টাকা নিয়ে কার্ড করে দিলেও দুই মাসের চাল তুলে নিয়েছে মহিলা মেম্বার
এম আর আলী টুটুল, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: টাকা নিয়ে ভিজিডি’র কার্ড করে দিলেও চাল তুলে নিয়েছে মহিলা মেম্বার ও তার স্বামী। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কার্ডধারী দরিদ্র অসহায় এক নারী।
বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সকালে ওই নারী জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এমন ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায়।
জানা যায়, উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের রাখালপাড়ার অমল চন্দ্রের স্ত্রী অমিতা রানী। তিনি এলাকার ৫, ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার দয়ারানীর আত্মীয় এবং ভোটের কর্মী।
সেই সুবাদে অনিতা দরিদ্র ও অসহায় হওয়ায় একটি ভিজিডি’র কার্ড করে দেয়ার আবদার করে। কারণ তার স্বামী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে একবছর ধরে শয্যাশায়ী। ফলে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে ৫ সদস্যের পুরো পরিবার।
এতে দয়ারানীর স্বামী অধীর কুমার ৫ হাজার টাকা দাবী করে। অমিতা নিজের লোক হিসেবে এক হাজার টাকা দেয় এবং তার নামে কার্ডটি হয়। কিন্তু মেম্বার কার্ড দিতে গড়িমসি করে। কখনো বলে চেয়ারম্যানের কাছে আছে। আবার কখনও বলে উপজেলায় আটকে রেখেছে।
এদিকে গত রবিবার ভিজিডি’র চাল বিতরণ করা হয়েছে খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জানতে পারে তার নামের কার্ড দিয়ে চাল তোলা হয়েছে। কে বা কারা চাল নিয়ে গেছে।
এমতাবস্থায় মহিলা মেম্বার ও তার স্বামীর সাথে বার বার যোগাযোগ করলেও তারা কোন সাড়া দেননি। শেষে সোমবার মোবাইল করলে তারা জানান, তোমার কার্ড পাবে কিন্তু এবারের চাল পাবেনা। কিন্তু কেন চাল পাবোনা জিজ্ঞাস করলেও কোন জবাব দেননি। পরে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
উপরোক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অমিতা রানী তার বাড়িতে সাংবাদিকদের আরও বলেন, এভাবে আরও অনেকের কার্ড করে দিতে টাকা নিয়েছে দয়ারানী। আমি অতিরিক্ত টাকা দেইনি তাই টাকা উসুল করতে আমার কার্ডের দুই মাসের ৬০ কেজি চাল অন্যের কাছে বিক্রি করেছেন। অথবা নিজেরাই তুলে খেয়েছেন।
এসময় এলাকার লোকজনও অভিযোগ সত্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এবং জানান একইভাবে বালাপাড়ার তানজিনা তিশা নামে তালাকপ্রাপ্তা একজনের কার্ডও টাকা না দেয়ায় অন্যকে দিয়েছেন মহিলা মেম্বার। সেখানে গেলে তিশা জানান, কার্ড পাননি। ওয়ার্ড মেম্বার দস্যুকে জানালেও তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
মূলতঃ মহিলা মেম্বার স্বামী-স্ত্রী মিলে কার্ড বাণিজ্য করেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। জনপ্রতিনিধি হয়ে এভাবে আইনবিরোধী কাজ করলে বিচার করবে কে? তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।
এব্যাপারে মহিলা মেম্বার দয়ারানীর বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। টাকা নিয়ে থাকলে তা আমার স্বামী জানে। আমি মেম্বার হলেও মূলতঃ সব কাজ করেন তিনি। তিনিই বলতে পারবেন কোথায় কি হয়েছে।
দয়ারানীর স্বামী সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের যক্ষা ও কুষ্ঠ রোগ বিষয়ক কর্মী অধীর কুমার মুঠোফোনে বলেন, অমিতা রানী নামে কাউকে চিনিনা। এনামে কোন কার্ড নেই। যার কথা বলছেন তিনি আসলে শান্তি রানী। তার কার্ড সম্পর্কে আমরা কিছু জানিনা। টাকা নেয়ার কোন প্রশ্নই উঠেনা। তার চাল কে তুলেছে তাও বলতে পারবোনা। কার্ড হয়ে থাকলে সে পাবে। এতে আমার কি? তাহলে ১৯৬ নং কার্ডধারী কে প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বাবু (পাইলট) বলেন, খাতামধুপুর ইউনিয়নের মেম্বার ও মহিলা মেম্বারদের বিরুদ্ধে একাধিক মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু কেউ সুনির্দিষ্ট ও লিখিত অভিযোগ না দেয়ায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। দুস্থদের জন্য দেয়া সরকারী সুযোগ সুবিধার অপব্যবহার বা প্রকৃত দুস্থদের বঞ্চিত করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মত অনিয়ম দূর্নীতি কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবেনা। এই নারী সাহস করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় তাকে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পাঠিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রমান করতে হবে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। নয়তো অভিযোগ মিথ্যে বলে অপরাধী পার পেয়ে যাবে। এজন্য তিনি অভিযোগকারী মহিলার কাছে বার বার প্রমাণ দিতে চাপ দিতে থাকেন।
এতে মহিলা বলেন, দয়ারানী ও অধীর কুমার গোপনে টাকা নিয়েছে। আমার সাথে যে এমন বেইমানী করবে তা বুঝতে পারলে অবশ্যই সাক্ষী প্রমাণ রাখতাম। সত্য কথা বলছি। তারপরও এভাবে হয়রানী করছেন কেন?
এসময় ইউএনও’র কার্যালয়ে উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা পাইলট বলেন, টাকা যদি না নিয়ে থাকে ভালো। কিন্তু কার্ডটি অন্যকে কেন দিয়েছে এবং সে চাল তুলে নিয়েছে? এটাতো অনিয়ম দূর্নীতি। এইক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতেই হবে।
এর প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে ইউএনও বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হবে এবং সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই যথাযথ আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে। (ছবি আছে)
বিপি>আর এল