নোমান সাবিত: যুক্তরাষ্ট্রের সময় বৃহস্পতিবার পোপ লিও চতুর্দশ ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাসে প্রথম আমেরিকান বংশোদ্ভূত পোপ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। শিকাগোর উপশহর ডলটন, ইলিনয়-এ জন্ম নেওয়া এই ধর্মগুরু ঐতিহ্য ভেঙে এই উচ্চপদে আসীন হলেন, যেখানে আগে কার্ডিনালরা আমেরিকান প্রার্থীদের থেকে দূরে থাকতেন।
৬৯ বছর বয়সী পোপ লিও চতুর্দশের জন্মনাম রবার্ট ফ্রান্সিস প্রেভোস্ট। তাঁর পিতা লুইস প্রেভোস্ট ছিলেন গ্লেনউড স্কুল ডিস্ট্রিক্ট ১৬৭–এর সুপারিনটেনডেন্ট এবং মা মিলি প্রেভোস্ট ছিলেন একজন গ্রন্থাগারিক। প্রেভোস্ট ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন, যা সেন্ট অগাস্টিনের প্রতিষ্ঠিত, এবং ১৯৭৭ সালে গ্র্যাজুয়েট হয়ে ক্যাথলিক পুরোহিতদের অগাস্টিনিয়ান অর্ডারে যোগ দেন।
প্রবাহিত জীবনের বড় অংশ তিনি পেরুতে কাটিয়েছেন এবং সেখানে তাঁর দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। ২০২৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাঁকে কার্ডিনাল ঘোষণা করেন। সামাজিক মাধ্যম এক্স–এ তাঁর জীবনীতে লেখা, ‘ক্যাথলিক, অগাস্টিনিয়ান, বিশপ।
তিনি পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত হন। বিশ্বজুড়ে বিশপ নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্ডিনাল হিসেবে তাঁকে নিযুক্ত করেছিলেন ফ্রান্সিস। দরিদ্র ও অভিবাসীদের প্রতি তিনি যেমন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ফ্রান্সিসও তেমন ছিলেন। তবে এলজিবিটিকিউ ক্যাথলিকদের অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এখনও স্পষ্ট নয় বলে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে।
নারীদের বিশপ নির্বাচনী পর্ষদের ভোটগ্রহণে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রেও তিনি প্রগতিশীল ভূমিকা রেখেছেন। ২০২৩ সালে ফ্রান্সিস তাঁকে “ডিকাস্টারি ফর বিশপস”–এর প্রধান এবং লাতিন আমেরিকার জন্য পন্টিফিকাল কমিশনের সভাপতি করেন। এই দায়িত্বের আওতায় তিনি বিশপ প্রার্থীদের নাম পোপকে প্রস্তাব করেন এবং লাতিন আমেরিকায় চার্চের অবস্থা নিয়ে কমিশনের কাজ তদারকি করেন।
দ্বিতীয় দিনের কনক্লেভ শেষে তিনি নির্বাচিত হলে প্রথমে সেন্ট পিটার্স ব্যালকনি থেকে ইতালীয় ভাষায় নিজের পরিচয় দেন এবং পরে স্প্যানিশে বক্তব্য রাখেন— যা তাঁর পেরুভিয়ান শিকড়ের প্রতি সম্মানসূচক ইঙ্গিত ছিল।
পোপ হিসেবে তাঁর প্রথম উচ্চারণ ছিল, “তোমাদের সকলের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক”— যা ক্যাথলিকদের কাছে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ।
নতুন পোপ বিভিন্ন বিষয়ে কী অবস্থান গ্রহণ করবেন, তা আগামী কয়েক দিনে পরিষ্কার হবে।
তাঁর সর্বশেষ এক্স পোস্ট ছিল ১৪ এপ্রিল, যেখানে তিনি কিলমার আবরেগো গার্সিয়াকে এল সালভাদরে নির্বাসনের প্রতিবাদে লেখেন: “তুমি কি কষ্টটা দেখতে পাও না? তোমার বিবেক কি বিচলিত নয়? তুমি কীভাবে নীরব থাকতে পারো?”
ফেব্রুয়ারিতে তিনি আরেকটি মতামত প্রবন্ধ শেয়ার করেন, যেখানে ক্যাথলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মন্তব্যের সমালোচনা করে বলা হয়েছিল, “জেডি ভ্যান্স ভুল করছেন: যীশু আমাদের ভালোবাসার শ্রেণিবিন্যাস করতে বলেন না।” তিনি আরেকটি নিবন্ধও শেয়ার করেন, যার শিরোনাম ছিল: “পোপ ফ্রান্সিসের চিঠি, জেডি ভ্যান্সের ‘অর্ডো আমোরিস’, এবং অভিবাসন বিষয়ে গসপেল আমাদের যা শেখায়।”
ভ্যান্স তাঁর অভিবাসন সংক্রান্ত মন্তব্য ও “নিজের দেশবাসীকে আগে ভালোবাসা উচিত” বক্তব্যের কারণে অন্যান্য অনেক ক্যাথলিকের সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
গত বছর পোপ ফ্রান্সিস রাজনৈতিক বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের গণ-নির্বাসন নীতির সমালোচনা করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের প্রতি সহানুভূতি ও মর্যাদা রক্ষার আহ্বান জানান।
তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বক্তব্য রেখেছেন— ট্রাম্প ও হ্যারিসের মধ্যে “কম ক্ষতিকর” প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার আহ্বান জানান। উভয়কেই তিনি “জীবনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া” হিসেবে বর্ণনা করেন, অভিবাসন ও গর্ভপাত–সংক্রান্ত মতামতের ভিত্তিতে।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ট্রুথ –এ পোপ লিও চতুর্দশকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন, “প্রথম আমেরিকান পোপ হিসেবে তাঁকে দেখে আমি গর্বিত। হোয়াইট হাউজ থেকে পরে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনটা দারুণ একটা সিদ্ধান্ত।’”
২০১৮ সালে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, প্রেভোস্ট আরেকজন কার্ডিনালের একটি পোস্ট শেয়ার করেন, যেখানে লেখা ছিল, “শিশুদের তাদের বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন করে খাঁচায় বন্দি করার মধ্যে কিছুই খ্রিস্টীয়, আমেরিকান বা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আমাদের নামে করা হচ্ছে— এবং এই লজ্জা আমাদের সবার।”
সেই সময় ট্রাম্প এমন একটি অভিবাসন নীতি কার্যকর করেছিলেন, যা কিছু শিশুকে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতো।
যদিও গত কয়েক বছরে নতুন পোপ অন্য কোনো মার্কিন রাজনীতিবিদের পোস্ট শেয়ার করেননি, তবে ২০১৭ সালে তিনি সেনেটর ক্রিস মারফির একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন, যা লাস ভেগাসে এক গণহত্যার পর লেখা হয়েছিল: “আমার সহকর্মীদের উদ্দেশে: শুধু প্রার্থনা করে দায়িত্ব এড়ানো যায় না। কিছু না করলে এসব ঘটনার শেষ নেই।”
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম