নোমান সাবিত: যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের বয়স নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা। প্রকাশ্যে এসব ঘটনা ঘটনার পর অনেকে বলছেন, বয়সের কারণে এসব রাজনীতিকের দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যে সক্ষমতা প্রয়োজন, তা নেই। বেশির ভাগ আমেরিকানই আর চান না প্রবীণ এই ব্যক্তিরাই নতুন করে দেশ পরিচালনার নেতৃত্বে আসুন।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককনেল চলতি সপ্তাহে কংগ্রেসে বক্তৃতা করছিলেন। এ সময় তিনি তোতলাতে শুরু করেন। কথাও বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সংবিৎ ফেরে তাঁর। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেও দুবার হোঁচট খেতে দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতারা যে বিশ্বের বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক দেশের নেতাদের চেয়ে ‘বুড়িয়ে’ গেছেন, বাইডেনের হোঁচট আর ম্যাককলেনের তোতলানোর ঘটনা তারই উদাহরণ।
জো বাইডেনের বয়স এখন ৮০ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের এযাবৎকালের সবচেয়ে প্রবীণ প্রেসিডেন্ট তিনি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের গড় বয়সের (৬২) চেয়ে জো বাইডেনের বয়স ১৮ বছর বেশি।
বাইডেনের চেয়েও প্রবীণ রাষ্ট্রপ্রধান আছেন। তিনি আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট পল বিয়া। তাঁর বয়স ৮৯ বছর। পল বিয়া বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ রাষ্ট্রপ্রধান। তবে মজার বিষয় হলো, বাইডেন সবচেয়ে প্রবীণ রাষ্ট্রপ্রধান না হলেও চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বরিচ (৩৭) বা সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া সানা ম্যারিনের (৩৭) ‘দাদুর বয়সী’ তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রবীণ প্রেসিডেন্ট হলেও কংগ্রেসের কিছু সদস্যের চেয়ে বাইডেন বয়সে ছোট। সিনেটে রিপাবলিকানদের নেতা ম্যাককনেলের বয়স এখন ৮১। গত বুধবার ক্যাপিটল হিলে একটি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার মাঝখানে থেমে যান তিনি। এরপর ২১ সেকেন্ড নিশ্চুপ ছিলেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তাঁর সংবিৎ ফিরে। প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, ‘আমি ঠিক আছি।’
সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার পর ম্যাককনেলের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। কেউ কেউ উদ্বেগও প্রকাশ করেন। তবে ওই ঘটনার পর থেকেই যে তাঁর সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এমনটা নয়। এর আগে গত মার্চে পড়ে গিয়ে আঘাত পেলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর এর জন্য চিকিৎসা নিতে হয়েছিল তাঁকে। যদিও গত শুক্রবার ম্যাককনেলের কার্যালয় থেকে বলা হয়, তিনি পূর্ণ মেয়াদেই; অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন। তখন তাঁর বয়স হবে ৮৪।
সিনেটে ম্যাককনেলই যে বয়োজ্যেষ্ঠ, তা কিন্তু নয়। যেমন আইওয়া অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর চাক গ্রাসলি (৮৯), ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর ডায়ানে ফেইনস্টেইন (৮৯) ও ভারমন্টের সিনেটের বার্নি স্যান্ডার্স (৮১) ম্যাককনেলের চেয়েও বড়।
মার্কিন কংগ্রেসের অনেক আইনপ্রণেতার বয়স এখন সত্তরের কোঠায়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফাইভথার্টিএইটের হিসাব বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের বর্তমান গড় বয়স ৬৫ বছর ৩ মাস। গড় বয়স হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি হচ্ছে ‘প্রবীণতম’ সিনেট। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যা হিসাবে নিলে দেশটির মানুষের গড় বয়স ৩৮ বছর ৮ মাস।
বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের হিসাব বলছে, বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে আইনপ্রণেতাদের গড় বয়সে মার্কিন সিনেটের অবস্থান সপ্তম; অর্থাৎ পার্লামেন্টগুলোর মধ্যে মার্কিন সিনেটরদের গড় বয়স সপ্তম সর্বোচ্চ। এর মধ্য দিয়ে প্রবীণদের দেশ হিসেবে পরিচিত জাপান, ইতালি ও গ্রিসের পার্লামেন্টকে টপকে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেনের বয়স ও সম্প্রতি একাধিকবার তাঁর হোঁচট খাওয়ার ঘটনার পর এমন প্রশ্নও উঠেছে, তিনি কি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে লড়াই করার সক্ষমতা রাখেন? গত জুনে বালুর ব্যাগের ওপর দিয়ে হেঁটে মঞ্চে যেতে দেখা যায় তাঁকে। তিনি চলাফেরাও করেন ‘সাবধানে’।
২০২৪ সালে হবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। তাঁর পূর্বসূরি ৭৭ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্পও রিপাবলিকানদের প্রার্থী হতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও জোরালো। যদি তা-ই হয়, তাহলে পরবর্তী নির্বাচনে তাঁরা আবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রার্থিতা নিয়ে রয়টার্সের জনমত জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ আমেরিকানই চান না বাইডেন বা ট্রাম্প আবার প্রার্থী হন।
ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার সেন্টার ফর পলিটিকসের পরিচালক ল্যারি সাবাতো বলছেন, ‘বয়স পঞ্চাশ বা ষাটের কোঠায় রয়েছে, এমন ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে হবে। এর ফলে যেটা হবে, নির্বাচিত হলে দুই মেয়াদে আট বছর সুস্থভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সবাই জানে, এর পেছনে যুক্তি কী। কিন্তু গত নির্বাচনেও আমাদের সামনে এ রকম (দুই প্রবীণ বাইডেন-ট্রাম্প) প্রার্থী ছিলেন। আগামী নির্বাচনেও হয়তো তা-ই হতে যাচ্ছে। এটা বিরক্তিকর বিষয়ই।’
বিপি।এসএম