নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তিন শূন্যের ধারণার ওপর ভিত্তি করে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ মুক্ত এক পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল ১৬ নভেম্বর (শুক্রবার) ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সামাজিক শীর্ষ সম্মেলনে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান।
শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের বিশেষ ভার্চ্যুয়াল বার্তা দিয়ে শুরু হয়, এরপরে পরিবেশিত হয় ব্রাজিলের ফার্স্ট লেডি জানজা লুলার মূল বক্তব্য।
বাংলাদেশ ব্রাজিলের পাশাপাশি দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে এই বৈশ্বিক জোটে যোগদানকারী প্রথম দেশ। ফলে, এই অধিবেশনটি একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা জাতির জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ অর্জন।
অধ্যাপক ইউনূসের স্বপ্নদর্শী ভাষণ এই হাই-প্রোফাইল ইভেন্টে একটি অনুপ্রেরণামূলক হয়েছে। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘একটি ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব এবং একটি টেকসই গ্রহ তৈরি করা’। একটি ন্যায্য, আরও স্থিতিস্থাপক বৈশ্বিক ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন ড. ইউনূস।
দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে জি-২০ গ্লোবাল অ্যালায়েন্স প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এই যুগান্তকারী উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। এই জি২০ জোট ব্রাজিলের সভাপতিত্বে তৈরি করা হয়, যার লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে একত্রিত করা। বাংলাদেশকে জি২০ প্রেসিডেন্সি ব্রাজিল এই বছরের জি২০ আলোচনার তিনটি মূল স্তম্ভ-নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু স্থায়িত্ব এবং দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে অবদান রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস কমিউনিটি উন্নয়ন, উদ্যোক্তা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কোনো জাতি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কাজ করতে লজ্জা পেতে পারে না। প্রধান উপদেষ্টা ক্ষয়প্রাপ্ত কাঠামোর ওপর বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে এবং টেকসই সমাধানের দিকে বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করার জন্য বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান এবং সিস্টেমগুলোর জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দেন।
এই রূপান্তরমূলক পদ্ধতির পক্ষে বলতে গিয়ে অধ্যাপক ড. ইউনূস কম খরচের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি নতুন মানসিকতা এবং জীবনধারা গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা ‘তিন শূন্যের বিশ্ব’ এর দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য অপরিহার্য।
দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে রূপান্তরমূলক সমাধানে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট লুলাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তব্য শেষ করেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ জোটের প্রতি রাষ্ট্রের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে সমন্বিত মাতৃত্বকালীন ও প্রাথমিক শৈশব যত্নে বাংলাদেশের অঙ্গীকার উপস্থাপন করেন। ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুন্নেসা এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর জসিম উদ্দিন এই গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সমাবেশে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এই বৈশ্বিক জোটের ৩০ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়েছে, যার মধ্যে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘ সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে। জি-২০ সোশ্যাল সামিটে মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিশ্বজুড়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ ৩০০ জনেরও বেশি অংশ নেন।
বিপি।এসএম