বাংলাপ্রেস ডেস্ক: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ব্যক্তিগত আয়নাঘরে প্রায় ৬ মাস বন্দী থেকে কৌশলে মুক্ত হয়েছে দুই জন।মাটির নিচে দীর্ঘ দিন থাকার পর মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে গ্রাম্য চিকিৎসকের আয়নাঘর থেকে বের হয়েছেন তারা। এদের মধ্যে এক মহিলা ও এক বৃদ্ধ আছেন।
আজ শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সোনারাম পূর্বপাড়া গ্রামে মাটির নিচের একটি ঘর থেকে তারা মুক্তি পান বলে জানা গেছে।
মুক্তি পাওয়ারা হলেন চান্দাইকোনা ইউনিয়নের লক্ষিবিষ্ণুপ্রসাদ গ্রামের মুনসুর আলীর স্ত্রী শিল্পী খাতুন (৩৮) ও একই ইউনিয়নের পূর্বপাইকড়া গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল জুব্বার (৭৫)।
ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন, তারা নাজমুল ইসলাম আরাফাত নামে একজন গ্রাম্য ডাক্তারের তৈরি আয়নাঘরে বন্দী ছিলেন। আরাফাত লক্ষীবিষ্ণুপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা ও তিনি গ্রাম্য ডাক্তারের পাশাপাশি রায়গঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য। পূর্বশত্রুতার জেরে তাদের অপহরণ করে সেখানে মাটির নিচে তৈরি করা ছোট্ট ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল।
তারা আরও জানান, ৬ মাস একটা অন্ধকার ঘরে তাদের আটকে রাখা হয়েছিল। বাড়ির মালিক সুমন প্রতিদিন একবেলা তাদের খাবার দিত। আরাফাত একদিন সেখানে ডাক্তারি কেঁচি রেখে যায়। সেই কেঁচি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধীরে ধীরে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে গতকাল রাত তিনটার দিকে বেরিয়ে আসেন তারা।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ৬ মাস আগে নিখোঁজ হন শিল্পী খাতুন (৩৮)। এ ঘটনায় তার স্বামী মো. মনছুর বাদী হয়ে গ্রাম্য ডাক্তার নাজমুল ইসলাম আরাফাত ও শরীফসহ কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। এদিকে, একই সময়ে বৃদ্ধ আব্দুল জুব্বার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় জিডি করেন তার ছেলে।
শিল্পীর পরিবার জানায়, আরাফাতের সঙ্গে আগে থেকে দ্বন্দ্ব ছিল তাদের। সেই দ্বন্দ্বের জেরে শিল্পীকে অপহরণ করে আয়নাঘরে আটকে রাখা হয়।
নিখোঁজ শিল্পী ও জুব্বারকে সোনারাম পূর্বপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে সুমনের বাড়ির একটি ঘরে মাটির নিচে তৈরি করা ছোট কক্ষে আটকে রাখা হয়। ছয় মাস জিম্মি থাকার পর গতকাল রাত তিনটার দিকে মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে বের হন তারা।
পরে অপহরণকৃতদের দেওয়া তথ্যমতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, সংবাদকর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আয়নাঘরের সন্ধান পান। এ ঘটনায় নাজমুল ইসলাম আরফাতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের গোয়ান্দা বিভাগ (ডিবি) আটক করেছেন।
রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, ‘আয়নাঘরের আদলে নির্মিত একটি ঘর থেকে দুজন মুক্তি পেয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। নিখোঁজ দুই ব্যক্তির পরিবার থেকে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, খবর পেয়ে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুমনের বাড়ি ও আরাফাতের বাড়িতে ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি/কেজে