বাংলাপ্রেস অনলাইন: সৌদি আরবে নারীরা প্রথমবারের মতো গাড়ি চালানোর সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। এতে গাড়ির চালকের আসনে বসার জন্য তাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। তবে নারী গাড়ি চালকদের প্রতি পুরুষদের নেতিবাচক আচরণ এখনো একটি বড় বাধা। ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো চালকের আসনে নারী আর পেছনে যাত্রীর আসনে পুরুষের ভিডিও দিয়ে ঠাসা। খবর এএফপি/বাসস।
লিঙ্গ বৈষম্যপূর্ণ পুরুষ শাসিত সৌদি সমাজে একজন নারীর গাড়ি চালানোর বিষয়টি একেবারেই নতুন। নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর রোববার থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। নারীরা দীর্ঘদিন পর গাড়ি চালানোর অধিকার পেয়ে রিয়াদে গাড়ি চালাচ্ছেন। নারী গাড়ি চালকদের লক্ষ্য করে পুরুষদের মন্তব্য ‘দেখ দেখ !! নারী গাড়ি চালাক!!’ বাক্যটি ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে।
এখন সৌদির রাস্তাগুলোতে প্রায়ই নারী-পুরুষের দ্বন্দ্ব দেখা যাবে। নারীরা গাড়ি চালানোর ব্যাপারে কিছুতেই ছাড় দেবে না। আর অধিকাংশ পুরুষই এটা মেনে নিতে পারছে না। তবে তরুণরা এই সিদ্ধান্তকে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর প্রথম দুইদিনে প্রকাশ্যে নারীদের হয়রানী করার কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে কর্তৃপক্ষের সতর্কতা সত্ত্বেও পুরুষ চালকরা তাদের সাথে আক্রমণাত্মক ও বিরোধপূর্ণ আচরণ করেছে।
সৌদি আরবের এক টুইটার ব্যবহারকারী ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘নারী গাড়ি চালকদের গাড়ির নিচে পিষ্ট হওয়া এড়াতে আমি পুরুষদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নারী গাড়ি চালকদের দ্বারা ব্যাপক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করে বিপুল সংখ্যক মানুষ কমেন্ট করেছে। প্রায়ই এই সব মন্তব্যের সঙ্গে জ্বলন্ত গাড়ির ছবি জুড়ে দেয়া হচ্ছে। কোন কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী নারীদের গাড়ি চালানোর সময় মেকআপ না করার পরামর্শ দিয়েছে। এটা তাদের ব্যঙ্গ করতেই করা হয়েছে।
অন্যরা নারীদের গাড়ি ও পার্কিংলটগুলো গোলাপী রঙয়ের হবে বলে মন্তব্য করেছে। বহু নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরুষদের আক্রমণের জবাব দিয়েছেন।
সৌদি আরবের একটি দৈনিক পত্রিকা জানিয়েছে, ‘নারীদের ব্যঙ্গ করে ও তাদরে গাড়ি চালানোর দক্ষতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা ম্যাসেজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সয়লাব হয়ে গেছে।’ নারীদের পক্ষ থেকে সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরা গাড়ি চালাব এবং তোমাদের পুরুষদের চেয়েও ভাল চালাব। ‘রোড রোমিও’।
আপাতত যেসব নারীদের গাড়ি চালানোর বিদেশী লাইন্সেস রয়েছে তারাই মূলত গাড়ি চালাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নারী লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। তবে কতজনকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে তিনি তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে রক্ষণশীলতা ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে টানাপোড়েনের ডামাডোলে রাস্তায় নারীদের ওপর হয়রানী ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে অনেক নারী রাস্তায় নাও বের হতে পারেন।
দ্য ব্রো কোড অব সৌদি কালচারের লেখক আব্দুল আল-লিলি বলেন, ‘অনেক পুরুষ তার নারী আত্মীয়ের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। তারা আশঙ্কা করছেন পুরুষ চালকরা তাদের হয়রানী, পিছু নেয়া কিংবা ভিডিও করতে পারে।’ এক সৌদি নারী সাক্ষাৎকালে বলেন, তিনি ‘রোড রোমিওদের’ ভয়ে গাড়ি চালানোর পরিকল্পনাকে বাদ দিয়েছেন। কথা বলার ওজুহাত তৈরির জন্য তারা ইচ্ছেকৃতভাবে আমার গাড়ির সঙ্গে তাদের গাড়ি ধাক্কা দিতে পারে। বা আকস্মিক আমার গাড়ির সামনে এসে পড়তে পারে। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানায়, ডাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের জন্য নারীদের অভিভাবকের অনুমোদনের দরকার নেই।
বাংলাপ্রেস/এফএস