বাংলাপ্রেস ডেস্ক: চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। তাদের দাবির মধ্যে আছে–– মুজিববাদী ৭২ এর সংবিধান বাতিল করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নিষিদ্ধ করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদত্যাগ করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবকে ‘প্রোক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে এবং বিগত তিনটি নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সাল) অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচিতদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে, তারা যেন কখনও বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না পারে সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এই দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
হাসনাত আবদুল্লাহ পাঁচ দাবি ঘোষণা করে বলেন, যে শহীদ মিনার থেকে আমরা এক দফা দাবি তুলেছিলাম সে শহীদ মিনার থেকে আমরা পাঁচ দফা ঘোষণা দিচ্ছি। এই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের পাঁচ দফা দাবি না মানা হলে আমরা আবার রাজপথে নেমে যাব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, আগামী বৃহস্পতিবারের (৪৮ ঘণ্টা) মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যে ছাত্রলীগের হাতে মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাদের রাজনীতি করার কোনও অধিকার নেই।
রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে মাসউদ বলেন, আমরা এই শহীদ মিনার থেকে আমাদের বিপ্লব শুরু করেছিলাম। সেই বিপ্লবের ভয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। আর এখন আপনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে জনতার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। কারণ আপনি ৫ আগস্টে যা বলেছেন, তা এখন কার নির্দেশে ভুলে গিয়ে নতুন কথা বলছেন? আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই—খুনি হাসিনা যেভাবে পালিয়েছেন, চুপ্পুকেও পালাতে হবে। দেশের প্রশ্নে-দশের প্রশ্নে বিপ্লবীরা সব সময় মাঠে আছে।
গণজমায়েতে সারজিস আলম বলেন, আবারও যদি প্রয়োজন হয় আমরা আমাদের চোখ দিতে প্রস্তুত, পা দিতে প্রস্তুত, হাত দিতে প্রস্তুত, এমনকি জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। ফ্যাসিস্ট দল ছাত্রলীগ যেভাবে আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে, তাদের উত্থান সহ্য করা হবে না।
সমাবেশে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘আমাদের সংগ্রাম, চলছে চলবে’; ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’; ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’; ‘ছাত্রলীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’; ‘স্বৈরাচারের দোসরেরা হুঁশিয়ার সাবধান’; ‘অবৈধ রাষ্ট্রপতি, মানি না মানব না’; ‘আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে’ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নুসরাত তাবাসসুম, আব্দুল হান্নান, আবু বাকের মজুমদার, রিফাত রশীদ প্রমুখ।
আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে রূপরেখা প্রদান ও সারা দেশের বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষে অর্গানোগ্রাম ঘোষণার উদ্দেশ্যে’ জরুরি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন বৈষম্যবিরোধীদের মিডিয়া গ্রুপে এই তথ্য জানান।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং দেশত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দেশত্যাগের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।
এদিকে সম্প্রতি মানজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘(পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার) বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’
মূলত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এমন মন্তব্যের পর থেকে তার পদত্যাগের দাবি তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠনে নেতৃত্বদানকারীরা।
বিপি/কেজে