—পরাগ সঞ্চিতা
জো বাইডেন একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন; বাইডেনের মতো কমলা হারিস কি কোনো দিন প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন? এর উত্তর কমলা নিজেই দিয়েছেন- ‘রাষ্ট্রক্ষমতায় আমি হয়তো প্রথম নারী, কিন্তু আমিই একমাত্র নারী নই— আগামীতে আরো নারী এই রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেবে।’ নির্বাচনী বক্তব্যে আমরা প্রায়শই তাঁকে বলতে শুনেছি -‘এই যাত্রাতে আমি একা (alone), কিন্তু একাকী (lonely) নই’. কমলা কক্ষনো ভুলে জাননি যে আজকে তার এই জয়ের পেছনে অবদান রয়েছে তার আগের অনেক জানা এবং নাম না জানা নারীদের! তিনি সবসময় কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করেন তার পূর্ববর্তী নারী রাজনীতিবিদদের যারা কমলার পূর্বে আমেরিকার রাজনীতিতে নারী স্বাধীনতা, সমঅধিকার, আর নারী আন্দোনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। ইতিহাসে স্মরণীয় সেই সব সহ যোদ্ধারা তাদের ত্যাগ আর পরিশ্রমে আজকের কমলা এবং আগামী দিনের কমলাদের জন্য দুর্গম পথটিকে প্রশস্ত করে গেছেন।
ভারতীয় ইমিগ্রান্ট মা গোপালান এবং জ্যামাইকান ইমিগ্রান্ট বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস- অভিবাসী এই পিতা-মাতার প্রবাসী জীবনের সংগ্রাম আর আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার চেতনা কমলার জীবনে গঠনমূলক প্রভাব রেখেছিল। টেলিভশন শো’ গুড মর্নিং আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কমলা বলেছেন মায়ের শিক্ষাই তাকে সামনে এগিয়ে যেতে অনু প্রাণিত করেছে। হারিস তার আত্মজীবনী, দ্য ট্রুথস উই হোল্ড, বইএ লিখেছেন যে তাকে এবং তার বোন মায়াকে মা’ গোপালান বলতেন “কোনো সমস্যায় পড়লে কেবল বসে বসে অভিযোগ না করে বরং সমস্যাটির সমাধান করার চেষ্টা করো !”
এক পলকে জেনে নেয়া যাক কে এই প্রথম নির্বাচিত নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা?
নাম: কমলা দেবী হারিস; সংস্কৃত ভাষায় কমলা নামের অর্থ “পদ্ম”।
জন্ম তারিখ: ২০ শে অক্টোবর, ১৯৬৪
রাজনৈতিক দল / পার্টি: ডেমোক্র্যাট
জন্ম স্থান: ওকল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া
বাবা: ডোনাল্ড হারিস
মা: প্রয়াত শ্যামলা গোপালান
স্বামী: ডগলাস এমহফ
শিক্ষা: ১৯৮৬ সালে ওয়াশিংটন ডি সি তে অবস্থিত হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি তে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরে ১৯৮৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের হেস্টিংস কলেজ অফ ল’ থেকে আইনের উপর ডিগ্রি নেন। ছাত্র জীবনে কমলা ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কলে এবং সান ফ্রান্সিসকো বে অঞ্চল জুড়ে নাগরিক অধিকার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচন প্রার্থী হিসাবে হ্যারিস তার শিকড়ের পরিচয় তুলে ধরে বলেছেন ১৯৭০ এর দশকে ক্যালিফোর্নিয়ায় বৈষম্যের অভিজ্ঞতা তার জীবনে স্থায়ী চিহ্ন রেখেছে।
পেশা জীবন:
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, সান ফ্রান্সিসকো: কমলা হারিস প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান মহিলা যিনি সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০০৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল, ক্যালিফোর্নিয়া: ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে কমলা দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার প্রথম মহিলা, প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান, এবং প্রথম এশিয়ান আমেরিকান অ্যাটর্নি জেনারেল। এটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে কর্তব্যরত হারিস নিজেকে একজন “প্রগতিশীল প্রসিকিউটর” হিসাবে পরিচয় দিতেন।
সিনেটর, ক্যালিফোর্নিয়া : ২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন হারিস। তিনি দ্বিতীয় আফ্রিকান আমেরিকান মহিলা এবং ইতিহাসের প্রথম দক্ষিণ এশীয় আমেরিকান সিনেটর। কমলার আগে ১৯৯২ সালে ক্যারল মোসলে ব্রাউন ছিলেন প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান মহিলা সিনেটর, যিনি ইলিনয় রাজ্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সিনেটরের দায়িত্বে থাকাকালে কমলা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, সরকারী বিষয়ক কমিটি, গোয়েন্দা বিষয়ক বাছাই কমিটি, বিচার বিভাগ কমিটি এবং বাজেট কমিটিতে দায়িত্বে ছিলেন। কমলা হারিস গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমেরিকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রথম মহিলা উপ-রাষ্ট্রপতি, যিনি ২১শে জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিবেন ।
প্রকাশনা: হারিসের দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে: “দ্য ট্রুথস উই হোল্ড: অ্যামেরিকান জার্নি” একটি মেমোর’ বা আত্ম-স্মৃতিচারণমূলক বই ; অন্যটি শিশুতোষ বই “সুপার হিরোস আর এভরিহোয়ার”।
সেই ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকার জন্ম হবার পরে প্রায় দীর্ঘ আড়াইশো বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে একজন নারী উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করলো আমেরিকা! কমলা হ্যারিস আমেরিকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় শুধু প্রথম নারীই নন, উপরন্তু তিনি প্রথম এশীয় বংশোভূত কৃষাঙ্গ নারী! রাষ্ট্র ক্ষমতায় কমলার আবির্ভাব আমেরিকাতে নারী নেতৃত্বের এক ঐতিহাসিক মাইল ফলক! এই কালজয়ী ঘটনা সব বর্ণের নারীদের জন্য সম্ভবনার দ্বার খুলে দিলো। আমারা নতুন প্রত্যাশাতে আগামী প্রজন্মের মেয়েদের দিকে চেয়ে রইবো আমেরিকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরো নানা বর্ণের কমলার নেতৃত্বের জন্য।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট প্রবাসী লেখিকা ও সাংস্কৃতিকসেবী। তার প্রকৃত নাম- রওনাক আফরোজ
বিপি।এসএম