দেশভাগের প্রেক্ষাপটে কলকাতায় নির্মিত হচ্ছে সিনেমা ‘মাটি’। যার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন পাওলি দাম। তার বিপরীতে আছেন বলিউড অভিনেতা আদিল হুসেন। যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন লীনা গাঙ্গুলি ও পরিচালক শৈবাল ব্যানার্জি।
সিনেমাটির কিছু অংশের শুটিং হয়েছে বাংলাদেশে। ওই সময়ের স্মৃতি নিয়ে কলকাতার এই সময় পত্রিকায় লিখলেন পাওলি। সেখানে এক পর্যায়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ কথাটা শুনেই মন নেচে উঠলো আনন্দে।’
তিনি লেখেন, ‘অনেক বছর উজিয়ে একদিন লীনাদির (গঙ্গোপাধ্যায়) ফোন- চিনতে পারছো? তোমাকে একটা চরিত্রে ভাবছি৷ লীনাদির সঙ্গেই টেলিভিশনে শেষ কাজ করেছি৷ এতদিন পরে চেনা মানুষের গলা… যেন জন্মের ওপারের কথা৷ স্মৃতির ঝাঁপি খুলে গেলো, হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তরা সামনে এসে দাঁড়ালো৷ তখন মুম্বাই ছিলাম৷ বললাম, এই সন্তাহেই যাচ্ছি৷ লীনাদি বললেন, আউটডোর আছে কিন্তু৷ বাংলাদেশ৷
বাংলাদেশ কথাটা শুনেই মন নেচে উঠলো আনন্দে৷ কাজে এবং বেড়াতে পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি৷ বাংলাদেশেও বহুবার গিয়েছি৷ কিন্তু তবু বাংলাদেশে যাওয়ার প্রস্তাব এলেই আলাদা একটা অনুভূতি হয়৷ নদী-ধান-মাঠ-সারি সারি রুপোলি ইলিশ-নৌকা- সব যেন চোখের সামনে সিনেমার এক-একটা শটের মতো ভেসে যায়৷’
বাংলাদেশে শুটিং প্রসঙ্গে লেখেন, ‘সেদিন শুটিং ছিল এক গহীন গাঁয়ের নদীর পাড়ে৷ টাঙ্গাইলের কাছে- চারপাশ নিঃস্তব্ধ শুনশান৷ অনেক দূর থেকে কাঁসর ঘণ্টার আওয়াজ ভেসে আসছিল৷ কোনও মন্দিরে পুজো হচ্ছিল হয়তো৷ নৌকার দৃশ্য ছিল৷ শেষ হলো৷ এরপর কস্টিউম চেঞ্জ৷ অন্য একটা দৃশ্য আছে৷ ওই নির্জন গাঁয়ে কোনও ঘর বাড়িরও চিহ্ন নেই৷ অগত্যা নদী পাহারা দেয় যারা, নদীর পাশেই তাদের একটা খোড়ো ঘরে আমি আর আমার হেয়ার ড্রেসার৷ হঠাত্ কয়েকশো লোকের গলার আওয়াজ৷ দরজা দুমদাম ধাক্কাচ্ছে৷ ইউনিটের সবাই অনেকটা দূরে৷
আমার চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু এই জনস্রোত কী চায়! আমি তখন ভয়ে ঠকঠক কাঁপছি৷ আমার হেয়ার ড্রেসার দরজা খুলল৷ স্রোতের মতো নানা বয়সের লোক ঢুকে যাচ্ছে ঘরের ভেতর৷ সবাই মিলে কথা বলছে৷ অনেক কষ্টে উদ্ধার করলাম তারা বলছে, ‘’আমাদের এইখানে কুনোদিন শুটিং হয় নাই৷ তুমি আসছো আজ আমগো গাঁয়ে৷ তোমার নিমন্ত্রণ৷ দাওয়াত দিতে আসছি৷ চলো আমাগো লগে৷”