আবু সাবেত: যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৪ মিলিয়ন ডলারের কর জালিয়াতি ও ওয়্যার প্রতারণার অভিযোগে ভার্জিনিয়ার গ্রেট ফলসের ব্যবসায়ী রিক তারিক রহিমকে সাড়ে ৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিচার বিভাগের ট্যাক্স ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত উপ-সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কারেন ই. কেলি এবং পূর্ব ভার্জিনিয়ার মার্কিন অ্যাটর্নি এরিক এস.সিবার্ট এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের নথি ও সাক্ষ্য অনুযায়ী রহিম বেশ কয়েকটি ব্যবসার মালিক ও পরিচালনাকারী ছিলেন। যার মধ্যে লেজার ট্যাগ সুবিধা এবং একটি অ্যামাজন পুনঃবিক্রয়কারী অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তিনি তার কর্মচারীদের বেতন থেকে কেটে রাখা কর আইআরএস-এ জমা দেননি এবং প্রয়োজনীয় ত্রৈমাসিক কর্মসংস্থান কর রিটার্নও দাখিল করেননি।
২০১০ সালের অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের অক্টোবরের মধ্যে রহিম দুটি ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে তার বিপুল কর বকেয়া রয়েছে সেই কারণে সম্পূর্ণ কর পরিশোধ করেননি। আইআরএস যখন এই বকেয়া কর আদায়ের চেষ্টা করে তখন রহিম মিথ্যা বিবৃতি প্রদান করেন এবং তার মূল্যবান সম্পদ যেমন একটি হেলিকপ্টার, একটি বেন্টলি, একটি ল্যাম্বরগিনি এবং গ্রেট ফলসে অবস্থিত সম্পত্তির মালিকানা গোপন করেন। প্রায় দুই সপ্তাহ পরে রহিম ওই সম্পত্তিটি তার স্ত্রীর নামে স্থানান্তর করেন। তিনি ব্যবসার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যক্তিগত খরচ চালান যার মধ্যে ছিল তার বন্ধকের জন্য ৮ লাখ ৮৯ হাজার ডলারের বেশি এবং ৬ লাখ ৬৯ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দিয়ে বিভিন্ন গাড়ি কেনা বা লিজ নেওয়া যার মধ্যে তিনটি ল্যাম্বরগিনি অন্তর্ভুক্ত ছিল। রহিম ১০ হাজার ডলারের নিচে ভাগ ভাগ করে ১.১ মিলিয়নের বেশি নগদ টাকা উত্তোলন করেন যাতে ব্যাংক লেনদেনের প্রতিবেদন না হয়। ২০১২ সালের পর থেকে তিনি ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি,যদিও তিনি ৩৪ মিলিয়নেরও বেশি আয় করেছেন। রহিমের কারণে আইআরএস কমপক্ষে ৪.৪ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।
রহিম তার স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং বট এবং তার শেয়ার বাজার লেনদেন কপি করার মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রতারণা করেন। তিনি বটসফরওয়েলথ, ট্রেড অটোমেশন, প্রোচার্ট সিগন্যালস, অপশন কপিয়ার, কপিঅ্যান্ডউইন, স্নাইপঅ্যালগো এবং কিউকিউকিউট্রেড নামে ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে তার সেবাগুলো প্রচার করতেন। গ্রাহকরা সাবস্ক্রিপশন ফি প্রদান করে তার ট্রেডিং বট এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করতেন। তিনি ‘আজীবন সদস্যপদ ‘নামক একটি পরিষেবা চালু করেন যার মাধ্যমে গ্রাহকরা তার ব্যক্তিগত ডিসকর্ড চ্যানেলে প্রবেশাধিকার পেতেন এবং তার বিশেষ কিছু ট্রেডিং পণ্য ব্যবহার করতে পারতেন।
রহিম তার গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করতে টিকটক, ইউটিউব, এবং ডিসকর্ড-এর মতো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করতেন। তিনি নিজেকে অতি ধনী হিসেবে উপস্থাপন করতেন। শেয়ার বাজারে বিশাল লেনদেনের দাবি করতেন। তার বড় বাড়ি, সুইমিং পুল এবং ল্যাম্বরগিনিসহ বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ছবি শেয়ার করতেন। তিনি ওয়েবসাইট ও সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করতেন এবং প্রতিদিন শেয়ার বাজারকে হারানোর দাবি করতেন। বাস্তবে তিনি লোকসানের লেনদেন প্রকাশ করতেন না এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ লাখ ডলারেরও বেশি লোকসান করেছেন।
প্রতারণার অংশ হিসেবে রহিম কমপক্ষে ২০টি ভুয়া ডিসকর্ড ব্যবহারকারী প্রোফাইল তৈরি করেন। সেখানে তিনি নিজেই তার পোস্টে প্রশংসাসূচক প্রতিক্রিয়া জানাতেন। তার এই কৌশলের মাধ্যমে তিনি সাবস্ক্রিপশন ফি বাবদ কমপক্ষে ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ডলার আয় করেন।
রহিমকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১.৩ মিলিয়নেরও বেশি অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং আইআরএস ও তার প্রতারিত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন আদালত।
এই রায়ের ঘোষণা দেন বিচার বিভাগের ট্যাক্স ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত উপ-সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কারেন ই. কেলি এবং পূর্ব ভার্জিনিয়ার মার্কিন অ্যাটর্নি এরিক এস. সিবার্ট।
রহিমের কর জালিয়াতির তদন্ত করেছে আইআরএস ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন বিভাগ এবং তার বিনিয়োগ প্রতারণার তদন্ত করেছে এফবিআই। এই মামলাগুলো একত্রিত করে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম