Home Uncategorized রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস জাতিসংঘ মহাসচিবের

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস জাতিসংঘ মহাসচিবের

by bnbanglapress
A+A-
Reset

বাংলাপ্রেস অনলাইন: রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশকে অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। একই সঙ্গে সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ বাড়াতে কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন তারা। রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করে দুই বৈশ্বিক সংস্থার প্রধানরা এ কথা বলেন। এ সময় তারা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মহানুভবতা দেখিয়েছে সেটির প্রশংসা করেন এবং এই ইস্যুতে বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে জানান। তারা এটাও বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা যেন উগ্রপন্থায় জড়িয়ে না পড়ে; এটাই তাদের মূল উদ্বেগের বিষয়। তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সৌজন্য সাক্ষাত হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাক্ষাতের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে দুই দিনের সফরে শনিবার রাতে ঢাকায় আসেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। আজ সোমবার তারা দুজনই কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। কক্সবাজারে যাওয়ার আগে রবিবার তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেয়ার একটি ছবি সাক্ষাতকালে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, সাক্ষাতকালে মিয়ানমারের আরাকান থেকে ১৯৭৭ সালে প্রথম রোহিঙ্গাদের পালিয়ে বাংলাদেশে আসার কথা এবং পরে ১৯৮২ ও ১৯৯১ সালের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে তাদের প্রবেশের কথা বৈঠকে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার যে চুক্তি করেছে, তা বাস্তবায়নে তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলে আসছে, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীরা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং এই প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, তা নিশ্চিত করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে মিয়ানমারকে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংগঠন ইউএনএইচসিআর।
প্রেস সচিব জানান, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাস্থ্যসহ সকল সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো বৈঠকে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, টেকনাফে এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় স্থানীয় জনগণেরও অসুবিধা হচ্ছে। উন্নত বাসস্থান সুবিধা দিতে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ সময় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় শেখ হাসিনা সরকারের প্রশংসা করেন গুতেরেস। শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের শিক্ষার ব্যবস্থা নিয়েও তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা যেন উগ্রপন্থায় জড়িয়ে না পড়ে; এটাই তাদের মূল উদ্বেগের বিষয়।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা চার লাখের মতো রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। গত বছর ২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে আরও প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। জাতিসংঘ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের এই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আসছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ রোহিঙ্গা সঙ্কটকে দেখা হচ্ছে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা অব্যাহত রাখায় আন্তনিও গুতেরেসের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শুধু মানবিক কারণে মিয়ানমারের এই বিপুল সংখ্যক নাগরিককে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম এ সময় উন্নয়ন ও মানবিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেন।
কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের আর্থ-সামাজিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে ৪৮ কোটি ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ এবার বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অংকের ঋণ পাচ্ছে জানিয়ে জিম ইয়ং কিম বলেন, এতেই প্রমাণ হয় যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে।
ইহসানুল করিম বলেন, সাক্ষাতকালে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পরও বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে তিনি বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার কথা বলবেন। আন্তনিও গুতেরেস ও জিম ইয়ং কিম দুজনই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। জঙ্গী নির্মূলে বাংলাদেশের কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন তারা।

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী