মিনারা হেলেন: ভয়েস অফ আমেরিকা (ভিওএ) কর্মীদের আগামী সপ্তাহে কর্মস্থলে ফেরার পরিকল্পনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শনিবার একটি আপিল আদালতে এক স্থগিতাদেশ জারি করেছে, যা এপ্রিলের শেষের দিকে জেলা আদালতের একটি আদেশকে স্থগিত করে দেয়। ওই আদেশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রচার সংস্থা ভেঙে ফেলার প্রচেষ্টা থেকে বিরত রেখেছিল।
দুই এক ভোটে দেওয়া রায়ে আপিল আদালত জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার মামলার প্রাথমিক বিষয়ের ওপর সম্ভাব্য সাফল্যের সম্ভাবনা রাখে এবং জেলা আদালতের বিচারক রয়স ল্যামবার্থ “বিষয়-ভিত্তিক এখতিয়ার” না রেখেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মার্চ মাসের নির্বাহী আদেশের কিছু অংশকে বাতিল করেছিলেন।
এই রায় ভিওএ কর্মীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা, যাদের শুক্রবার জানানো হয়েছিল যে তারা সম্প্রচার কার্যক্রমে ফিরতে পারবেন এবং ওয়াশিংটন অফিসে কাজে যোগ দিতে পারবেন। এক VOA কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ ঘটনাকে “বিধ্বংসী” বলে মন্তব্য করেন।
শনিবারের আদেশে, ট্রাম্প-নিযুক্ত বিচারপতি নাওমি রাও এবং গ্রেগরি কাটসাস সরকারের পক্ষে রায় দেন।
তারা রায়ে বলেন, ‘ইউএসএজিএম-এর কর্মচারী ও ঠিকাদাররা হয়তো ব্যক্তিগত কর্ম-সম্পর্কিত পদক্ষেপ নিয়ে পৃথক মামলা করতে পারেন, তবে সেসব অভিযোগ অন্য প্রতিকারমূলক উপায়ে অনুসরণ করতে হবে।’ তৃতীয় বিচারক কর্নেলিয়া পিলার্ড, যিনি ওবামা-নিযুক্ত, ভিন্নমত পোষণ করেন।
তিনি লেখেন, ‘আপিল মীমাংসার আগ পর্যন্ত স্থগিতাদেশের উদ্দেশ্য হলো স্থিতাবস্থা বজায় রাখা। অথচ এই স্থগিতাদেশ উল্টো কাজ করছে ভিওএ-কে নীরব করে দিচ্ছে এবং রেডিও ফ্রি এশিয়া ও মিডল ইস্ট ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্কস-এর পক্ষে মামলাটি চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে।”
ইউএসএজিএমএবং ভিওএ’র তত্ত্বাবধানে থাকা ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও অ্যারিজোনার সাবেক গভর্নরপ্রার্থী কারি লেক এই রায়কে ‘বড় জয়’ হিসেবে আখ্যা দেন।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লেখেন, ‘ইউএসএজিএম এবং ভিওএ’তে আইনি লড়াইয়ে বড় জয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের জন্য বিশাল বিজয়। এখন বোঝা যাচ্ছে, জেলা আদালতের বিচারক যেভাবে সংস্থাটি পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন, তা আর সম্ভব নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ( ডিওজে) শুক্রবার ভিওএ কর্মীদের আইনজীবীদের জানায়, তারা পরবর্তী সপ্তাহে অফিসে ফিরে যেতে এবং সম্প্রচারে অংশ নিতে পারবেন। কর্মসূচি প্রায় দুই মাস বন্ধ ছিল।
ডিওজে-এর এক ইমেইলে বলা হয়, ‘ইউএসএজিএম আশা করছে আগামী সপ্তাহ থেকে কর্মীরা ধাপে ধাপে অফিসে ফিরবেন, নিরাপত্তা, অফিস স্পেস এবং যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সমাধান সাপেক্ষে।’
ভিওএ আইনজীবী ডেভিড সাইডেকে পাঠানো এক ইমেইলে সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি ব্রেন্ডা গনজালেজ হোরোভিটজ বলেন, ‘ভিওএ স্টাফদের এখন সিস্টেম অ্যাক্সেস রয়েছে। ইউএসএজিএম আশা করছে, ভিওএ-এর সম্প্রচার আগামী সপ্তাহে পুনরায় শুরু হবে। এর মধ্যে ওসিবি-এর কর্মীরা সম্প্রচার চালু রাখতে সহায়তা করবেন।’
উল্লেখ্য, ভিওএ সম্প্রচারে ফিরলে তা হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ১৪ মার্চের নির্বাহী আদেশের প্রায় দুই মাস পর। ওই আদেশে তিনি ইউএসএজিএম সহ সাতটি ফেডারেল সংস্থা বিলুপ্ত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এসব সংস্থা রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি ও রেডিও ফ্রি এশিয়া-এর মতো মাধ্যমে সরকারি তহবিল বিতরণ করে থাকে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা দীর্ঘদিন ধরে ভিওএ -এর সমালোচনা করে আসছেন। ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যম প্রায় ৫০টি ভাষায় সম্প্রচার করে। ট্রাম্পপন্থীদের অভিযোগ, ভিওএ -এর সংবাদ কভারেজ রক্ষণশীলদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট।
তবে এই উদ্যোগ আদালতে বাধাগ্রস্ত হয়। ২২ এপ্রিল, জেলা আদালতের বিচারক ল্যামবার্থ প্রশাসনের VOA বন্ধের প্রচেষ্টাকে অবৈধ ঘোষণা করে ইউএসএজিএম-কে সংস্থাটি পুনর্বহালের নির্দেশ দেন।
ল্যামবার্থ তার রায়ে লেখেন, “প্রশাসন অবিলম্বে এবং মারাত্মকভাবে ইউএসএজিএম -কে ধ্বংস করতে চেয়েছে, সংস্থার আইনগত ও সাংবিধানিক দায়িত্ব বিবেচনা না করেই, এবং কর্মী, ঠিকাদার, সাংবাদিক ও বিশ্বব্যাপী দর্শকদের ওপর যে ক্ষতি হয়েছে, তার পরোয়া না করেই।”
তিনি আরও বলেন, ‘আদালতের কাছে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারী ও খামখেয়ালী সিদ্ধান্তের উদাহরণ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম