সুলতানা মাসুমা,লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি : উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের মাটি সয়াবিন চাষের জন্য বেশ উপযোগী হলেও বিগত কয়েক বছর থেকে আবহাওয়া যেন অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে। অসময়ের বৃষ্টি কিংবা অতিবৃষ্টির কারণে ব্যাহত হচ্ছে সয়াবিন চাষ।
চাষিরা সয়াবিন ঘরে তোলার আগে ক্ষেতেই সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সয়াবিনের বীজ বপনের সময়েও এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সয়াবিন ক্ষেতে পানি জমে থাকায় আধাপাকা সয়াবিন পচে গেছে। ফলে লোকসানের কবলে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের।
কমলনগরের চরমার্টিন এলাকার কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, সয়াবিনের বীজ বপনের কয়েকদিনের মাথায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে কিছু বীজ থেকে চারা গজায়নি।
পরবর্তীতে পুনরায় বীজ বপন করতে হয়েছে।
তারা বলেন, ফসল ঘরে তোলার ঠিক মুহূর্তে আবারো বৃষ্টির পানিতে ক্ষেতে থাকা আধাপাকা সয়াবিন নষ্ট হয়ে গেছে। গত কয়ক বছর থেকে আবহাওয়ার এমন বিরূপ প্রভাবের কারণে লোকসানের কবলে পড়ছেন চাষিরা।
গত কয়কদিনে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, চররমনী মোহন এবং কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন, চর লরেন্স ও তোরাবগঞ্জ এলাকায় ঘুরে মাঠে থাকা সয়াবিন নষ্ট হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরউভূতি গ্রামের কৃষক আলী হোসেন লাখোকন্ঠকে বলেন, দেড় একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। সয়াবিন পুরোপুরি পুষ্ট এবং না পাকতেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যায়। ক্ষেতের পানি নামার পথ না থাকায় জমে থাকা পানিতে সয়াবিন গাছ মরে গেছে। এতে গাছের সয়াবিনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যে পরিমাণ ফলনের আশায় ছিলাম, তার থেকে এখন অনেক কমে হবে।
একই এলাকার কৃষক আবদুর রহমান বলেন, ৫০ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীন সয়াবিন চাষ করেছি। চাষ করতে ৮-১০ হাজার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে গাছ এবং সয়াবিন সব পচে গেছে। এগুলো ক্ষেত থেকে উঠিয়ে কোনো লাভ হবে না। তাই ক্ষেতেই ফেলে রেখেছি।
কৃষক সফিকুল ইসলাম বলেন, সয়াবিন ঘরে তোলার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে ক্ষেতে পানি জমে ৩২ শতাংশ জমির সব সয়াবিন পচে গেছে। আমাদের মতো অনেক চাষি এবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বৃষ্টিতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
চররমনী মোহন ইউনিয়নের চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক নুর আলম বলেন, ৪০ শতাংশ জমির সয়াবিন এখন পানিতে। তবে সয়াবিনগুলো পুষ্ট হয়েছে। পাকার অপেক্ষায় আছি। বৃষ্টির পানি দ্রুত না শুকালে গাছ মরে সয়াবিন নষ্ট হয়ে যাবে। কাঁচা সয়াবিনে পানি লাগলে সেগুলোর রং বিবর্ণ হয়ে যায়। বাজারে দাম পাওয়া যায় না।
একই এলাকার কৃষক মকবুল হোসেন, আলমগীর, ফিরোজ আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, বৃষ্টির পানি জমে তাদের ক্ষেতের সয়াবিনগুলো নষ্ট করে দিয়েছে।
কৃষক হোসেন আহম্মদ বলেন, সয়াবিন কেটে ক্ষেতে রেখেছিলাম। বৃষ্টির পানিতে সেগুলো তলিয়ে গেছে। এতে সয়াবিনে চারা গজিয়ে গেছে।
কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন এলাকার কৃষক রহমত উল্যা বলেন, নীচু ক্ষেতে থাকা আধাপাকা সয়াবিন দ্রুত তুলে ফেলেছি। যেগুলো পানির সংস্পর্শে এসেছে, সেগুলোর মান খারাপ হয়ে যাবে। তবে উঁচু জমিতে থাকা সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে।
উত্তর চর লরেন্স এলাকার কৃষক ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ক্ষেতে পানি আছে। সয়াবিন এখনো পাকেনি। বৃষ্টির পানি যদি আরও বাড়ে, তাহলে সেগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, এবার সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতে থাকা সয়াবিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি দ্রুত সয়াবিন কেটে ফেলার জন্য। সয়াবিন গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারন করলে সেগুলো কাটার উপযোগী হয়।
কৃষকদের ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে। সরকারিভাবে প্রণোদনা এলে তাদের সেই প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।
বিপি/কেজে