নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি: যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় শুরু হয়েছে ‘বিকৃত’ ফোবানা সম্মেলন। বাংলা সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে ৩১ বছর আগে যে ফোবানা সম্মেলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই ঐতিহ্য আজ বিলীন হতে চলেছে।বাংলাদেশ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব জর্জিয়ার আয়োজনে গত শুক্রবার দেড় ঘন্টা বিলম্বে আটলান্টার ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সেন্টারে তিন দিনব্যাপী ফোবানার ৩২ তম আসর শুরু হয়। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ইংরেজি ভাষনের মধ্য দিয়ে ফোবানা সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয় বলে জানা গেছে।
গত বছর ফ্লোরিডার মায়ামিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশিদের ফোবানা সম্মেলনেও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং ফোবানা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান বাংলার বদলে ইংরেজি ভাষন দেওয়ায় ঐ সময়ে তারা দু’জনেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। এবারে আটলান্টায় ফোবানা সম্মলনের আয়োজক কমিটির অব্যবস্থাপনার কারনে প্রথম দিনেই (গত শুক্রবার) খাবার সংকটে পড়েন শত শত প্রবাসী দর্শক-শ্রোতা। ফোবানায় আগত দর্শক-শ্রোতারা নিজেদের অর্থে খাবার কিনে খান, কিন্তু আবাসিক হোটেল কিংবা আশেপাশে রাতের খাবারের সুষ্ঠ বন্দোবস্ত না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন অনেক দর্শক-শ্রোতা। এজন্য আয়োজক কমিটির অব্যবস্থাপনাকেই অনেকেই দায়ী করেছেন। শুধু তাই নয় আটলান্টা ফোবানা সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা আমন্ত্রিত সংবাদকর্মিদের কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না কমিটির কর্মকর্তারা। সংবাদকর্মিদের নির্দিষ্ট কোন বসার স্থানও নেই। আমন্ত্রিতরা নিজেদের অর্থে খাবার কিনে খাচ্ছেন অনেকেই। যা আমন্ত্রিত সংবাদকর্মিদের অত্যন্ত জন্য লজ্জাকর বলে উল্লেখ করেছেন অনেকেই। তবে অভিযোগ উঠেছে সম্মেলনে অংশগ্রহন ও সহযোগী শিল্পী (বাদ্যযন্ত্রী)হিসেবে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ থেকে আদম আমদানি করা হয়েছে। আদম আমদানির লক্ষ্যেই ফোবানা কর্মকর্তারা প্রতিবছরই সম্মেলনের একমাস আগে ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন। মূলত ঢাকায় অনুষ্ঠিত উক্ত সংবাদ সম্মেলনকে ‘আদম সংগ্রহ অভিযান’ বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে কোন দর্শক-শ্রোতা ফোবানা সম্মেলন দেখতে আসেন না। তাহলে ঢাকায় গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কারন কি? এ বিষয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
শুক্রবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিরা উপস্থিত থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের দেড় ঘন্টা বিলম্বে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ফোবানার মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় সাড়ে আটটায়।যা বিদেশি অতিথিদের কাছে দৃষ্টিকটুও বটে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ছিলেন জর্জিয়া অঙ্গরজ্যের ৭ নম্বর কংগ্রেশনাল ডিষ্ট্রিক্ট (গুনেট ও সাউথ সাইট কাউন্টি) এর কংগ্রেসম্যান রব উডাল।
বাংলাদেশ, আমেরিকা ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধান অতিথি ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ও কংগ্রেসম্যান রব উডল ফিতা কেটে তিন দিনের এ সম্মেলনের সূচনা করেন। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় ও মূল ধারার রাজনীতিবিদেরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
ফোবানার মূল কমিটির পরিচয়ের পর অতিথিসহ সকলকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, সদস্য সচিব নাহিদুল খান সাহেল, হোস্ট প্রেসিডেন্ট ডিউক খান, চিফ কোঅর্ডিনেটর এম মাওলা দিলু, ফোবানা কমিটির চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, মেম্বার সেক্রেটারি শাহ হালিম ও নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি মোসাদ্দেক সাকিব খান।
ফোবানার পক্ষ থেকে বিশেষ অতিথি কংগ্রেসম্যান রব উডালকে ফোবানার ক্রেস্ট প্রদান করেন আহবায়ক, সদস্য সচিব ও রাষ্ট্রদূত যথাক্রমে জসিম উদ্দিন, নাহিদুল খান সাহেল ও মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন।
ছোট শিশুদের নাচ-গান এর মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গান ফোবানাকে এক টুকরো বাংলাদেশে পরিণত করে। রাত ১০টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলে নাচ-গান।
রাত একটায় মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় গায়ক তপন চৌধুরী।তিনি এক নাগাড়ে দেড় ঘণ্টা বাংলাদেশের জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করেন। ছিল স্থানীয় ও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আসা শিল্পীদের পরিবেশনা।
যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় শুরু হয়েছে ‘বিকৃত’ ফোবানা সম্মেলন!
364