সুলতানা মাসুমা, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ বিশ্বের অনেক বড় বড় শহর সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদী সমুদ্র কে কেন্দ্র করে। পর্যটন শিল্প বর্তমানে অনেক দেশকেই করে তুলেছে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। খোলা আকাশ, পাহাড়, নদী বা সমুদ্র, সবুজের সমারোহ ব্যস্ত শহরের নিঃসঙ্গ মানুষের মনে এনে দেয় প্রশান্তির পরশ।
তাছাড়া পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় বেকারত্ব দূরীভূত হয়। উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে রয়েছে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা। লক্ষ্মীপুর জেলায় একাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে এই মেঘনা নদীকে ঘিরে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চর আব্দুল্লাহ, মেঘার চর, আলেকজান্ডার, আলতাফ মাষ্টার ঘাট , মজু চৌধুরীর হাট,। জেলের মুখের হাসি এই মেঘনার রুপালী ইলিশ। আর মহিষের দই লক্ষীপুরের আরেক ঐতিহ্য।
এই মেঘনার করালগ্রাসে কত ঘরগ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। লক্ষীপুর বাসীর দুঃখ যেন এই মেঘনা। কিন্তু পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মেঘনাও একদিন হতে পারে দেশের অর্থনৈতিক আয়ের একটি মাধ্যম। ক্লান্তি, অলস সময় ও নাগরিক কর্মব্যস্ত জীবনে হাঁপিয়ে অনেকেই প্রশান্তির ছোঁয়া খোঁজেন। তাই ছুটিতে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেলে মন্দ হয় না। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় মনোরম দৃশ্যমাখা গ্রামীণ পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে আলতাফ মাষ্টারের ঘাট এলাকায় মিনি কক্সবাজার।আমিও সেদিন ঘুরতে চলে গেলাম লক্ষ্মীপুর জেলার আলতাফ মাষ্টার ঘাট বা মিনি কক্সবাজারে। এখানে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা থাকে সবসময়।এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ভিড় থাকে সবসময়। মিনি কক্সবাজার মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত।
এখানে নদীর কলতান,পাখির গান, জোয়ার ভাটার অপরূপ দৃশ্য, নৌকা পারিদিয়ে দূর বহু দূরে হারিয়ে যাওয়া। এরপর নদীর মাঝখানে চরে গিয়ে পৌঁছানো যেন প্রকৃতির সঙ্গে একেবারে মিশে যাওয়া। সূর্যাস্ত স্বচক্ষে দেখার আনন্দ। এরপর আবার জোয়ারের পানিতে এতক্ষণ হেঁটে বেড়ানো চরের ডুবে যাওয়া দেখতে দেখতে প্রকৃতির সঙ্গে যেন একা কার হয়ে মিশে যাওয়া। যখন ফিরে আসছি লাম সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে গাছগুলোতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ আমাকে নিয়ে গিয়েছিল কোন অজানার দেশে।
এখানে বেড়াতে আসার সবচেয়ে ভালো সময় শীতকাল। কেননা অন্য কোন মৌসুমে এখানকার পরিবেশ অতটা ভালো থাকেনা। দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য ফ্রী। মেঘনা নদীর তীরে বসে প্রিয়জনদের কে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। এখানে এখনো কোন আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে বনভোজনের জন্য তাবু টাঙ্গিয়ে মিনি কক্সবাজারে অবস্থান করতে পারেন।
লক্ষীপুরের আলতাফ মাস্টারের মাছ ঘাটে সিএনজি মাইক্রোবাস, কারে করে সেখানে যেতে পারেন। সেখানে রয়েছে আকর্ষণীয় খাওয়ার হোটেল ও ফ্রিতে বসার জায়গা,নাগরদোলা। সরকারি অথবা বেসরকারি সঠিক উদ্যোগে মিনি কক্সবাজার হয়ে যেতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র। লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলে সরকারি অথবা বেসরকারি কোন রিসোর্ট নেই তাই আলতাফ মাষ্টারের মাছঘাট মেঘনার অববাহিকা মিনি কক্সবাজার এই স্থানটিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একটু সুদৃষ্টি দিলে এ অঞ্চলের উপকূলের বঞ্চিত মানুষগুলোও কিছু সুবিধা পাবে ও বেকারত্ব দূরীভুত হবে।
উপকূলীয় অঞ্চলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিকে সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে হয়ে যেতে পারে নিদারুণ রিসোর্ট। উপকূলের প্রাকৃতিক নিদর্শন রিসোর্টে রূপদান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মেঘনার পাড়ের অবহেলিত লোকজন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে।
বিপি/আর এল