স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এখনও এই বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কী সব হচ্ছে, তা যে কেউ বিজয়নগরের স্কাউট ভবনে অবস্থিত জামুকা কার্যালয়ে গিয়ে দেখে আসতে পারেন! এই প্রচণ্ড শীতে সারা দেশ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ডেকে এনে যাচাই-বাছাইয়ের নামে যা চলছে তা বিস্ময়কর।
প্রায় অর্ধশত বছর পর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দল-উপদল সৃষ্টি হওয়ায় তাদের একদল অপর দলের বিরুদ্ধে দরখাস্ত করায় সেই দরখাস্ত আমলে নেয়ায় জামুকা কার্যালয়ে কীভাবে একদল অপর দলকে ঘায়েল করতে চাচ্ছে, কীভাবে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হচ্ছে- সেখানে গেলে সেসব প্রত্যক্ষ করা যাবে। আবার নতুনভাবে দরখাস্ত আহ্বান করায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্তি নিয়েও যা চলছে, সেসব ঘটনাও দেখার মতো। কিছুদিন আগে সেখানে গিয়ে এমন কিছু ঘটনাই দেখতে পাওয়া গেল।
একটি গ্রুপের ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধার নামে অপর একটি গ্রুপ অভিযোগ দাখিল করায় জামুকা কর্তৃক নোটিশ জারি করে উপরোক্ত ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকেই ডেকে পাঠালে তাদের এ বয়সে আবার নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়। অতঃপর একে একে সবার শুনানি শেষে এ গ্রুপের যিনি প্রধান তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে বললেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী, এভাবে অভিযোগের সুযোগ অবারিত রাখলে অনন্তকাল ধরে অভিযোগ আসতেই থাকবে।’
অতঃপর অপর গ্রুপের শুনানি শুরু হলে দেখা গেল অনেকেরই সাক্ষী-সাবুদ পরলোকে চলে গেছেন, কেউ কেউ ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন, আবার কেউবা ভারতের বাসিন্দা হয়েছেন। আর এসব সাক্ষাৎকার শুনানিতে যাদের পক্ষে হাইভোল্টেজ ব্যক্তিরা উপস্থিত আছেন, তাদের পক্ষের লোকদের অপর পক্ষকে দমন করে এগিয়ে থাকতে দেখা গেল। কারণ শুনানির আগে থেকেই মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে এসব হাইভোল্টেজ ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখা গেল এবং তারা শুনানিকে প্রভাবিতও করলেন।
যাক সে কথা। এখন প্রশ্ন হল, আর কতদিন কীভাবে এসব অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলতে থাকবে? আর কতকালই বা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জামুকা কর্তৃক এসব বৃদ্ধ ব্যক্তিকে ডেকে পাঠানো হবে। বিশেষ করে যেসব মুক্তিযোদ্ধার নাম লাল মুক্তিবার্তায় অন্তর্ভুক্ত, যেসব মুক্তিযোদ্ধাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত সনদ দেয়া হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত সনদ দেয়া হয়েছে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে যাদের নাম গেজেটভুক্ত করা হয়েছে এবং অতঃপর যারা মুক্তিযোদ্ধা ভাতাপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেসব মুক্তিযোদ্ধার নামেও কেউ যদি একটি কাগজে লিখে অভিযোগ দাখিল করেন, তবে সেক্ষেত্রে সেসব মুক্তিযোদ্ধাকেও ডেকে পাঠানোর অর্থ কী?
তাহলে এর অর্থ কি এই যে, উপরোক্ত শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ যদি কোনো কারণে উপরোক্ত যাচাই-বাছাইয়ে সাক্ষী সাবুদ নিয়ে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হন বা শারীরিক-মানসিক কারণে সেখানে উপস্থিত না হন, তাহলে তার লাল মুক্তিবার্তায় অন্তর্ভুক্তি থেকে গেজেট পর্যন্ত সবকিছু বাতিল হয়ে যাবে। কারণ একজন অসুস্থ বা বৃদ্ধ ব্যক্তিকে সাক্ষী-সাবুদ জোগাড় করে জামুকা কার্যালয়ে আসতেও তো অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়, অর্থকড়ি ব্যয় করতে হয়, না কি? মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় তো তাদের থাকা-খাওয়া-যাতায়াত ভাতা কোনো কিছুই বহন করে না।
এ অবস্থায় একজন অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে যদি সাক্ষী-সাবুদসহ নিজের যাতায়াত খরচ, থাকা-খাওয়ার সঙ্গতি না থাকে তাহলে কী হবে? তাছাড়া প্রায় অর্ধশত বছর পর অনেকের সঙ্গেই তো অনেকের শত্রুতা সৃষ্টি হতে পারে। আর্থিক-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবধানের কারণে আকাশ-পাতাল দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে, তাহলে সেক্ষেত্রে ওইসব মুক্তিযোদ্ধাই বা বৈরী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে সাক্ষী প্রদান করাবেন কীভাবে?
আবার নতুনভাবে দরখাস্ত গ্রহণ করে যেসব মুক্তিযোদ্ধার নাম নতুন করে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে, সেসব ক্ষেত্রেও যে সবকিছু ঠিকঠাক বা সঠিকভাবে করা হচ্ছে বা করা সম্ভব হচ্ছে, সে কথাও কি কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন? কিছুদিন আগে এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলার একজন অবসরপ্রাপ্ত আয়কর কমিশনার, যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে বলেছিলেন, ‘ভাই, নতুনভাবে তালিকাভুক্ত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখে অবাক হলাম। আমার এলাকার ওই ব্যক্তি কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, অথচ তার নাম নতুন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে!’
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে বর্তমান অবস্থায় যে প্রশ্নটি জাজ্বল্যমান তা হল, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তা আর কতদিন বা কতকাল ধরে চালানো হবে? আর ভবিষ্যতে যুগ যুগ ধরে এ কাজটি করলেও যে একটি সঠিক তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রণয়ন করতে পারবে, সে বিষয়টিও তো নিশ্চিত নয়।
কারণ কোনো কোনো অঞ্চল, কোনো হাইভোল্টেজ ব্যক্তির গ্রুপ সবসময়ই এ ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পেয়ে যাবে। যেমন জামুকার শুনানির সময় উপস্থিত থাকলে দেখা যাবে, কোনো কোনো অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একদম কোনো অভিযোগ নেই, কোনো এলাকায় অতি সামান্য কিছু অভিযোগ আছে, আবার কোনো কোনো জেলা বা এলাকায় পাহাড় সমান অভিযোগ।
এখন প্রশ্ন হল, যেসব এলাকায় অভিযোগ নেই বা অতিসামান্য অভিযোগ আছে, সেসব এলাকায়ও কি একটি নিখুঁত তালিকা প্রণীত হয়েছে? আসলে তো তা নয়। আসল কথা হল, যেসব জেলা বা এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে ভীষণভাবে হিংসা-বিদ্বেষে জড়িয়ে পড়েছেন, সেসব এলাকা থেকেই বেশি বেশি অভিযোগ এসেছে; আর সেসব এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভিড়ই জামুকা দফতরে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এ অবস্থায় এ কাজটি যত দ্রুত শেষ করে এসব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা যায়, সংশ্লিষ্ট সবার জন্য ততই মঙ্গল বলে মনে হয়। অন্যথায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দলাদলি, শত্রুতা বৃদ্ধিসহ একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে নতুনভাবে যাদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে তাদের নামেও অভিযোগ আসতে থাকবে। আর তখন পরিস্থিতি কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
এ অবস্থায় এ বিষয়ে এখনই ইতি না টানলে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর যা দেখা যাচ্ছে তাতে আরও ৪৮ বছরেও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের সমাপ্তি ঘটবে বলে মনে হয় না।
এতদসংক্রান্ত বিষয়ে আমার ফাইলে যেসব পেপার কাটিং আছে, সেসব থেকে কিছু উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। লেখালেখি করতে গেলে যেহেতু কিছু তথ্য-উপাত্ত সংবলিত প্রেস কাটিং রাখতে হয়, সেহেতু সেখান থেকে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরলেই দেখা যাবে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কীভাবে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী ও দুষ্টচক্রের অনুপ্রবেশ ঘটেছে :
১. ২৫ অক্টোবর ২০১৬ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক স্বপন দাশগুপ্ত ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা’ শিরোনামে লিখেছিলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা সমাপ্ত করার উদ্যোগ নেয়। কথা ছিল ওই সরকারের আমলেই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
২০১৪ সালে আবার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারিভাবে বলা হয়, এই তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের লাল বইকেই চূড়ান্ত বলে ধরে নেয়া হবে। এভাবে তালিকা প্রণীত হলেই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আর বিভ্রান্তির অবকাশ থাকবে না।’
কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে ২০০৯-২০১৪ এবং ২০১৪-২০১৮ মেয়াদেও তা সমাপ্ত করা হয়নি। কারণ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় হয়তো মনে করেছিল, এভাবে হাতের পাঁচ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। আর তাদের একটি কাজও তো দরকার। সে জন্যই হয়তো আজও এসব সুযোগ তারা হাতে রেখেছেন!
২. ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ যুগান্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এবং কলাম লেখক মহিউদ্দিন আহমদ ‘মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই নিয়ে কেন এই রঙ্গ-তামাশা’ শিরোনামে লিখেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক গত ২৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত ৯-৩৫ মিনিটে চ্যানেল আইতে প্রচারিত বিবিসি প্রবাহ অনুষ্ঠানে এই যাচাই-বাছাই একমাস চলবে, এমন একটি কথা বলেছেন।’ কিন্তু মন্ত্রীর সে কথার বাস্তবায়ন না দেখে অতঃপর তার প্রশ্ন ছিল- যাচাই-বাছাই রোজ হাশর পর্যন্ত চলবে কিনা?
এত গেল দু’জন মুক্তিযোদ্ধা, যাদের একজন সাংবাদিক এবং অপরজন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব, তাদের তথ্য সংবলিত দুটি লেখার কথা। অতঃপর আমি দৈনিক ইত্তেফাক ও যুগান্তরে প্রকাশিত কয়েকটি রিপোর্টের প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই :
১. ১৯.০২.১৭ তারিখের দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, ‘মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওয়ার্কার্স পার্টির’। পার্টির পলিটব্যুরোর সভায় এক প্রস্তাবে এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ‘এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। মুক্তিযোদ্ধা বাদ দেয়ার বদলে তার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।’
২. ২১.০২.১৭ তারিখের যুগান্তরের সংবাদটির শিরোনাম ছিল, ‘মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নিয়ে মন্ত্রীদের ক্ষোভ’। মন্ত্রিসভার কয়েকজন সিনিয়র সদস্য এ ধরনের যাচাই-বাছাইয়ের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয় সংসদে বিবৃতি প্রদানের পর যুগান্তর উপরোক্ত শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিল।
৩. ২৩.০৩.১৭ তারিখের যুগান্তরে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, ‘মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি, যাচাই-বাছাই একতরফা’। এ রিপোর্টটিতে বলা হয়েছিল, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অযথা হয়রানি ও অসদাচরণ চরমে উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে চলছে প্রহসন।’
৪. ২২.০৬.১৭ তারিখের দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘ঘুষ দিতে না পারায় তালিকায় নাম নেই বীরাঙ্গনার’। রিপোর্টে বলা হয়, ‘শহীদ জায়া বীরাঙ্গনা জয়ন্তী বালাকে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে দেয়া হয়েছিল দুই হাজার টাকাও। কিন্তু তিনি বীরাঙ্গনার স্বীকৃতির জন্য যেখানে গিয়েছেন, সেখানেই চাওয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।’
৫. ১৮.১২.১৯ তারিখের যুগান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, ‘জামুকার শুনানিতে শত শত মুক্তিযোদ্ধা, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা হয়রানির শিকার’।
সুধী পাঠক, আমার কাছে এতদসংক্রান্ত আরও পেপার কাটিং থাকলেও স্থানাভাবে তা উল্লেখ করা সম্ভব হল না। এ অবস্থায় পরিশেষে শুধু এটুকুই বলতে চাই- মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যা হচ্ছে, তা সঠিক কিনা? তবে তাদের এসব কাজকর্মে যেহেতু বাধা দেয়া হচ্ছে না বা বাধা প্রদানের কেউ নেই, তাই এখানে বলার কিছুই নেই।
আর সেক্ষেত্রে সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদের উক্তিটিই শিরোধার্য- ‘যাচাই-বাছাই রোজ হাশর পর্যন্ত চলবে’! আর এসব কর্মকাণ্ড চলারই কথা। কারণ নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্তিসহ পদের নাম লাল মুক্তিবার্তায়, যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সনদপ্রাপ্ত, মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে গেজেটভুক্ত, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাপ্রাপ্ত, তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে ওইসব সনদের অবমাননাসহ লাল মুক্তিবার্তার তালিকা পর্যন্ত ছুড়ে ফেলে দেয়ার মধ্যে এক ধরনের আনন্দানুভূতি আছে না!
বিশেষ করে তাদের এসব কাজকর্ম দেখভাল করার বা এসব কাজকর্মে বাধা দেয়ার যেহেতু কেউ নেই, সুতরাং এসব চলতেই থাকবে। কারণ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম দেখাশোনার কেউ থাকলে মুক্তিবার্তায় তালিকাভুক্তি এবং প্রধানমন্ত্রীর সনদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর সনদসহ মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদিত গেজেটধারী ভাতাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ডেকে এভাবে হয়রানি করা হতো না।
আর আবদুল হাই সেরনিয়াবাত, গোলাম আরিফ টিপু এবং ৯২ জন সংখ্যালঘু নারী-পুরুষের নামও রাজাকারের তালিকায় প্রকাশিত হতো না। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কী সব হচ্ছে সে বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকাকেই বোধহয় শ্রেয় বলে মনে করা হচ্ছে!
ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
বিপি।সিএস