Home প্রবাস টক অব দ্য আমেরিকা: বাংলাদেশি লম্পট চিকিৎসক ফেরদৌসের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

টক অব দ্য আমেরিকা: বাংলাদেশি লম্পট চিকিৎসক ফেরদৌসের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

by bnbanglapress
A+A-
Reset

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় এক বছর আগে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি সেই লম্পট চিকিৎসক ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে অবশেষে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন পাঁচজন নারী। গত শুক্রবার (১৩ আগষ্ট) নিউ ইয়র্কের কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে এ মামলাটি দায়ের করেন ফেরদৌস খন্দকারের লাম্পট্যের শিকার ৫ নারী। এদের মধ্যে ৪ জনই বাংলাদেশি, যারা জ্যাকসন হাইটসে বসবাস করছেন।
আদালতে দায়েরকৃত একটি ক্লাস-অ্যাকশন মামলা থেকে জানা যায়, ফেরদৌস খন্দকার বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার নামে রোগীদের যৌন নির্যাতন করেছেন। তিনি ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়েদেরকে অযৌক্তিক স্তন পরীক্ষার নামে শ্লীলতাহানি করেছেন। নারী রোগিদের পরীক্ষার নামে শ্লীলতাহানির ঘটনা প্রায় বিশ বছর ধরে চালিয়ে আসছেন।
বাদীরা অভিযোগ করেন যে, ফেরদৌস খন্দকার কয়েক দশক ধরে চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রচেষ্টায় কয়েক ডজন নারী ও তরুণীকে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি করেছেন। দুই দশক ব্যাপী এ ঘটনাগুলিতে তিনি অকারণে তাদের স্তন স্পর্শ করেছিল। এমনকি যখন তারা গলা ব্যাথার মতো লক্ষণগুলির জন্য নিয়মিত তার কাছে যেতেন। কিছু ক্ষেত্রে তিনি তাদের আংশিক কাপড় খুলতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এজন্য ফেরদৌস খন্দকারকে ‘একজন সিরিয়াল যৌন শিকারী’ বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন।
ফেরদৌস খন্দকারের এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনা প্রকাশ করায় ফেরদৌস খন্দকার তিনজনের বিরুদ্ধে ১০ লাখ ডলারের মানহানির মামলা করেছিলেন। সাম্প্রতি আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন এবং বিবাদির আইনজীবীর পারিশ্রমিক পরিশোধ করার জন্য ফেরদৌস খন্দকারকে নির্দেশ দেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগীদের  আইনজীবী সুসান ক্রুমিলার।
এ মামলা প্রসেঙ্গে আইনজীবী সুসান ক্রুমিলার বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে ফেরদৌস খন্দকার তার এ কর্মকান্ডের জন্য সারা জীবন অনুশোচনা করবেন, কারণ তার মতো লোকের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য বিশেষ সাহস দরকার। তিনি মনে করেছিলেন মানহানি মামলা করলে হয়রানির শিকার নারীদের চুপ করে দেওয়া হবে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। অবমাননার শিকার নারীরা এখন এগিয়ে এসেছেন। তার কতটা চমকপ্রদভাবে বিপরীতমুখী হয়েছে তা তিনি ভাবতেও পারেননি। এ মমলার পর ফেরদৌস খন্দকার ও তার অ্যাটর্নি কারো কাছে থেকেই কনো মন্তব্যে পাওয়া যায়নি।

মানহানির মামলায় আইনি নথিতে ফেরদৌস খন্দকার বলেছিলেন যে তিনি তার রোগীদের যৌন নিপীড়ন করেন না এমনকি তিনি কখনও কাউকে শ্লীলতাহানি করেননি। তিনি যে কারণে রোগী দেখছেন এর বাইরে প্রয়োজন ছাড়া ‘স্তন’ পরীক্ষাও করেননি। তার মানহানির দাবি খারিজ করে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।

ভুক্তভোগী পাঁচ নারীর আইনজীবী সুসান ক্রুমিলার । ছবি: এমএস ম্যাগাজিন

সুসান বলেন, ‘আমার কল্পনার বাইরে ‘ ক্লাস-অ্যাকশন মামলাটিতে ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের বিবরণ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সেখানে তারা বলেন, যখন তাদের বয়স ১৪ থেকে ২৩ বছর ছিল।এক মহিলা তার মায়ের সাথে জ্যাকসন হাইটসের ৩৭তম এভিনিউতে ফেরদৌস খন্দকারের অফিসে যাওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। অফিসে থাকাকালীন ২৩ বছর বয়সী মহিলাটি ফেরদৌস খন্দকারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি কি তাকে ‘নিয়মিত রক্ত ​​পরীক্ষা’ দিতে পারেন?

তিনি তাকে একটি পরীক্ষা কক্ষে নিয়ে যান। ফেরদৌস তাকে বলেন যে পরীক্ষার আগে একটি চেক-আপ করা দরকার। এসময় তিনি মহিলার শার্টটি টেনে তোলার চেষ্টা করলে তিনি তা জোর দিয়ে প্রতিরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত তার শার্টটি তার ঘাড় পর্যন্ত টেনে আনলেন। তারপরে তিনি তার স্টেথোস্কোপটি তার ব্রার নিচে রেখেছিলেন। এসময় ফেরদৌস প্যাডিং এবং টাইটনেস সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন ফেরদৌস তার বুকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন এবং আঙ্গুল দিয়ে তার স্তনবৃন্ত স্পর্শ করেন। তাকে খুব অস্বস্তিতে ফেলেছিল। এটি তার কল্পনার বাইরে ছিল। মহিলা ফেরদৌসকে আরো জোরে ধাক্কা দেন। তখনই সে বুঝতে পারলো তিনি এ আচরণে খুশি নই। তিনি বলেন, এসময় তিনি ভয়ে কাঁপতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। তার মাকে নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তার মাকে পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন। এরপর থেকে তিনি ফেরদৌস খন্দকারের সাথে আর কখনো মুখোমুখি না হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। সেদিনের পর থেকে সে তার ফেসবুক পেজে কথিত ঘটনা সম্পর্কে পোস্ট করেন। এটি একটি ফেসবুক বন্ধুর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে পোস্টটি লেখা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন ‘শিক্ষা আসলেই মানুষকে শিক্ষিত করে না বা অন্য উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিই হবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সভ্য মানুষ।এর কয়েকদিন পর ‘আমার এক বন্ধু সকালে নিয়মিত চেকআপের জন্য গিয়েছিল এবং ফেরদৌস তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিল। তিনি খুব মর্মাহত ছিলেন যে, তিনি তখনই পদক্ষেপ নিতে পারেননি। আপনার ডাক্তার যদি আপনার সাথে এটি করেন তবে এটি খুবই অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য।

পরবর্তীতে ওই পোস্টটি ক্রমবর্ধমান মনোযোগ আকর্ষণ করে। অন্যরা অনুরূপ অ্যাকাউন্টের প্রস্তাব দিয়ে মহিলাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি বলেন গত বছর জুন মাসে মহিলারা তার অভিযোগ এবং অন্যদের বেনামী গল্পগুলি তার সোশ্যাল মিডিয়ায় পুনরায় পোস্ট করেছিলেন।

তারা একটি চেঞ্জ ডট অর্গ (change.org) পিটিশন প্রচার করেছে যাতে খন্দকারের মেডিকেল লাইসেন্স বাতিল চাওয়া হয়েছিল। এতে সাড়ে ৪ হাজারেরো বেশি ব্যক্তি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। যা পরে ওয়েবসাইট থেকে সরানো হয়েছে।

সুসান ক্রুমিলারের আইনজীবীদল। ছবি: এমএস ম্যাগাজিন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনা প্রকাশ করায় ফেরদৌস খন্দকার তিনজনের বিরুদ্ধে ১০ লাখ ডলারের মানহানির মামলা করেছিলেন। সাম্প্রতি আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন এবং বিবাদির আইনজীবীর পারিশ্রমিক পরিশোধ করার জন্য ফেরদৌস খন্দকারকে নির্দেশ দেন। মামলাটি দেখে ভুক্তভোগী ওই নারী হতবাক হয়েছিলেন যে ফেরদৌস তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলা দেখার পরে আমি এক ধরনের দুর্বল ছিলাম এবং তিনি আমাকে দুর্বল বোধ করতে চেয়েছিলেন, তাই আমি আর যুদ্ধ করব না, কিন্তু তা হতে যাচ্ছে না। কুইন্সে চিকিৎসা চর্চা করার পাশাপাশি ফেরদৌস খন্দকার নিয়মিতভাবে তার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও পোস্ট করেন যেখানে তিনি নিজেকে একজন ‘বিখ্যাত’ চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ হিসাবে বর্ণনা করেন যা সম্পুর্ণ অযৌক্তিক।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিউ ইয়র্ক প্রবাসী আওয়ামীলীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞের দাবিদার ও নামধারী ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার সকল প্রকার রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। নারী রোগীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ইউটিউব এবং ফেসবুক খুললেই দেখা যায় তার বিভিন্ন ধরনের ভিডিও রয়েছে সেখানে। কি নাই তার ভিডিওতে? যৌন চিকিৎসা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক করোনা চিকিৎসায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসার নামে ভিডিও বানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে হিরো বনে যান রাতারাতি। বাংলাদেশে কভিড-১৯ চিকিৎসায় ফ্রন্ট ফাইটার হবার জন্য দেশে গিয়ে ধরা খান। দুই সপ্তাহ গোয়েন্দা নজরদারিতে থেকে নিউ ইয়র্কে ফিরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্য্যালয়ের পদত্যাগী ডিপুটি প্রেস সেক্রেটারি তার জন্যে স্বাস্থ্য পরিচালক পদ সৃস্টি করে দেবার লোভ দেখিয়ে তাকে দেশে নিয়ে যান।
তিনি সামান্য প্রাইমারি কেয়ার চিকিৎসক হয়ে নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে জাহির করেন এবং ইতিমধ্যেই কমিউনিটিতে একজন প্রতারক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী এই ফেরদৌস খন্দকার যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশে তার জামাত-শিবির সংশ্লিষ্টতা ঢাকতে চেয়ে এক সময় অর্থের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বনে যান। সম্প্রতি শেখ রাসেলের নামে আরেক সংগঠন খুলে বসেন। ফেরদৌস খন্দকার সভাপতি আর আল আমিন বাবু হলেন এ সংগঠনের সাধারন সম্পাদক। বাংলাদেশি লম্পট চিকিৎসক ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়েরের খবর প্রবাসীদের মাঝে ছড়িয়ে পরায় সর্বত্রই আলোচনার ঝড় বইছে।

বিপি।এসএম

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী