নোমান সাবিত: আগামী বছরের জানুয়রিতেই শুরু হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী নির্বাসন অপারেশন। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের মধ্যে বহিস্কার চরমভাবে আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস এ সংক্রান্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে, ২০২৫ সালের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পরই তার প্রথম নির্বাহী আদেশে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেবেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে হারে মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে, বিশেষ করে সেন্ট্রাল আমেরিকান দেশগুলোতে থেকে অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, তিনি তাদেরকে অবিলম্বে বহিস্কার করার জন্য তার সংকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ২ লাখেও বেশি অভিবাসী নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রবেশ করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর একটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবৈধ ইমিগ্রান্ট সমস্যার সমাধান’। নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের দিনই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘অবৈধ অভিবাসী নির্বাসন অপারেশন’ পরিচালনা করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সাবেক পুলিশ ও অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোমানকে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব দিচ্ছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। অন্যান্য বড় সিটিতেও একই সময়ে বিপুল সংখ্যক ইমিগ্রান্ট প্রবেশ করে সিটিগুলোর আর্থিক ও সামাজিক সংস্থানের ওপর বিপুল চাপ সৃষ্টি করেছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প শপথ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া ইমিগ্রান্টদের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবেই কিছু করবেন এমন সম্ভাবনা না থাকলেও নবাগত ইমিগ্রান্টসহ নিউইয়র্ক সিটির ৪ লাখেও বেশি আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের মধ্যে চরম ডিপোর্টেশন আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ তারা ট্রাম্পের নির্বাচনী অভিযানে তার কেন্দ্রীয় প্রচারাভিযানে ইমিগ্রান্টদের ডিপোর্ট করার প্রতিশ্রুতি বার বার ঘোষণা করতে শুনেছেন। তিনি যে শুধু ডিপার্ট করার কথা ঘোষণা করেছেন তা নয়, ‘মাস ডিপোর্টেশন’ বা ‘গণ বহিস্কার’ করার কর্মসূচি গ্রহণ করার কথাও বলেছেন।
নিউ ইয়র্ক সিটি কর্মকর্তারা সিটির বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এসাইলাম আবেদনকারী ইমিগ্রান্টদের যেভাবে নিরাপত্তা ও সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে যাওয়ার উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার গভীরতা আঁচ করার চেষ্টা করছেন। ইমিগ্রেশন এটর্নিরা, যারা নবাগত ইমিগ্রান্টদের এসাইলাম আবেদন প্রস্তুত করেছেন তারা আতঙ্কিত ইমিগ্রান্টদের ঘন ঘন ফোনকল পাচ্ছেন যে ট্রাম্প শপথ নেয়ার পর কি পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। ইমিগ্রেশন প্রবক্তরা মানবাধিকার কর্মী ও ইমিগ্রান্টদের সাথে নিয়ে সিটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং তারাও আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে যে ট্রাম্পের গণ ডিপোর্টেশন কর্মসূচিত বাস্তবায়িত হলে বহু ইমিগ্রান্ট পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। সিটি কর্মকর্তারা ভয় করছেন যে, ইমিগ্রান্টদের বহিস্কার কর্মসূচি যদি আদৌ বাস্তবায়িত হয়, তাহলে সিটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
দুই বছর আগে ইকুয়েডর থেকে আসা ৪০ বছর বয়সী ইমিগ্রান্ট এডউইন টিটো বলেছেন, ‘আমাদের অনেকে বিচলিত বোধ করছে, বিশেষ করে যাদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের বৈধতা প্রমাণ করার মতো কোনো কাগজপত্র এখনো নেই। তারা যদিও বৈধ কাগজপত্র কাজ করছে, তা সত্বেও নিয়োগদাতাদের প্রতি কাগজপত্রহীন কাউকে কাজে নিয়োগ না করার ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশ তারা অমান্য করতে পারবে না। এবং অনেককে কর্মস্থল থেকে আটক করা হতে পারে বলেও ইমিগ্রান্টদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন যে বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদে তিনি মিডটাউন একটি নির্মাণ সাইটে কাজ করেছেন এবং অনেক সময় কাজ থেকে বিরতি নিয়ে পুনরায় যোগ দিয়েছে। তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ট্রাম্পের অধীনে এই চিত্র সম্পূর্ণ বদলে যাবে বলে তিনি ভীত হয়ে পড়েছেন। তবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তকে আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্রাম্পের ঘোষণা সীমান্তপথে ইমিগ্রান্ট প্রবেশে একটি বাধা সৃষ্টি করবে। সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের জন্য এটি একটি সুখবর যে, তিনি গত দুই বছর যাবত ইমিগ্রান্টদের পেছনে যে ব্যয় করেছেন, সেক্ষেত্রে তিনি স্বস্তি লাভ করবেন।
অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ডিপোর্ট করতে টম হোমানকে নিয়োগ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর একটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবৈধ ইমিগ্রান্ট সমস্যার সমাধান’। নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের দিনই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘অবৈধ অভিবাসী বিদায় অপারেশন’ পরিচালনা করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সাবেক পুলিশ ও অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোমানকে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব দিচ্ছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। হোমানকে ‘সীমান্ত সম্রাট’ (বর্ডার জার) নামে অভিহিত করেন ট্রাম্প। এর আগেও ট্রাম্প প্রশাসনে তিনি ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্সির পরিচালক হিসেবে অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে ওবামা প্রশাসনেও তিনি আইসের নির্বাহী সহযোগী পরিচালক ছিলেন। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া পোস্টে রবিবার ট্রাম্প লেখেন, আমি ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত যে আইসিই’র সাবেক পরিচালক ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের অদম্য ব্যক্তি টম হোমান আমাদের জাতীয় সীমান্তের দায়িত্ব নিতে ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দিচ্ছেন। আমি দীর্ঘদিন ধরে টম হোমানকে চিনি। আমাদের সীমান্তে পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণে তার চেয়ে ভালো আর কেউ নেই।
১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন শত্রু আইন’ অনুযায়ী ইমিগ্রান্টদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প। এই আইন অনুযায়ী, শত্রু দেশগুলো থেকে আসা লোকজনকে গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানোর এখতিয়ার রাখে সরকার। এই আইনে পাওয়া ক্ষমতাবলে ‘অপারেশন অরোরা’ নামে একটি অভিযান পরিচালনা করবে ট্রাম্প প্রশাসন। এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া লাখো অভিবাসীকে দেশ থেকে বিদায় করার পরিকল্পনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এক কোটিরও বেশি অবৈধ ইমিগ্রান্ট বসবাস করছে।
ইমিগ্রান্ট ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি কেমন হবে?
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটা বড় ইস্যু ছিল ইমিগ্রেশন। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস দু’জনেই মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা ইমিগ্রান্টদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেন। ট্রাম্পকে বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে দেখা গেছে, নথিবিহীন অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ফেরত পাঠানো হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘উস্কানি’ দিয়েছিলেন এমন কথা বললেও কমলা হ্যারিস অবশ্য একথাও জানিয়েছিলেন যে তিনি সীমান্ত নিরাপত্তা বিলের পক্ষে। এই বিলের আওতায় সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের জন্য শত শত কোটি ডলার বরাদ্দের বিষয়ে বলা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশনের ভূমিকা কী? যদি ইমিগ্রান্ট না থাকে তাহলে তার কী প্রভাব পড়তে পারে দেশটিতে?
যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা : ইমিগ্রান্ট না থাকলে আমেরিকার জনসংখ্যা অনেক কম হবে। দেখা গেছে, ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি। সেই তথ্য বলছে, বিদেশে জন্মগ্রহণকারী চার কোটি ৭৮ লাখ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন যা মোট জনসংখ্যার ১৪.৩ শতাংশ। এই তালিকায় সবার প্রথমে রয়েছে মেক্সিকো থেকে আসা মানুষ। সেখানকার এক কোটি ছয় লক্ষ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। অন্যদিকে, সেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা ২৮ লাখ এবং চীন থেকে আসা মানুষের সংখ্যা ২৫ লাখ। প্রসঙ্গত, ইমিগ্রান্ট কর্মচারীর সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ হলেও যুক্তরাষ্ট্রে জন্মহার কমে যাওয়ার ফলে সে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৩০-এর দশকের পর সর্বনিম্ন হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে। জন্মের হার ১৯৩০-এর দশকে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’-এর ফলে হ্রাস পেয়েছিল। এর অর্থ হলো অন্যান্য অনেক দেশের মতোই যুক্তরাষ্ট্রও প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যার সঙ্গে লড়ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খরচ। অন্যদিকে, কাজকর্ম করতে সক্ষম অল্প বয়সী মানুষ কমে যাচ্ছে। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস বলছে, ২০৪০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা জন্মকে ছাপিয়ে যাবে। তখন ইমিগ্রেশনের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এই কারণে অনেক অর্থনীতিবিদ ও ইমিগ্রেশনপন্থী গোষ্ঠী দাবি জানিয়েছে, অর্থ ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে ইমিগ্রেশন দরকার, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে অভিবাসনের অনুমতি দেওয়া হোক।
অর্থ ব্যবস্থায় এর প্রভাব: বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক হাসান জানিয়েছেন, ইমিগ্রান্টদের অনুপস্থিতির বড় প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, যদি ইমিগ্রান্টদের পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে ধরে নিন মাথাপিছু জিডিপি পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ কমে যাবে। অর্থাৎ কিছু মানুষ কমে যাওয়ার (ইমিগ্রান্টদের অনুপস্থিতি) যে প্রভাব, তার প্রতিফলন ঘটবে জিডিপিতে। তার গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে তারিক হাসান বলেছেন, ইমিগ্রেশন উদ্ভাবনী শক্তিতে ইন্ধন যোগায়, উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং এটা কিন্তু শুধুমাত্র কোনও একটা বিশেষ সেক্টরেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রসঙ্গত, অভিবাসীরা তুলনামূলকভাবে কম বয়সী এবং তাদের কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল সেক্টরে কর্মরত তিন কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশই ইমিগ্রান্ট। সরকারি সংস্থা ‘ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিক্স’- এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমশক্তিতে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে ইমিগ্রান্টদের হার আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের অনুমান অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০৩৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সী অভিবাসীদের প্রায় ৯১ শতাংশের বয়স ৫৫ বছরের কম হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্কদের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ। অর্থ ব্যবস্থা ভূমিকা পালন করে এমন সেক্টর যেমন কৃষি- সম্পূর্ণরূপে অভিবাসী শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল। শ্রম মন্ত্রণালয়ের জাতীয় কৃষি শ্রমিক জরিপ অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ শ্রমিক ইমিগ্রান্ট। যদিও এদের মধ্যে অনেক শ্রমিকের কাছে এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নথিপত্র নেই। আমেরিকান ইমিগ্রান্ট কাউন্সিলের (এআইসি) গবেষণা নির্দেশকের দায়িত্বে রয়েছেন নান ব্যু।
তিনি ইমিগ্রান্টদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটা সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। তার মতে, ইমিগ্রান্টদের সরিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো কৃষিকাজ করা, ফল এবং শাক সবজি তোলা আর উৎসবের মৌসুমে ক্রমবর্ধমান বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক পাবেন না ক্ষেতের মালিকরা। অন্যদিকে, যারা ইমিগ্রেশনের সমালোচনা করেন, তাদের একটা যুক্তি হলো, বিদেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কম মজুরিতে কাজ করতে প্রস্তুত এবং এর ফলে মার্কিন নাগরিকরাও কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন আর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ২০১৪ সালে অর্থনীতিতে ইমিগ্রেশনের প্রভাব নিয়ে ২৭টি গবেষণার পর্যালোচনা করেছে। এই পর্যবেক্ষণ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী নাগরিকদের বেতনের উপর ইমিগ্রেশনের গড় প্রভাব প্রায় শূন্যের সমান। সাম্প্রতিক সময়ে ইস্টার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে একটা গবেষণা করা হয়েছে। সেই গবেষণা বলছে, ইমিগ্রান্ট সংখ্যা বাড়লে তা মজুরি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যদিও পরিসংখ্যানের দিক থেকে তা একেবারে ক্ষুদ্র।
ট্যাক্সের উপর প্রভাব: প্রশ্ন হলো, ট্যাক্স রেভিনিউ বা কর রাজস্বের উপর এর কী প্রভাব পড়বে? এআইসির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইমিগ্রান্ট পরিবারগুলো মোট করের এক-ষষ্ঠাংশ (৫৮হাজার কোটি ডলার) কর জমা দিয়েছে। এআইসির তরফে নান ব্যু জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বৈধ অভিবাসীরাই যে কর দিয়ে থাকেন, এমনটা নয়। পিউ রিসার্চ সেন্টার থিংক ট্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নথিভুক্ত নন এমন ইমিগ্রান্ট সংখ্যা মোট অভিবাসী জনসংখ্যার প্রায় ২৩ শতাংশ। প্রায় এক কোটি ১০ লাখ ইমিগ্রান্ট’র মধ্যে ৪০ লাখই মেক্সিকো থেকে আসা। ইনস্টিটিউট অন ট্যাক্সেশন অ্যান্ড ইকোনমিক পলিসির এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০২২ সালে নথিভুক্ত নন এমন অভিবাসীরা ফেডারেল, রাজ্য ও স্থানীয় কর বাবদ প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার দিয়েছেন। থিক ট্যাঙ্ক ‘ইকনমিক পলিসি ইন্সটিটিউট’-এর ‘ইমিগ্রেশন ল অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ’ বিভাগের নির্দেশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড্যানিয়েল কোস্টা। তার মতে, অর্থনৈতিক দিক থেকে অভিবাসনের প্রভাব জাতীয়স্তরে ইতিবাচক হতে পারে। তবে কিছু রাজ্যে এটা নেতিবাচকও হতে পারে, বিশেষত স্বল্প সময়ের নিরিখে বিচার করলে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় তিনি এবং তার টিমের সদস্যরা স্বল্প বেতন পান কিন্তু যোগ্য অভিবাসীদের ‘স্বল্প মেয়াদে আর্থিক ভারসাম্য নেতিবাচক প্রভাবের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের যুক্তি, আরও বেশি পরিমাণ অর্থ ফেডারেল থেকে রাজ্য পর্যায়ে পুনরায় বিতরণ করা হোক যাতে জনবহুল ইমিগ্রেশন অঞ্চলগুলোর চ্যালেঞ্জ দূর করা যায়। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জিওভান্নি পেরি বলছেন, নির্মাণ কাজ সংগঠিত না হলে সেবা ও আবাসনের ওপরও চাপ বাড়বে। এটা ঠিক যে অভিবাসীদের বাদ দিয়ে দেওয়ার বিষয়টা বেশ সহজ।
অভিবাসীদের ব্যবসায় সাফল্য: অভিবাসী বা তাদের সন্তানদের একটা বড় অংশ ব্যবসা ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছে। রাজস্বের দিক থেকে ৫০০টি বৃহত্তম কোম্পানির বার্ষিক তালিকার প্রায় ৪৫ শতাংশ সংস্থাই অভিবাসী বা তাদের সন্তানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। একই সময়ে, ১০০ কোটি ডলার বা তার বেশি মূল্যের স্টার্ট-আপগুলোর ৫৫ শতাংশই প্রতিষ্ঠা করেছে অভিবাসীরা। বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে অভিবাসীরা, যাদের মধ্যে অনেকেই প্রাথমিকভাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল। অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেটরসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১০ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে চার হাজার কোটি ডলারের অবদান রেখেছে।
জনমত: সম্প্রতি গ্যালাপ জরিপে দেখা গিয়েছে, অর্থনীতিতে অভিবাসীদের ভূমিকা থাকলেও ৫৫ শতাংশ নাগরিক চাইছেন অভিবাসন হ্রাস পাক। অভিবাসনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে বিশেষত মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ রুখতে রাজনৈতিক ঐকমত্যও রয়েছে। অধ্যাপক পেরি বলেন, কিছু রাজনীতিবিদ ও সংবাদমাধ্যম অভিবাসনকে ‘সীমান্তে বিশৃঙ্খলার’ সঙ্গে তুলনা করে। অভিবাসনের প্রভাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বদলে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিভিন্ন ‘গল্পের’ দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের তারিক হাসান বলেন, গত দুই দশকে অভিবাসন অনেক বেশি হয়েছে। যদিও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অভিবাসন ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে এর এমন কিছু দিক থাকতে পারে যা অন্যদের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে বাধা দেয়।
বিপি।এসএম