নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি: অবশেষে সপরিবারকে একত্রে রাখার সিদ্ধান্তে ট্রাম্পের স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিরোধী দল ডেমোক্র্যাট ও নিজের দল রিপাবলিকান পার্টিসহ স্ত্রী-কন্যা কেউই মানতে পারছিলেন না মেক্সিকো সীমান্তে আটক হওয়া অবৈধ অভিবাসীদের থেকে তাদের সন্তানদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার বাস্তবতা।
জিরো টলারেন্স নীতির আওতায় ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযানের প্রথম ৬ সপ্তাহেই প্রায় ২০০০ শিশু পরিবার-বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। চাপের মুখে এক নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প পরিবারের সদস্যদের একত্রিত রাখার পক্ষে অবস্থান নিতে বাধ্য হলেন । তবে ইতোমধ্যেই যারা পরিবারবিচ্ছিন্ন হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে নির্বাহী আদেশে তা স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প। এদিকে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের রুখতে সম্প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেন ট্রাম্প প্রশাসন। এ নিয়ে সমালোচনার জবাবে শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলে আসছেন, তিনি নতুন কোনও অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেননি। বিগত ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের নেওয়া নীতি মেনেই মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। অবশ্য অবৈধ অভিবাসীদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নকরণের ঘটনা পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসনগুলোতেও দেখা গেছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সে সংখ্যাটা অনেক কম ছিল। সাবেক ও বর্তমান ফার্স্ট লেডি, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতাসহ নির্বিশেষে ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। ফুঁসে ওঠে সাধারণ মার্কিনিরাও। দেশের বাইরেও ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ও কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ অনেকেই সমালোচনা করেন। চাপের মুখে ট্রাম্প বিচ্ছিন্নকরণ ঠেকাতে এক নির্বাহী আদেশ জারি করেন ট্রাম্প।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ‘পরিবারের সদস্যদের একত্রিত রাখতে’ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। তবে অভিবাসন নিয়ে নিজের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়:
মামলা চলমান থাকা অবস্থাতেও তারা একসঙ্গে থাকতে পারবে।
শিশুরা কতদিন আটক থাকবেন সেই বিষয়ে আদালতের রায়ের সংস্কারের অনুরোধ করা হয়েছে অতীতে দেখা গেছে, যেসব মানুষ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতো এবং অপরাধের কোনও রেকর্ড ছিল না, তাদের আইনের আওতায় অপরাধী সাব্যস্ত না করে শুধুই অস্থায়ীভাবে আটক করা হতো কিংবা বিতাড়িত করার সুপারিশ করা হতো। মা ও শিশুরা সাধারণত একসঙ্গেই থাকতো। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সব ধরনের অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে আইনগত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করার প্রথম ৬ সপ্তাহেই প্রায় ২ হাজার শিশু পরিবার-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অতীতে এমন নজির দেখা যায়নি। নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরাও শিশুদের কান্না ও বন্দিত্বের ছবি দেখে নড়েচড়ে বসে। নীতির বিরোধিতা করেন সাধারণ মার্কিনিরা।ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান নির্বিশেষে ফার্স্টলেডিদের মধ্যে ৫ জন ট্রাম্পের এই বিচ্ছিন্নকরণ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন।এছাড়া ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বলেন, পপুলিজম বা লোকরঞ্জনবাদ অভিবাসী সমস্যার সমাধান নয়।
এরপর বুধবার নিজের অব্স্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হন ট্রাম্প। তবে তিনি দাবি করেন,বাবা-মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া শিশুদের কান্নার ছবি দেখে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।তবে তার নির্বাহী আদেশের মধ্যে ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্নদের নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা বলেছেন, ৫ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ২০৬ জন বাবা-মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ২ হাজার ৩৪২ জন শিশুকে। বুধবার ট্রাম্প দাবি করেন, ‘পরিবারকে এক রাখতে চাই আমরা। আলাদা রাখার দৃশ্য আমার ভালো লাগেনি।’ ট্রাম্প বলেন, তার স্ত্রী মেলানিয়া ও মেয়ে ইভাঙ্কা তার ওপর এই নীতি থেকে সরে আসার জন্য চাপ দিচ্ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় হৃদয়সম্পন্ন যেকোনও মানুষ বিষয়টি অনুভব করবে।’ নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করার সময় উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী কার্সটেন নিলসেন। রিপাবলিকান কংগ্রেস নেতা পল রায়ান বলেছেন তারা বৃহস্পতিবার ভোটের মাধ্যমে একটি আইন পাশ করবেন। এতে করে পরিবার একসঙ্গে থাকতে পারবে। তবে এর বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।