বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৪০০-২০০০ বছর পূর্বে এই অঞ্চলের পুণ্ড্রনগর, পাহাড়পুর, ময়নামতি বৌদ্ধমঠ গুলোতে উচ্চশিক্ষার প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায়। কালের বিস্তারে দেশজুড়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তেমনি উচ্চশিক্ষার দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)।
২০০৫ সালের অক্টোবর থেকে মহাবিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে কার্যক্রম শুরু করে জবি। সেবছর ২০ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর তালিকাভুক্ত হয় এটি। তবে এর আগে প্রতিষ্ঠানটির পথ চলা ১৪৬ বছরের। দীর্ঘ সময়ে পাঠশালা থেকে পরিণত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা ইতিহাসে বিরল।
পুরান ঢাকার চিত্তরঞ্জন এভিনিউয়ে অবস্থিত জগন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ৭ একরের ছোটো ক্যাম্পাসটি। ৬ টি অনুষদে ৩৬ টি ডিপার্টমেন্ট ও ২টি ইন্সটিটিউটে বর্তমানে প্রায় ১৭১৩৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত।
এখন পর্যন্ত ১৪ টি ব্যাচের শিক্ষার্থী এই বিদ্যাপীঠ থেকে বের হয়ে সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য সবচেয়ে বেশি লক্ষনীয় বিসিএস, পুলিশের এস আই ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটে। যা অন্যদের জন্য একেবারে ঈর্ষান্বিত ব্যাপার।
এতোদিন সম্পূর্ণ অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি থাকলেও, এই বছরই অর্থাৎ ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর, ১৫ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে, উদ্বধোন হতে যাচ্ছে একমাত্র আবাসিক ছাত্রী হল “বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল “। যা ছাত্রীদের জন্য খুবই আনন্দের সংবাদ।
বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে হয়তো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের আয়তন অনেক বিশাল না, আর পাচঁটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। কিন্তুু শুধু এর লেখাপড়াই নয় বরং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমের পরিসর ও ব্যপকতা অকল্পনীয়। নাচ, গান, আবৃত্তি, বিতর্ক,নবীন বরন কিংবা অন্য যেকোন অনুষ্ঠানে রয়েছে প্রচুর সাফল্য এই বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীদের।
এখানে রয়েছে কেন্দ্রিয় পাঠাগার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। পাশাপাশি রয়েছে প্রতিটি দরকারি ডিপার্টমেন্ট এ প্রয়োজনীয় ল্যাব রুম, সেমিনার রুম। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ফ্রি ওয়াই ফাই এর ব্যবস্থা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে নজরকাড়া ঐতিহ্যবাহী নকশায় তৈরি প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষা ও গবেষনা ইনস্টিটিউট (আই ই আর) এর অফিস ভবন।
আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত একজন নবীন শিক্ষার্থী। প্রতিবার “বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে” আয়োজিত নানা অনু্ষ্ঠান সম্পর্কে আমার ব্যাপক আগ্রহ ছিলো। বিশেষ করে যখন আমি নিজেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার সুযোগ পেলাম তারপর, থেকে এই দিবসটিকে ঘিরে আলাদা কিছু ভালোলাগা হৃদয়ের কোণে জমা হতে লাগলো।
আশা করেছিলাম এই বার ও প্রতিবারের ন্যায় “বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটিকে “স্মরনীয় করে রাখার জন্য আমার মতো হাজারো নবীনরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে অনুষ্ঠানকে নতুন এক মাএা দিবে। কিন্তু সেটা আর হলো কই। এই বছর সেটা হচ্ছে না প্রাণঘাতী “করোনা” ভাইরাসের কারনে।
তবে কথায় বলে না যে, “যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ”। সেই অনুযায়ী এইবার ও নানা প্রোগ্রাম এর আয়োজন করতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দিবসে। কিন্তুু অনুষ্ঠান গুলো এইবার আর স্বশরীরে ক্যাম্পাসে গিয়ে উপভোগ করার সুযোগ না থাকলেও হতাশ হবার কিছুই নেই কারন, অনলাইন মাধ্যমে তো উপভোগ করাই যাবে।
তবে মনে দুঃখ পোষন করে রাখছিনা কেননা আমি আশাবাদী যে, আগামী বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তখন আবার নতুন উদ্যোগে বর্নিলভাবে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে তার ১৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানাবো নানা বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
আমি গর্বিত যে, আমি “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়” এর মতে এমন একটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী হতে পেরে। আমি গর্বিত এমন কিছু মহান কারিগর এর সান্নিধ্য পেয়ে। আমি সর্বদাই এ আশাই ব্যক্ত করবো যে,”জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ” যেন তার আপন গতিতে পথ চলতে চলতে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে আরো সুদীর্ঘ করে যেন সামনে এগিয়ে যেতে পারে।
“জয়তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়”
সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি
আই ই আর
১৫তম আবর্তন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়