আবু সাবেত: ১০০ দিনের দায়িত্ব পালন উপলক্ষে মঙ্গলবার মিশিগানে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন, ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ার জেরোম পাওয়েল এবং তার এক্সিকিউটিভ অ্যাকশনগুলোর বিরুদ্ধে রায় দেয়া বিচারকদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি তার প্রচারণার ভাষা অনুসরণ করে দেওয়া ভাষণে বাইডেনকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘ওই লোকটা কীভাবে প্রেসিডেন্ট হলো, কেউ কি ব্যাখ্যা করতে পারবেন? এটা কীভাবে হলো?’
তিনি অভিযোগ করেন, পোলিং সংস্থাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি সংখ্যক ডেমোক্র্যাটদের অন্তর্ভুক্ত করে তার রেটিং কম দেখাচ্ছে। এরপর জনতার কাছে নিজেই ‘পোল’ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “স্লিপি জো না ক্রুকড জো, কে ভালো?
ট্রাম্প অভিযোগ করেন, বাইডেন আইন স্বাক্ষরে স্বয়ংক্রিয় কলম (অটোপেন) ব্যবহার করেছেন, যা প্রমাণ করে তিনি নিজেই কার্যত প্রেসিডেন্ট নন। বরং তার আশপাশের কিছু “চরমপন্থী বাম” ব্যক্তি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণে আছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, অটোপেন চালানো ব্যক্তিই প্রকৃত প্রেসিডেন্ট ছিলেন, বাইডেন কিছুই জানতেন না।’
এরপর তিনি তার নিযুক্ত ফেড চেয়ার পাওয়েলের সমালোচনা করে বলেন, আমি ফেডকে সম্মান করতে চাই, কিন্তু আমি সুদের হারের বিষয়ে তাকে চেয়ে অনেক বেশি জানি।’
গত সপ্তাহে ট্রাম্প পাওয়েলকে ‘মেজর লুজার’ বলেছেন এবং অভিযোগ করেছেন, ফেডের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত বাইডেনকে সহায়তা করার জন্য।
ট্রাম্প বিচারকদেরও আক্রমণ করেন যারা তার বিভিন্ন নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তার সই করা শত শত নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে প্রায় ২৫০টি আইনি চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
তার উল্লেখিত বিতর্কিত আদেশগুলোর একটি হলো ১৮ শতকের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ প্রয়োগ, যার মাধ্যমে ভেনেজুয়েলার শত শত অভিবাসীকে বিতাড়িত করে এল সালভাদরের কুখ্যাত এক কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এই তালিকায় রয়েছেন কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া, যাকে ‘প্রশাসনিক ভুলে’ এল সালভাদরে পাঠানো হয়েছে বলে আদালতে স্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস। তবে পরে প্রশাসন এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে, এবং সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে ছুটিতে পাঠানো হয়।
মামলাটি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে এবং আদালত প্রশাসনকে গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিলেও, প্রশাসন এখনো তাকে ফেরাতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
এই সমাবেশ ছিল ট্রাম্পের নির্বাচনী জয়ের পর প্রথম প্রচারণামূলক ভাষণ। তিনি বলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করার মূল কারণ ছিল অবৈধ অভিবাসন ইস্যু, এবং এখন আদালত সেই এজেন্ডার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আদালত বলছে এগুলো কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আমি মনে করি না তারা পার পাবে।’
ভাষণে তিনি প্রথম ১০০ দিনের নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন—যেমন ব্যাপক বিতাড়ন, “মেক আমেরিকা হেলদি অ্যাগেইন” কমিশন গঠন, যুক্তরাষ্ট্রে কেবল দুটি লিঙ্গ স্বীকৃতি, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রত্যাহার, এবং ফেডারেল কর্মসংস্থানে সংস্কার।
তিনি কর সংস্কার নিয়ে কংগ্রেসকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান এবং জানান, তার প্রস্তাবিত বিলের মধ্যে থাকবে: বকশিশে কর নয়, সোশ্যাল সিকিউরিটি ও ওভারটাইমে কর নয়, এবং অপ্রয়োজনীয় এক ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যয় ছাঁটাই। তিনি মেদিকেয়ার ও সোশ্যাল সিকিউরিটি রক্ষা করার অঙ্গীকার করেন এবং মেডিকেইডে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দেন।
তবে বিলটি এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। রিপাবলিকানদের মধ্যেই মেডিকেইড কাটা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
ট্রাম্পের এই ভাষণ ছিল জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর হোয়াইট হাউসের বাইরে তার প্রথম বড় বক্তৃতা। এর আগে তিনি সেলফ্রিজ এয়ার ন্যাশনাল গার্ড বেসে ভাষণ দেন এবং মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমারকে প্রশংসা করেন।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম