নিজস্ব প্রতিবেদক: চরম অর্থ সংকটে পড়ে চার মাস আগে বিক্রি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক আজকাল। নিউ ইয়র্কের পাঠকপ্রিয় এ পত্রিকাটি বিক্রির পর থেকে সাবেক মালিক ও কর্মচারির বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপনের মোটা অঙ্কের বকেয়া বিল আদায়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোটা অঙ্কের বেতন বকেয়া রেখে কর্মচারিদের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ/অপবাদ দিয়ে তাদের ছাঁটাইয়ের ঘটনা ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে পত্রিকাটির অভ্যন্তরীণ নানা ঘটনা ও বিক্রির নেপথ্যের অজানা চাঞ্চল্যকরে তথ্য।
সাপ্তাহিক আজকালের সাবেক সম্পাদক ও প্রকাশক জাকারিয়া মাসুদ জিকু আজকাল বিক্রির চার মাস পর অভিযোগ করেন, তার পত্রিকায় কর্মরত সাবেক বিজ্ঞাপন ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিক গত ২/৩ বছর ধরে বিজ্ঞাপনের বিল আদায়ের কোন হিসেব দেননি। এমতাবস্থায় পত্রিকা বিক্রি করে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসে। সে মোতাবক তিনি একজনের সাথে আগেই কথা বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। আমি পত্রিকা বিক্রিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি আজকালের আগ্রহী ক্রেতা নিউ ইয়র্কের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজের সাথে একটি রেস্তোঁরায় বৈঠকের ব্যবস্থা করেন আবু বকর সিদ্দিক। বৈঠকে অনেক আলোচনার পর আমরা উভয় পক্ষ একটা চূড়ান্ত দাম নির্ধারন করি। সকল শর্ত মোতাবেক আমাদের অর্থ লেনদেন করি। পত্রিকাটি বিক্রির জন্য সিদ্দিক শতকরা ১২ শতাংশ হারে কমিশন নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন জাকারিয়া মাসুদ। তিনি বলেন গত নয় বছর ধরে আজকালে বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের কাজ করে সিদ্দিক প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন গত ২/৩ বছর ধরে একবারের (ওয়ান টাইম) ও নগদ অর্থের বিজ্ঞাপনের কোন হিসেব দেননি। এসব অর্থ দিয়ে তিনি ঢাকায় দু’টি ফ্লাট, ব্যবসা ও নতুন লেক্সাস গাড়ি কিনে নিউ ইয়র্কে রাজকীয়ভাবে বসবাস করছেন।
জিকু অভিযোগ করে বলেন, অতি সাম্প্রতি গত ২৭ জুন, ২০২৩ নিউ ইয়র্কের ‘সামিয়া ইঙ্ক’ কর্তৃক আজকালের নামে প্রদত্ত একটি চেক সিদ্দিক নিজের একাউন্টে জমা দিয়েছেন যার পরিমাণ ৩শত ৬০ ডলার। এছাড়াও নিউ ইয়র্কের সুপরিচিত এটর্নি রুমার স্বামী তাকে বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিল বাবদ ৫শত ডলার ক্যাশ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি জিকুকে এ বিষয়টি জানাননি।
সিদ্দিক আপনার বিজ্ঞাপনের অর্থ ঠিকমত দিচ্ছেন না তাহলে সিদ্দিককে কেন চাকুরিচ্যুত করেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে জিকু বলেন, হিসাব আজ দেবেন কাল দেবেন বলে নানা তালবাহানা করে অনেকে ঘুরিয়েছেন। আমাকে প্রায় জিম্মি করেছিলেন। তাকে চাকুরিচ্যুত করার মত আমার কোন অপশন ছিল না।
জাকারিয়া মাসুদ জিকুর অভিযোগের সূত্র ধরে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালান এ প্রতিবেদক। কথা বলেছেন পত্রিকাটির সাবেক সাংবাদিক ও কর্মচারিদের সাথে। তাদের প্রায় সকলেই অভিযোগ করে বলেন, জাকারিয়া মাসুদ জিকুর অধীনে যারাই কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ বা অপবাদ নিয়ে চাকুরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আর এসব অভিযোগের মুল কারনই বকেয়া বেতন বা বিজ্ঞাপনের কমিশন থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা। অর্থ আত্মসাতের অপবাদ দেওয়ার ফলে ঐসব কর্মচারিরা প্রতিবাদ করে বকেয়া অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অভিশাপ দেওয়া ছাড়া আর করার কিছুই থাকে না। এ ধরনের ঘটনার একাধিক অভিযোগ রয়েছে জিকুর বিরুদ্ধে।
সাপ্তাহিক আজকালের সাবেক বিজ্ঞাপন ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিকের কাছে বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আজাকাল বিক্রির আলোচনা শুরুর পর থেকে বিক্রি পর্যন্ত সব হিসেব নিকাশ চূড়ান্ত হয়েছে। আমার কাছে কোন পাওনা থাকলে পত্রিকা বিক্রির যে কমিশনের আলাপ হয়েছিল সেই অর্থ তো তিনি আমাকে দিতেন না। তা আটকিয়ে রাখতেন। তাছাড়া হিসাব-নিকাশ না করে তিনি কীভাবে পত্রিকা বিক্রি এবং বিজ্ঞাপন ম্যানেজারকে বিদায় করলেন? মজার ব্যাপার হচ্ছে পত্রিকা বিক্রির ২ মাস পর অর্থাৎ গত ১৫ জুন, ৬ জুলাই ও ৬ আগষ্ট ২০২৩ তারিখ উল্লেখ করে গত ৩/৪ বছরের বিজ্ঞাপনের কমিশনের পাওনা বাবদ ৩টি চেকে ৩০ হাজার ডলারের চেক প্রদান করেছেন জাকারিয়া মাসুদ। প্রতিটি চেকের ফর এর স্থলে লেখা রয়েছে আজকালের বকেয়া সংগ্রহ সাপেক্ষে (সাবজেক্ট টু আজকাল ডিউ কালেকশন)। তার টিডি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে উক্ত পরিমানের অর্থ গচ্ছিত না থাকায় চেকগুলো ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে ফেরত (বাউন্স) এসেছে। যা আইনত দন্ডনীয়। এ ব্যাপারে আমি এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহন করি নাই। তাহলে আমি কীভাবে বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিলের অর্থ আত্মসাত করলাম পাল্টা প্রশ্ন করেন সিদ্দিক।
সিদ্দিক বলেন, সাপ্তাহিক আজকাল নিঃসন্দেহে নিউ ইয়র্কের একটি পাঠকপ্রিয় পত্রিকা। এ পত্রিকায় টানা ৯ বছর কাজ করে প্রবাসের কমিউনিটির কাছে আমি পরিচিত লাভ করেছি। এ পত্রিকার মাধ্যমেই প্রবাসীরা আমাকে চেনেন ও জানেন। এজন্য আমি গর্বিত। আমি আজকাল পরিবারের সাথেই সম্পৃক্ত ছিলাম। তাদের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশেই ছিলাম। জিকু ভাই ও তার স্ত্রী আমাকে তাদের পরিবারের একজন মনে করতেন।
জিকুর আনীত অভিযোগ প্রসঙ্গে সিদ্দিক বলেন, গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে জিকু ভাই চরম আর্থিক সংকটে পড়েন। পত্রিকা বের করা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। তিনি আমাকে ডেকে বলেন, আমার পক্ষে আজকাল ও আইবিটিভি দু’টো একসাথে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন আমি তাকে যে কোন একটি ছেড়ে দেবার পরামর্শ দেই। তিনি আজকাল ছেড়ে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তার যেন আর দেরি সইছে না। চরম বিষন্নতায় ভুগছিলেন তিনি। আমাকে বারবার তাগিদ দিতে থাকেন এবং বলেন তাড়াতাড়ি যে কোন একটা পার্টি ম্যানেজ করেন। আমি আর একদিনও পত্রিকা চালাতে চাই না। তখন এ বিষয়টি নিয়ে আমি নিউ ইয়র্কের প্রতিষ্ঠিত হোমকেয়ার ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজের সাথে কথা বলতেই তিনি আজাকাল কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। মধ্যে কথা বলিয়ে দেই। এরপর সব বিষয় চূড়ান্ত করার জন্য একটি রেস্তোঁরায় বসারও ব্যবস্থা করে দেই। ঐ দিনের সেই বৈঠকে জাকারিয়া মাসুদ জিকু তার সাপ্তাহিক আজকালের প্রথম দাম হাঁকেন হাফ মিলিয়ন (৫ লাখ) ডলার। ক্রেতা শাহনেওয়াজ ২ লাখ ডলার দিয়ে ডাক শুরু করেন। অনেক ওঠানামা ডাকের পর শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৩ লাখ ডলার চূড়ান্ত দাম ধরা হয়। তখন আমার বকেয়া বেতন ও কমিশনের প্রসঙ্গ উঠে আসলে জিকু ২৫ হাজার ডলার কেটে রেখে বাকি অর্থ চেকের বদলে ক্যাশিয়ার চেকের মাধ্যমে প্রদানের প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাবে রাজী হন শাহনেওয়াজ। পরে ঢাকার এক কর্মচারির বকেয়া বেতন যোগ করে মোট ২৮ হাজার ডলার কেটে বাকি অর্থ ক্যাশিয়ার চেকের মাধ্যমে প্রদান করে আজকালের মালিকানা গ্রহন করেন নিউ ইয়র্কের প্রতিষ্ঠিত হোমকেয়ার ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ। প্রথম দফায় শাহনেওয়াজ ২ লাখ ডলার ক্যাশিয়ার চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। এ সময় জিকু প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সিদ্দিককে ১২ শতাংশ কমিশনের পরিবর্তে ১১ শতাংশ হিসাবে জিকু প্রথম দফায় সিদ্দিককে ২২ হাজার ডলারের একটি চেক দেন। ১ শতাংশ হারে কমিশন কম দেয়ায় কোন আপত্তি জানাননি সিদ্দিক। এর আগে জিকু প্রতিশ্রুতি দেন পত্রিকা বিক্রি হয়ে গেলে পুরোনো বকেয়া কমিশনের পাওনা ৩০ হাজার ডলার একত্রে পরিশোধ করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। অনেকদিন ঘোরার পর তিনি গত ১৫ জুন, ৬ জুলাই ও ৬ আগষ্ট ২০২৩ তারিখ উল্লেখ করে গত ৩/৪ বছরের বিজ্ঞাপনের কমিশনের পাওনা বাবদ ৩টি চেকে ৩০ হাজার ডলারের চেক প্রদান করেন। এর বিপরীতে কোন অর্থ ব্যাংকে জমা নেই। চেক ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে ফেরত এসেছে।
ঢাকায় দু’টি ফ্লাট, ব্যবসা ও নতুন লেক্সাস গাড়ি প্রসঙ্গে কথা বললে সিদ্দিক বলেন, আমি কমিশন ছাড়া ৮শত/১ হাজার ডলার প্রতি সপ্তাহে বেতন পেতাম। এখানে আমার ফ্যামিলি নেই। থাকি ৫ শত ডলার সাবলেটের বাসায়। কোন খরচ নেই। ৯ বছরে ডয়াল্র জমিয়ে ঢাকায় ফ্লাট ও ব্যবসা কেনা সম্ভব কিনা প্রশ্ন করেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, ১/২ হাজার ডলার জমা দিলেই নতুন গাড়ি কিনতে পাওয়া যায়, এ বিষয়টা আমেরিকার সবাই জানেন, জিকু সাহেবেরও জানার কথা।
গত ২৭ জুন, ২০২৩ নিউ ইয়র্কের ‘সামিয়া ইঙ্ক’-এর আজকালের নামে ৩ শত ৬০ ডলারের চেক ও এটর্নি রুমার স্বামীর বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিল বাবদ ৫শত ডলার ক্যাশ নেওয়া প্রসঙ্গে সিদ্দিক বলেন, জিকু সাহেব আজকাল বিক্রি করেছেন গত এপ্রিলে। আর জুন মাসে কেউ আজকালের নামে চেক দিলে সেটা বর্তমান মালিকের একাউন্টেই তো যাবে। আর যদি আমার অ্যাকাউন্টেই জমা দিয়ে থাকি কিংবা কারো কাছ থেকে ক্যাশ নিয়ে থাকি তাহলে ভুল কিসে? তিনি আমাকে ৩০ হাজার ডলারের যে ৩টি চেকে দিয়েছেন সেগুলোতে লেখাই আছে বকেয়া বিলে কালেকশন করে নিতে হবে। সিদ্দিক জানান, আমি ৩/৪ বছর ঠিকমত বিজ্ঞাপনের বিল পরিষোধ না করলে পত্রিকা কিভাবে বের হলো? কিভাবে ঘর ভাড়া আর কর্মচারিদের বেতন দিলো এবং নিজের সংসার চালালো কিভাবে? একটা লোকের সত্যতা যাচাই করতে ৯ বছর সময় লাগে না। আমার সততার কোন রকম ঘাটতি থাকলে এক বা দুই বছরের মধ্যেই তো চাকুরিচ্যুত করতেন। যেভাবে পুর্বে আরো অনেককেই তিনি করেছেন।
এ বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে সাপ্তাহিক আজকালের বর্তমান সম্পাদক ও প্রকাশক শাহ নেওয়াজের সাথে। তিনি প্রথমেই ২৮ হাজার ডলার কেটে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন পত্রিকা বিক্রি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গত ৪ মে, ২০২৩ জিকুর সাথে প্রথম বৈঠক হয়। নিউ ইয়র্কের কুইন্স ব্লুভার্ডের টাংরা রেস্তোঁরায় বসে অনেক দর কষাকষির পর শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৩ লাখ ডলারে আজকাল বিক্রির চূড়ান্ত সম্মতি জানান সাবেক সম্পাদক ও প্রকাশক জাকারিয়া মাসুদ জিকু। ৫ মে একজন এটর্নির মাধ্যমে চুক্তিপত্র সমাপদন করা হয়। পরে তিনি ব্যক্তিগত চেকের পরিবর্তে কাশিয়ার চেকের অনুরোধ জানালে আমি রাজি হয়ে দুই দফায় তা পরিশোধ করি। প্রথমে ২ লাখ ডলার এবং পরে দেড় লাখ ডলার। আজকাল বিক্রি ও হস্তান্তরের যাবতীয় কাজ শেষ হলে গত ১০ মে গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার পার্টি হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবাসী পাঠক ও বিজ্ঞাপনদাতাদের এ বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান শাহ নেওয়াজ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পত্রিকা বিক্রির (৫ মে) পর দীর্ঘমেয়াদী বিজ্ঞাপনের অগ্রিম বিল বাবদ আরো ১৫ হাজার ডলার জিকুর অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। এই অর্থ উদ্ধারের জন্য তাকে বারবার ফোন দিচ্ছি কিন্ত তিনি ফোন ধরছেন না। তবে জিকু আজকালের কোন বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে উল্লেখ করেন শাহ নেওয়াজ।
আজাকালের সাবেক বিজ্ঞাপন ম্যানেজার আনিসুর রহমান আনিস অত্যন্ত দূঃখের সাথে জানান, শুরুর দিকে তিনি আজকালের বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন। ঠিকমত বেতন ও কমিশন না দেওয়ায় এবং নতুন আরেকটি পত্রিকায় একই পদে চাকুরি পাওয়ায় আজকাল ছেড়ে দেই। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট কমিশন ৬৬ হাজার ২ শত ৭৪ ডলারের মধ্যে এখনও ৩৫ হাজার ৫ শত ১৩ ডলার বকেয়া রয়েছে। অনেকবার তাগিদ দেওয়ার পরও তিনি সেই বকেয়া অর্থ পরিশোধ করেন নাই। গত ৫ বছর ধরে ঘুরাচ্ছেন। মোট কমিশনের তালিকা নিয়েছেন প্রায় ১০ বার। কিন্তু আজও সেই বকেয়া অর্থ পরিশোধ করেননি।
আনিস বলেন, শুধু আমরা সাথেই নয় এরকম আরো অনেকের সাথেই প্রতারণা করেছেন জিকু যা নিউ ইয়র্কের সকল প্রবাসীরাই জানেন। আমার মতো তারাও পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেছে। শুধু আজকালের সাংবাদিক বা কর্মচারিরাই নন, এর বাইরেও অন্য ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী জিকুর কাছে মোটা অংকের অর্থ পাবেন। এসব অসহায় মানুষদের বেতনের অর্থ পরিশোধ না করার অভিশাপের ফলেই জিকুর আজাকাল পত্রিকা হাতছাড়া হয়েছে বলে মনে করেন আনিস।
ঢাকা থেকে আজাকাল পত্রিকার গ্রাফিক্স ডিজাইন ও পিডিএফ ভার্সনের কাজ করতেন কাজী রাহাত শামস। তিনি ৬ জনের একটা টিম নিয়ে কাজ করতেন আজকালে। প্রতিমাসে বেতন ধরা হয়েছিল ৭০ হাজার টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রা)। করোনাকালীন সময় থেকে প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকার বদলে ৪০ হাজার টাকা করে পরিশোধ করতেন। গত ৩/৪ বছরে তার বকেয়া রয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। আজও সেই অর্থ পরিশোধ করেননি। এদিকে তার একজন টিম মেম্বার রুবেলকে দিয়ে সুকৌশলে সব কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। সে এখনও কাজ করছে আজকালে। আজকালের সম্পাদক ও সংশ্লিষ্টরা তার সাথে বড় ধরেনের একটি প্রতারণা করছেন বলে উল্লেখ করেন রাহাত।
ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করায় আজকালের বিরুদ্ধে ১০ মিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা প্রক্রিয়াধীন
বন্ধুর কথায় প্রভাবিত হয়ে ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আজকাল পত্রিকার বিরুদ্ধে ১০৫ কোটি টাকা (১০ মিলিয়ন ডলার) এর মানহানি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আজকালের গত ৩ মার্চ ২০২৩ সালের একটি সংখ্যায় ‘এসবিএ লোন: ৫ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ: প্রতারণার দায়ে বাংলাদেশী গ্রেফতার’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে মামলা করার কথা এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন নিউ ইয়র্ক হিউলেট, লং আইল্যান্ড প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইয়াসিন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইয়াসিন বলেন, গত ৩ মার্চের সংখ্যায় পত্রিকাটির প্রথম পৃষ্ঠায় ‘এসবিএ লোন : ৫ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ: প্রতারণার দায়ে বাংলাদেশী গ্রেফতার’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যে প্রতিবেদনে তার সম্পর্কে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও প্রতিহিংসামূলক। তিনি উক্ত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানা। তিনি বলেন আজকাল-এ প্রকাশিত খবরে ব্যক্তিগতভাবে তার ও তার পরিবারের চরম মানহানি ঘটেছে। কেননা, প্রকাশিত খবর প্রসঙ্গে তিনি কিছুই জানেন না এবং তার কাছে আজকাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন কিছু জানতে চাননি বা তার কোন বক্তব্য উক্ত রিপোর্টে নেই। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে তিনি নাকি এস কে আনোয়ারের নামের এক বাংলাদেশির কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৫ লাখ ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন এবং তাকে বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন এইসব তথ্য সর্ববৈ মিথ্যা ও বানোয়াট।
ইয়াসিন উল্লেখ করেন এস কে আনোয়ারের সাথে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিলো এবং এক সময় তার সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর ব্যববহার করতে হয়ছিল। যা তিনি সম্পুর্ণ অবগত। তবে তার কোন ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার কোন প্রশ্নই উঠে না। এছাড়া এসবিএ লোন সম্পর্কে তা বলা হয়েছে, তাও ঠিক নয়। কভিড-১৯ এর সময় দু’জনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ৮৪ হাজার ডলার লোন পাওয়া গেলে ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে এস কে আনোয়ারকে লোনের অর্ধেক অর্থ ৪২ হাজার ডলার ক্যাশ প্রদান করা হয়। আর ইয়াসিন কখনো তার দোকানে কাজ করেননি বরং স্টোরের মালিক হিসেবে তিনি দোকানে পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে তিনি দোকানটি জোর করে বন্ধ করে দেন যার ভিডিও তার কাছে সংরক্ষিত আছে। ইয়াসিন মনে করেন তার সরলতার সুযোগ নিয়ে এস কে আনোয়ার তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তার সাথেই প্রতারণা করেছেন।
এছাড়াও ইয়াসিন গ্রেফতার হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হয় তাও সঠিক নয়। মূলত: এস কে আনোয়া্রের একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গোয়েন্দা দপ্তরে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে তার সাথে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তাকে ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী অফিসে পাঠান। পরে সেখান থেকে তাকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। মূলত: ইয়াসিনের বিরুদ্ধে কোন মামলাই হয়নি নেই এবং তাকে কোন আদালতেও হাজির হতে হয়নি। ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী উক্ত অভিযোগটি খারিজ করে দেন।
ইয়াসিন উল্লেখ করে বলেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী মানুষ। সততার সাথে ব্যবসা করছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আজকাল-এ প্রকাশ করেছে তাতে তার এবং তার পরিবারের চরমভাবে মানহানি করা হয়েছে এতে তিনি চরমভাবে ব্যথিত। তিনি নিউ ইয়র্কের সাংবাদিকদের মাধ্যমে আসল সত্যটি প্রকাশ করে দেশ ও প্রবাসের সকলকে জানাতে চায়।
তবে মজার বিষয় হলো ইয়াসিনের উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বিনা আমন্ত্রণে আজকাল-এর একাধিক সাংবাদিক এসে হাজির হন। শেষ পর্যায়ে সাংবাদিক নন, ইয়াসিনের সাবেক ব্যবসায়িক পার্টনার এস কে আনোয়ার আজকাল সম্পাদকের বন্ধুর পরিচয় দিয়ে দেশীয় স্টাইলে মাস্তানি করতে শুরু করেন। এ নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা আপত্তি করলে পরে তিনি স্থান ত্যাগ করেন। তার (এস কে আনোয়ার) বনোয়াট অভিযোগের কারনেই আজকাল উক্ত ভুয়া সংবাদটি প্রকাশ করেন বলে অনেকেই ধারনা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে শেষে আলাপকালে ইয়াসিন এ প্রতিবেদককে বলেন সাপ্তাহিক আজকালের বিরুদ্ধে তার মানহানির মামলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মানহানির মামলায় দাবিকৃত অর্থের পরিমানের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা প্রকাশ না করাই ভালো তবে এর পরিমান ১০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৫ কোটি টাকা) বা তার বেশিও হতে পারে।
বিপি।এসএম