গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় সবগুলো নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো বিপৎসীমার উপরে রয়েছে ঘাঘট নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, বন্যায় এ পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের ২১ হাজার ৮৩৪ পরিবারের ৬১ হাজার ৫১৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সাঘাটা উপজেলায়, ৩৫ হাজার ৪০ জন। ৬০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ১৮টিতে এক হাজার ৯২০ জন মানুষ ও ৩৩৫টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। গঠন করা ২৯টি মেডিকেল টিমের মধ্যে চালু আছে ১০টি টিম। বন্যাকবলিত চার উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬০৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২২ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, গো-খাদ্যের জন্য ৩৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৬ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গো-খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৬ লাখ টাকা ও ১৫৫ প্যাকেট শুকনা খাবার। বরাদ্দ করা ত্রাণ ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণের কাজ চলমান রয়েছে। তবে বরাদ্দ দেওয়া নগদ টাকায় শুকনা খাবার, তাঁবু, পলিথিনসহ অন্যান্য উপকরণ কিনে দেওয়া হয় বন্যার্তদের মধ্যে। বন্যায় নারীরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর সংকটে ভুগছেন।
এসব বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এস. এম.ফয়েজ উদ্দিন বলেন, দিন দিন পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন। বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে। আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় আনসার-ভিডিপি সদস্য, গ্রামপুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক এবং এনজিও
প্রতিনিধিরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে।
বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছে দুই হাজার ১৫১ হেক্টর ফসলি জমি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য প্রকল্প ও খামার। বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় বন্যাকবলিত চার উপজেলার ১১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা
হয়েছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধির কারণে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে শুরু হয়ে সদর ও ফুলছড়ি হয়ে সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের
বেশ কয়েকটি পয়েন্ট। এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এই বাঁধটির ১৪.০৯ কিলোমিটার অংশ মেরামত করতে হবে। ফলে মানুষজন ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে।
এদিকে ৩৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা, যমুনা, ঘাঘট, আলাই, করতোয়া, কাটাখালী, বাঙ্গালী, আখিরা, মানাস ও নলেয়া নদীর মধ্যে বাঁধ নির্মিত আছে মাত্র ২৩৯.২৫ কিলোমিটার অংশের। ফলে প্রতি বছর বর্ষাকাল ও বন্যা এলেই বড়
নদ-নদীগুলো থেকে পানি এসে এসব শাখা নদীতেও পানি বেড়ে যায়। ফলে নদীগুলোর সম্পুর্ণ বাঁধ না থাকায় লোকালয়ে, বিলে পানি প্রবেশ করে ও আমনের বীজতলাসহ সবজি ও বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
অনেকে ঋণ নিয়ে ফসল ফলান। এতে করে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন কৃষকরা। কিন্তু এসব নদীর বাঁধ নির্মাণের চেয়ে খননের দিকেই বেশি ঝোঁক পানি উন্নয়ন বোর্ডের। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে
প্রবাহিত হয়েছে। তবে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ও করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বুধবার বিকেল ৩টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত হিসেব করে দেখা গেছে, সবগুলো নদ-নদীর পানিই কমেছে।
বিপি/কেজে