছে।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করে যে তারা “ডক্সিং”-এর ভয়ে মুখোশ পরে, অর্থাৎ তাদের পরিচয় ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু প্রতিবাদ কি ব্যক্তির মতাদর্শের প্রকাশ নয়? কেউ যদি নিজের বিশ্বাসের পক্ষে দাঁড়ায়, তবে কি তার দায়িত্ব নেওয়া উচিত নয়?
আসুন মতপ্রকাশের শক্তিকে সম্মান করি এবং হুমকির শক্তিকে মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে না রাখি।

ছাবেদ সাথী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি, লেখক ও সাংবাদিক। সম্পাদক-বাংলা প্রেস

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী