Home কলাম ট্রাম্পের বহিষ্কার অভিযান ‘আমেরিকান স্বপ্নের মৃত্যু ঘণ্টা’

ট্রাম্পের বহিষ্কার অভিযান ‘আমেরিকান স্বপ্নের মৃত্যু ঘণ্টা’

by bnbanglapress
Published: Updated:
A+A-
Reset

 

ছাবেদ সাথী
ইয়েমেনের মুহাম্মদ একজন শিক্ষককে চিঠিতে লিখেছিল ‘এখানে যুদ্ধ চলছে। সবকিছু বিশৃঙ্খল। স্কুল বন্ধ। খাবারের অভাব। সবাই আতঙ্কিত। খুব বিপজ্জনক। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাতেও বন্দুক ও অস্ত্র’।
তামজিদ লিখেছিল বাংলাদেশের রাজনীতি দুর্নীতিপূর্ণ। ধর্মঘটের কারণে স্কুল প্রায়ই বন্ধ থাকে। অনেক ছাত্র ভয়ে স্কুলে যায় না।
কলম্বিয়ার মিগুয়েল লিখেছিল আমরা এখানে এসেছি কারণ আমার বাবাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং আমার পরিবার আশঙ্কা করছিল যে তারা আমাদের ক্ষতি করবে.
এমনই ছিল ৮১টি হাতে তৈরি, হাতে লেখা এবং ক্রেয়ন দিয়ে রঙিনভাবে আঁকা কার্ড যেগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসী শিশুদের ব্যক্তিগত বার্তা ছিল আমার জন্য।
ছয় বছর আগে, নিউ ইয়র্ক সিটির একটি পাবলিক মিডল স্কুল ‘অ্যাকাডেমি ফর নিউ আমেরিকানস’-এ প্রায় ১৫০ জন ছাত্র, শিক্ষক এবং অভিভাবকের সামনে একটি বক্তৃতা চলছিল। এই স্কুলে সদ্য আগত অভিবাসী শিশুরা ভর্তি হয় যারা ইংরেজি প্রায় জানে না, কিন্তু পরে ইংরেজিতে সাবলীল হয়ে ওঠে। বক্তৃতা শেষে, এক ছাত্র বক্তাকে একটি বড় খাম দেয় যার মধ্যে ছিল সেই ৮১টি কার্ড।
আজ, যখন ট্রাম্পের বহিষ্কার নীতি দেশজুড়ে বজ্রের মতো প্রচণ্ডভাবে কার্যকর হচ্ছে, আবারও সেই কার্ডগুলোর কথা মনে পড়ছে।
এই কিশোর-কিশোরীরা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল আলবেনিয়া, বাংলাদেশ, চিলি, কলম্বিয়া, ডোমিনিকান রিপাবলিক, ইকুয়েডর, মিশর, এল সালভাদোর, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, ভারত, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, মরক্কো, নেপাল, প্যারাগুয়ে, পাকিস্তান, পেরু, স্পেন, তিব্বত, ভেনেজুয়েলা এবং ভিয়েতনাম থেকে। কিছু পরিবার দারিদ্র্য, সহিংস অপরাধ, গৃহযুদ্ধ এবং অন্যান্য দুর্ভোগ থেকে পালিয়ে এসেছে, যেমনটা শিশুরা তাদের বার্তায় লিখেছিল। এই কার্ডগুলো যেন আমেরিকার অভিবাসী তরুণ প্রজন্মের একটি বহুজাতিক প্রতিচ্ছবি, যারা স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস নিতে চায়।
এই ছাত্র-ছাত্রীরা বলেছিল তারা এখানে জীবনে কোথায় যেতে চায়। প্রায় সবাই বলেছিল তারা এমন শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সুযোগ খুঁজছে যা নিজ দেশে ছিল না। তারা ডাক্তার, আইনজীবী, উদ্যোক্তা, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, দাঁতের ডাক্তার, যান্ত্রিক প্রকৌশলী এবং হ্যাঁ, পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় হতে চেয়েছে।
একজন লিখেছিল “আমার মা, বাবা আর আমি যুক্তরাষ্ট্রে এসে খুব খুশি”। “শীঘ্রই আমরা নাগরিক হবো।” আরেকজন লিখেছিল, “আমি নিউ ইয়র্কে এসেছি জীবনে কিছু হবার জন্য।” আরেকজন তার কার্ডের পেছনে লিখেছিল, “নিজের স্বপ্ন অনুসরণ করো।”
আজ এই ৮১ জন শিশুর বয়স আনুমানিক ১৮ থেকে ২৪। তারা কেমন আছে? উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে? কলেজে পড়ছে? এখনও কি তারা আমেরিকান স্বপ্নে বিশ্বাস রাখে?
ওই শিক্ষক জানার চেষ্টা করছেন। যিনি তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেই শিক্ষককে ইমেইল করেছেন। কোনো উত্তর আসেনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বারবার খুঁজেছেন, কিছু জানতে চেয়ে। তবু কোনো সাড়া নেই।
তিনি সন্দেহ করেন তারা ভয়ে আছে—ভয় পাচ্ছেন তিনি কোনো প্রশ্ন করেন, ভয় কিছু বললে বিপদ হতে পারে। কিন্তু তারা নিজেদের জন্য নয়, সেই শিশুদের জন্য বেশি শঙ্কিত। তিনি জানেন না এই ৮১ শিশুর পিতামাতারা আইনিভাবে এসেছিলেন কি না, তারা নথিভুক্ত কি না, বা তাদের কোনো অপরাধমূলক ইতিহাস আছে কি না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সবাই—শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, এমনকি স্কুলের প্রধানও—ভয়ে আছেন।
আমি আইনজীবী নই বা অভিবাসন নীতির বিশেষজ্ঞও নই, কিন্তু যা বুঝি তা হলো: এমনকি যারা বৈধভাবে এসেছিল তারাও কিছু কিছু পরিস্থিতিতে বহিষ্কৃত হতে পারে, যেমন ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে। শিশুদের জন্য তৈরি হওয়া ডিএসিএ (Deferred Action for Childhood Arrivals) প্রোগ্রামও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যদি তাদের পিতামাতা বহিষ্কৃত হন, তাহলে সেই শিশুদের হয়ত বাড়ি ফিরে যেতে হতে পারে বা পরিবার থেকে আলাদা হয়ে থাকতে হতে পারে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য।
নতুন এই বহিষ্কারের নীতি কতটা মানবিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। আদালতের হস্তক্ষেপ, জনমত ও আইনি চ্যালেঞ্জ সবই এই নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে। অনেক অভিবাসী পরিবার যারা সামর্থ্য রাখে তারা এখন অভিবাসন আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছে এই হুমকি থেকে বাঁচতে।
ভুল বুঝবেন না: আইন মানতেই হবে। তবে আইন মানে শুধু কঠোর নিয়ম নয়, সেখানে বিবেচনারও স্থান আছে। এবং আইন মানে ন্যায়বিচার, যেখানে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত।
আমাদের দেশ অভিবাসী ঐতিহ্যে বিশ্বে অগ্রগণ্য। ন্যায়ের স্বার্থে শিশুদের প্রতি করুণা ও সহানুভূতি দেখানো আমাদের দায়িত্ব—কারণ তাদের অপরাধ কিছুই নয়, তারা শুধু শিশু।
যে ৮১টি কার্ড সেই বক্তার হাতে দেখেছিলাম, তার বেশিরভাগের উপর একটি বিশেষ শব্দ লেখা ছিল, তাঁর উদ্দেশে অভ্যর্থনার সেই শব্দ। এটাই এমন একটি শব্দ যা আজও তাদের সকলের প্রাপ্য। সেই শব্দটি হলো: ‘স্বাগতম’।

ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক ও মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সম্পাদক বাংলা প্রেস

[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

বিপি।এসএম

You may also like

Leave a Comment

banglapress24

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

১১১ শেলডন রোড # ১৮৮৪, ম্যানচেস্টার, কানেকটিকাট ০৬০৪২

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৫ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী