বাংলাপ্রেস অনালাইন : গত কয়েক দশকে আমেরিকা বহুবার ইরানে সামরিক হামলার হুমকি দিয়েছে। জর্জ ডাব্লুউ বুশ সন্ত্রাসবাদ দমনের অজুহাতে ইরাক ও আফগানিস্তানে হামলা চালান। এরপর বহুবার তিনি ইরানে হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ইরানের প্রতিরক্ষা শক্তি অত্যন্ত মজবুত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট বুশ ইরানে হামলা চালানোর সাহস দেখাননি।
এরপর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার পথ খোলা রয়েছে বলে একাধিকবার হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে দেশটির শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি বন্ধের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন। সর্বশেষ ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক হুমকি দিচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার একদিন পর অর্থাৎ গত ৯মে হুমকি দিয়ে বলেছেন, “ইরানকে হয় আলোচনায় ফিরে আসতে হবে অথবা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে।” পরমাণু কর্মসূচি শুরু না করার জন্যও তিনি ইরানকে পরামর্শ দেন। তিনি হুমকি দেন ইরান যদি পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ না করে তাহলে তাদেরকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিলেও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের বক্তব্যে ভিন্ন সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, ইরানে হামলা চালানোর ক্ষমতা আমেরিকার নেই। আমেরিকা ইরানের পরমাণু স্থাপনায় বোমাবর্ষণের পরিকল্পনা করেছে বলে অস্ট্রেলিয়ার একটি গণমাধ্যম যে খবর দিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাকে ‘কল্পকাহিনী’ বলে উড়িয়েছে দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলও এ ধরণের খবর অস্বীকার করে একে কল্পনাপ্রসূত বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানে হামলার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, ইরানের যুদ্ধ সক্ষমতা সম্পর্কে তারা ভালোভাবেই অবহিত আছে। মার্কিন কর্মকর্তারা এটাও জানেন ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে মার্কিন বাহিনী চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
সম্প্রতি ইরান ও আমেরিকার কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও বাকবিতন্ডা শুরু হয়েছে। ইরানের তেল বিক্রির পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে হুমকি দিয়েছেন তার জবাবে প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, ট্রাম্পের এটা জেনে রাখা উচিত ইরান দীর্ঘকাল ধরে এ অঞ্চলের পানিপথের নিরাপত্তা দিয়ে এসেছে। প্রেসিডেন্ট রুহানি ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “সিংহের লেজ নিয়ে খেলবেন না কারণ ইরানের জবাবে আপনাদের অনুতপ্ত হতে হবে।” এর জবাবে ট্রাম্পও রুহানিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “আমেরিকাকে কখনো হুমকি দেবেন না এবং ইরানের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হবে ইতিহাসে যার নজির খুব কম।”
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এসব হুমকি ঠাট্টার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এমনকি ডেমোক্রেট দলের বহু নেতা এর সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্পের হুমকির জবাবে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র কুদস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সুলাইমানি বলেছেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলে আমেরিকার পতন অনিবার্য। আমেরিকা যুদ্ধ শুরু করলে এর সমাপ্তিটা কেমন হবে তা আমরাই নির্ধারণ করব। যাইহোক, ইরানের কর্মকর্তাদের পাল্টা হুমকি ও শক্ত অবস্থানের কারণে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বীকার বলেছেন, ইরানে হামলা চালানোর কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
বাংলাপ্রেস/আর এল