দিনাজপুর প্রতিনিধি: স্বল্প সময়েই লাভের আশায় উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাষকৃত ফসল স্কোয়াশ এখন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় চাষ হচ্ছে। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষ করে সফল ও বাজিমাত করেছেন দুইজন কৃষক। নিজেদের গ্রামের জমিতে বিদেশি এ সবজির ফলন কেমন হয় তা দেখতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদ শুরু করেন তারা। ফলন ভালো হওয়ায় বিদেশি সবজি চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের। মাত্র তিন মাসেই লাভের আশা করছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে চাষের স্কোয়াশ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছেন তারা। আরো বৃহৎ পরিসরে স্কোয়াশ চাষ করবেন বলে আশাপোষণ করছেন তারা। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় শীতকালীন সবজির পাশাপাশি জমিতে স্কোয়াশ চাষ করে তারা লাভবান হয়েছেন।
উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের স্কোয়াশ চাষি মো. নুর ইসলাম জানান, আমি মাত্র ৭ শতক জমিতে প্রথম স্কোয়াশ লাগিয়েছি। স্কোয়াশগাছ দেখতে একদম মিষ্টি কুমড়াগাছের মতো। পাতা, ডগা, কান্ড দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি মিষ্টি কুমড়া নাকি স্কোয়াশগাছ।
চাষাবাদ শুরুর প্রায় দেড় মাস পরই গাছে ফল আসতে শুরু করে। তিন মাসেই তার ক্ষেতে স্কোয়াশের ফল আসে। পরীক্ষামূলক চাষাবাদে তার আশাতীত ফলন এসেছে। তিনি স্থানীয় বেলতলী ও ঘুঘুরাতলীবাজারে আকারভেদে প্রতি পিস স্কোয়াশ ৩০-৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এ জমি থেকে সপ্তাহে ২-৩ বার করে স্কোয়াশ তুলছেন তিনি। এ জমিতে চাষাবাদের শুরু থেকে ফলন আসা পর্যন্ত তাঁর মাত্র এক হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি ২০ হাজার টাকার স্কোয়াশ বিক্রি করেছেন। এখনো ক্ষেতে স্কোয়াশ আছে। আরো অন্তত ৫-৬ হাজার টাকার স্কোয়াশ বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাপোষণ করছেন।
তিনি আরো জানান, স্কোয়াশ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। দেখতে অনেকটা শসার মতো লম্বা ও মিষ্টি কুমড়া আকৃতির। আরেক স্কোয়াশ চাষি হলেন উপজেলার পুনট্টি ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মো. আহাদ আলী মোল্লা। তিনি উপজেলার আমতলী ও আমবাড়ীহাটে প্রতি পিস স্কোয়াশ ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তাদের ক্ষেতের প্রতিটি স্কোয়াশ দেড় থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হয়েছে। প্রতিটি স্কোয়াশগাছের গোড়ায় ৮-১২টি পর্যন্ত ফল বের হয়। এটি কয়েকদিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগি হয়। তাঁরা এক্স এল সুপার জাতের স্কোয়াশ চাষ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষেতের পরিচর্যা করেছেন। প্রথম চাষ তাই পরিচর্যা বুঝতে একটু সময় লেগেছে।
তাঁরা আরো জানান, স্কোয়াশ চাষে সুবিধা হচ্ছে স্বল্প সময়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন করা যায়। স্কোয়াশগাছ অল্প জায়গা দখল করে। সবজি হিসেবে এলাকায় স্কোয়াশ নতুন হওয়ায় এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে ও ক্ষেত দেখতে আশপাশের স্থানীয় লোকজনসহ চাষিরা আসছেন। স্কোয়াশ চাষে এলাকার সাধারণ চাষিরা বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছেন। বিদেশি সবজি চাষে সফলতায় স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে তাঁদের। তাঁরা আগামীতে আরো বেশি জমিতে স্কোয়াশ চাষ করবেন।
তারা জানান, বাজারে স্কোয়াশ বিক্রি করতে গেলে অনেকেই প্রশ্ন করেন-এটি কীভাবে খায় এবং কীভাবে রান্না করে।এগুলো বলতে হয়। উপজেলার আব্দুলপুর ও পুনট্টি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লাবনী আক্তার ও মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, স্কোয়াশ শীতকালীন উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি জাতের সবজি। স্কোয়াশ চাষের ক্ষেত্রে কৃষককে বিনামূল্যে বীজ, সার, ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ ফাঁদ ও জৈব বালাইনাশক প্রদান করা হয়েছে। কৃষক যাতে এ ফসল চাষে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হন সে জন্য সার্বক্ষণিক তাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ সবজি ভাজি, মাছ ও মাংসের তরকারিতে রান্নার উপযোগি করে খাওয়া যায়। এছাড়াও এটি সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়। চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, স্কোয়াশ সবজি জাতীয় ফসল। যা কুমড়া ও ধুন্দল জাতীয় ফসলের ক্রস। দেশের প্রচলিত কোনো সবজির এমন উৎপাদন ক্ষমতা নেই। দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় আমাদের পরামর্শে কৃষকেরা স্কোয়াশ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তিনি আরো বলেন, উচ্চ মূল্যের নিরাপদ সবজি স্কোয়াশ। স্বল্প খরচে ও সময়ে এ সবজি চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। আগামীতে উপজেলায় স্কোয়াশ চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করেন তিনি।
বিপি/টিআই