Home বাংলাদেশ ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে যোগ দিয়ে হতাশ বিএনপি নেতারা

ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে যোগ দিয়ে হতাশ বিএনপি নেতারা

by bnbanglapress
Published: Updated:
A+A-
Reset

 

আবু সাবেত: ধর্মীয় বৈষম্য থেকে খ্রিস্টান ধর্মাবলীদের সুরক্ষিত করার জন্য একটি টাস্ক ফোর্সসহ প্রেসিডেন্টিয়াল কমিশন গঠন করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে ভার্চুয়াল বক্তব্য দিয়ে তিনি এ ঘোষণা করেন। ট্রাম্প ধর্মীয় স্বাধীনতা ও বিশেষ করে খ্রিস্টানদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে মোকাবেলার জন্য যে বহু পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করেছেন তা উপস্থাপন করেন। ভার্চুয়াল বক্তব্য প্রধানকালে কংগ্রেসের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আগামী বছর এ অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরি যোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে যোগ দিতে অংশ নিয়েছেন। তাদের মুল উদ্দেশ্য ছিলে এ ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে যোগ দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। কিন্তু সে তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। কারণ
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল বক্তব্য দিয়েছেন।
যূক্তরাষ্ট্র বিএনপির একটি সুত্র জানিয়েছে, রাজনীতির শুরুতেই তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে প্রতারণার মুখ পড়তে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলে তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টের অনুষ্ঠানে আনা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন,আমি যখন হোয়াইট হাউসে থাকব তখন আমরা আমাদের স্কুল, মিলিটারী, সরকার, কর্মস্থল, হাসপাতাল এবং আমাদের জনসমাগম স্থানে খ্রিস্টানদের সুরক্ষা দেব। আমরা আমাদের দেশকে ঈশ্বরের অধীনে একটি জাতি হিসেবে পুনরায় একত্রিত করব।
ট্রাম্প বলেন যে তিনি একটি প্রেসিডেন্টিয়াল কমিশন গঠন করবেন যা ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রটি রক্ষা করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করবে।
প্রেসিডেন্ট আরও বলেন যে, তিনি একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডার স্বাক্ষর করবেন যাতে এটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডিকে একটি টাস্ক ফোর্সের প্রধান করা হবে যার লক্ষ্য হবে ‘খ্রিস্টবিরোধী পক্ষপাত দূর করা’। উক্ত টাস্ক ফোর্সের উদ্দেশ্য হবে ফেডারেল সরকারের মধ্যে খ্রিস্টবিরোধী লক্ষ্য নির্ধারণ এবং বৈষম্যের সব রূপ থামানো।
তিনি আরও বললেন, তিনি হোয়াইট হাউসে একটি ‘ফেইথ অফিস গঠন করবেন। যার নেতৃত্ব দেবেন রেভ পোলা হোয়াইট। তিনি বহু বছর ধরে ট্রাম্পের ধর্মীয় পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন। বছরের পর বছর ধরে ট্রাম্প তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগ ও খ্রিস্টানদের প্রতি নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। রিপাবলিকানরা বাইডেনের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে নিন্দা করে বলেছেন, যেসব বিরোধী গর্ভপাত আন্দোলনকারীরা গর্ভপাত ক্লিনিকের প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করছিলেন তাদের নিয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট গত মাসে সেই মামলায় দু’ডজনের কাছাকাছি ব্যক্তি যাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল তাদের মাফ করে দিয়েছিলেন।
২০২৩ সালে জিওপি আইননির্ধারকরা এফবিআই এজেন্টের লিখিত একটি মেমোকে কাজে লাগিয়েছিলেন, যেখানে শ্বেতপন্থী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ও ‘র‍্যাডিকাল-ট্রেডিশনালিস্ট ক্যাথলিকস’ এর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ওভারল্যাপের বিবরণ ছিল, যাকে চার্চের মধ্যে একটি ছোট সংখ্যালঘু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তখনকার এফবিআই ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার রে সেই মেমো মুছে ফেলার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন এটি এজেন্সির ধর্মীয় সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে তদন্ত পরিচালনার নীতিমালার লঙ্ঘন করেছে।
বাইডেন প্রশাসন স্বতন্ত্র উদ্যোগ শুরু করেছে, যাতে এই মাসে ইস্রায়েলের উপর ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের প্রেক্ষিতে এন্টিসেমিটিজম ও ইসলামোফোবিক ঘটনার বন্যা প্রতিরোধ করা যায়।


এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম বিষয়ক সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট রবার্ট এ ডেস্ট্রোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৈঠকে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান।
বিএনপির ফেইসবুক পেইজে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রবার্ট এ ডেস্ট্রো ট্রাম্প প্রশাসনের ট্রানজিশন টিমের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি একজন আইনজীবী, মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার আইন নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার কমিশনের একজন কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন রবার্ট এ ডেস্ট্রো। নির্বাচন, কর্মসংস্থান এবং সংবিধান আইন বিষয়ে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচিত। ১৯৫৩ সালে আব্রাহাম ভারিডি ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট সূচনা করেন।
ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে যোগ দিতে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল এখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন।
বুধবার তারা ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট আয়োজক ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রধান সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর ডেভিড বিসলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
গত ১১ জানুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ কমিটি চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানায়।
ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট যুক্তরাষ্ট্রের একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে আমাদের দলের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তিনি যেতে পারছেন না, তার প্রতিনিধিত্ব করবেন ব্যারিস্টার জাইমা রহমান।
বিএনপির ওই সুত্রটি আরও জানায় তারেক রহমান ও ট্রাম্পকে নিয়ে মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রকারীদের খোঁজা হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে বিভিন্ন পত্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তারেক রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়। এটি ছিল একটি ভুয়া ও বানোয়াট সংবাদ।
ওয়াশিংটন ডিসির হিলটন হোটেলে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কমিটি পর্ষদে দুইজন কংগ্রেসম্যান থাকেন। প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। কিন্তু তিনি কাউকে ব্রেকফাস্টে তার পক্ষ থেকে দাওয়াত প্রদান করেন না।
এ ইভেন্টে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় চার হাজারের মতো বিভিন্ন ধর্মের স্কলাররা উপস্থিত হয়ে থাকেন। স্বল্পসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা হাজির হলেও রাষ্ট্রনেতাদের উপস্থিতি সেভাবে পরিলক্ষিত হয় না। সেক্ষেত্রে তারেক রহমানকে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে যারা প্রচার করছেন, তারা আসলে মিথ্যা তথ্য প্রদান করছে। নিজেদের কৃতিত্ব জাহির এবং দল থেকে অযাচিত সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি দুষ্টচক্র দীর্ঘদিন যাবত এ ধরণের কর্মকান্ডের মাধ্যমে দল ও জনগণকে বিভ্রান্ত করছে্ন, যা দল এবং শীর্ষ নেতৃত্বের ইমেজের জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর।
সুত্রটি জানান ২০১৪ সালে প্রথম ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক বৈদেশিক উপদেষ্টা ও বিএনপির বিশেষ দূতজাহিদ এফ সরদার সাদী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের তৎকালীন উপদেষ্টা সাংবাদিক শওকত মাহমুদসহ বিএনপির কিছু সংখ্যক নেতা, জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন ও তার স্ত্রী সেলিনা মোমেন। তখন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। এরপর থেকে প্রতিবছরই এ ইভেন্টিতে বিএনপির নেতারা অংশগ্রহণ করে আসছেন।
সুতরাং যারা তারেক রহমানকে নিয়ে মিথ্যাচারিতা করছেন, তাদেরকে সতর্ক করতে হবে বলে উল্লেখ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি নেতারা। তারা বলেন দল ও নেতাদেরকে নিয়ে বাজে খেলা খেলবেন না। বহু ধান্ধাবাজি হয়েছে। এভাবে আর চলতে দেওয়া হবে না। অপদার্থ ও অযোগ্য লোক দিয়ে ভরা বিএনপির ফরেইন রিলেশন্স কমিটিও এ ঘটনার দায় এড়াতে পারবেন না। কারা তারেক রহমান ও ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের ইমেজ নষ্ট করতে মাঠে নেমেছে তা প্রকাশ করতে হবে।

বিপি।এসএম

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী