রওশন আলম পাপুল,গাইবান্ধা প্রতিনিধি: চতুর্থ ধাপে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।
এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জোবায়ের হাসান মো. শফিক মাহমুদ গোলাপ নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বদ্বীতা করেন। নির্বাচনে তিনি দেন নানান প্রতিশ্রুতি। দলীয় এই প্রার্থীর পাশাপাশি গণসংযোগ করতে গিয়ে ব্যতিক্রম এক প্রতিশ্রুতি দেন একই ইউনিয়নের জাকির হোসেন নামের এক সমর্থক।
নির্বাচনে নৌকা জয়ী হলে একদিনের জন্য তার নিজের পুকুরে মাছ শিকার সবার জন্য উন্মুক্ত করার প্রতিশ্রুতিদিয়েছিলেন ব্যবসায়ী জাকির। নির্বাচনে জয়লাভ করে নৌকার প্রার্থী। এবার জাকির হোসেন রাখলেন সেই প্রতিশ্রুতি শনিবার (৫ মার্চ) সকাল থেকে নাসিরাবাদ গ্রামের হিলালী পুকুরে বড়শি হাতে মাছ শিকারে মেতে ওঠেন ওই ইউনিয়নের সহস্রাধিকক নারী। বিকেল পর্যন্ত তারা মাছ ধরেন। এর আগে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সকাল ৯টায় দিনব্যাপী বড়শি হাতে মাছ শিকারের উদ্বোধন করেন করেন ইউপি চেয়ারম্যান জোবায়ের হাসান মো. শফিক মাহমুদ গোলাপ।
কাটাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মাছ শিকারের বিষয়টি কয়েকদিন আগেই ঘোষনা দেন জাকির হোসেন। সে অনুযায়ী ইউনিয়নের মানুষ বড়শি, সুতা, ভরা, পাতাই ও ছিপ কিনে নিয়ে যান দোকান থেকে। এরপর নিজ হাতে বাড়ীতে প্রস্তুত করেন ছিপ হাতে মাছ ধরার বড়শি। অনেকে মাছের টোপ হিসেবে কেনেন আটা ও পাউরুটি। এরপর ঘোষনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কাটাবাড়ীর হিলালী পুকুরে জড়ো হতে থাকেন ইউনিয়নটির বিভিন্ন গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ। পুকুর পাড়ে পৌঁছার পর তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নেওয়া হয়। এরপর তাদেরকে মাছ শিকারের জন্য পুকুর পাড়ে বসতে দেওয়া হয়।
এসব কাজ পরিচালনার জন্য আনা হয় মাইক। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজও করেন বেশ কয়েকজন। এদিন সকাল ৯টায় উদ্বোধনের পর বড়শি হাতে মাছ ধরা শুরু করেন সবাই। তারপর জমা নেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি লটারি করে ১০ জন পান জাল দিয়ে মাছ ধরার অনুমতি। দিন শেষে সবাই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করে বাড়ী নিয়ে যান। বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে বিনামূল্যের এই মাছ শিকার এক উৎসবে পরিণত হয়। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে শনিবারেও মাছ শিকারের কথা জানান ব্যবসায়ী জাকির হোসেন।
বড়শি হাতে মাছ শিকারে আসা সোনিয়া বেগম, আসমা বেগম ও লিপি বেগমসহ কয়েকজন নারী জানান, ছোটবেলায় বড়শি দিয়ে পুকুরে এবং বর্ষাকালে জমি চাষের সময় ট্রাক্টরের পেছনে পেছনে প্লাস্টিকের বড় ডালি ও জাল দিয়ে মাছ ধরেছি। জমি সেচে মাছ ধরেছি, পুকুর সেচ দিলে মাছ ধরেছি। কিন্তু বিয়ের পর আর মাছ শিকার করা হয়নি। তাই মাছ শিকারের কথা জানতে পেরে খুবই খুশি হয়েছি। তাই এসেছি বড়শি হাতে মাছ শিকার করতে। এতে তারা বেশ আনন্দিত ও ভালো লাগছে বলে জানান এই নারী মৎস্যশিকারীরা।
এ প্রসঙ্গে জাকির হোসেন জানান, আমি নৌকাকে ভালোবাসি। আমার পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ রয়েছে। নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতিরক্ষার্থে বৃহস্পতিবার আমি সকলের জন্য বিনামূল্যে মাছ শিকার উন্মুক্ত করে দিই। এতে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়ে মাছ শিকার করে। বড়শি হাতে বড় বড় মাছ শিকার করে তারা বাড়ী নিয়ে যান। বিনামূল্যের এই মাছ শিকার উৎসবে রূপ নেওয়ায় আজও (শনিবার) বিনামূল্যে মাছ শিকার সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে আজও নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষ বড়শি হাতে মাছ শিকার করতে এসেছেন।
একই প্রসঙ্গে কাটাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জোবায়ের হাসান মো. শফিক মাহমুদ গোলাপ বলেন, জাকির হোসেন একজন একনিষ্ঠ কর্মী। নির্বাচনে তিনি প্রচুর শ্রম দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জয় হলে তিনি তার নিজস্ব পুকুরে সবার জন্য বিনামূল্যে মাছ শিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সবাইকে চমকে দেন। তিনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করায় দলের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এজন্য জাকির হোসেনকে ধন্যবাদ জানান ইউপি চেয়ারম্যান জোবায়ের হাসান।
বিপি/কেজে