টুটুল, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: সরকারি -বেসরকারি অবকাঠামো তৈরিতে অপরিহার্য ইট । বর্তমানে এই ইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মালিকপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের জটিলতায় ভুগছে । অনিশ্চয়তার মধ্যেই চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের কার্যক্রম ।কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের পরও নিশ্চয়তা না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে মালিকপক্ষ । বাংলাদেশে এই শিল্পে অর্থনৈতিকভাবে বিশাল ভূমিকা রয়েছে ।একটি ইট ভাটার সাথে জড়িত প্রায় দুইশত লোক । সব মিলিয়ে দেখা যায় তাদের ৮শ জন পরিবারের লোকের পেটের ভাতের যোগান দেয় এই শিল্প । ইটের প্রধান উপাদান হচ্ছে মাটি । মাটি সংগ্রহ হয় জমির উপরের অংশ ও ফাঁকা মাঠের মাটি থেকে । কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে ফসল আবাদ করতে যে পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় , যা ফসল কাটার পরে মাটির উপরের অংশকে বিষাক্ত করে রাখে। ওই অংশটুকু কেটে ফেলে দিলে জমির স্বাভাবিকতা ফিরে আসে । জমির উপরিভাগের মাটি ও ফাঁকা মাঠের মাটি কাজে লাগিয়ে ইট প্রস্তুত করা হয় । নির্মাণ কাজে ব্যবহারোপযোগী পাথরের বিপরীতে পলিমাটি বা কাদামাটির তৈরি ইটের নির্ভরতা ব্যাপক । প্রাচীন আমল থেকে নির্মাণ কাজে ইটের ব্যবহার রয়েছে । খ্রিস্টপূর্ব চার দশকের নগরী পুন্ড্রবর্ধন বা মহাস্থানগড়ের নির্মাণ কাজে পোড়ানো ইটের ব্যবহার রয়েছে । ইট জোড়া দেওয়ার কাজে চুন ও চিটাগুড়ের মিশ্রণ প্রযুক্তি ইটের তৈরি স্থাপনাগুলোকে টিকিয়ে রেখেছে ।
কিছুদিন পূর্বে জানা যায় ইটভাটা থেকে নির্গত কার্বন মনোঅক্সাইড ও অক্সাইড অফ সালফার রাজধানীর ৫৮ শতাংশ বায়ু দূষণ করছে । বাদবাকি বস্তুকণা ও জৈব যৌগ জ্বালানি দহন ও শিল্প কারখানার দূষিত ধোয়ার মাধ্যমে ঘটছে ।
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি আলহাজ্ব ফজলার রহমান জানান নীলফামারী জেলায় ৪৬ টি ইটভাটা রয়েছে । এই শিল্পের মাধ্যমে আমাদের জেলাতেই প্রায় ৪০ হাজার লোকের পেটের ভাতের যোগান হচ্ছে । অনেক বেকার যুবকরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে । টিনের চিমনি ও ফিক্সড চিমনির ভাটাগুলো কালো ধোয়ার কারণে প্রায় সাত আট বছর পূর্বে বন্ধ হয়ে যায়। জিগজ্যাগ ফাটার চিমনির উচ্চতা 100 ফিট । এবং এই ভাটার সাদা বর্ণের ধোঁয়া জলীয় বাষ্প হিসেবে আকাশে উড়ে যায় । যা পরিবেশে কোনরকম ক্ষতির প্রভাব নেই । হঠাৎ করে ২২ সাল থেকে পরিবেশের ছাড়পত্র নবায়ন হচ্ছে না । ভাটা চালাতে গেলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র অতি জরুরী ।তাছাড়া শ্রমিকদের অগ্রিম অর্থ দিতে হয় , তা না হলে শ্রমিক পাওয়া যায় না । একটি ভাটা পরিচালনায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হয় । আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করব ,আমরা ছাড়পত্র নবায়নের দাবি জানাচ্ছি ।
ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারুন অর রশিদ জানান অটো ভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে ৪০০ মিটার আর জিগজ্যাগ ভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে ১০০০ মিটার দূরত্বের লাইসেন্স নবায়নের শর্ত আরোপ করে পরিবেশ অধিদপ্তর । অটোভাটা ও জিগজ্যাগ ভাটা উভয়ের ক্ষেত্রেই মাটির প্রয়োজন হয় । দুই ভাটাই পরিবেশ বান্ধব । বর্তমানে ব্লক ইটের জন্য যে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে তা তৈরির উপকরণ সহজলভ্য নয় । পাথর সিমেন্ট ও বালুর মিশ্রণে ব্লক তৈরি করা আমাদের দেশে পাথর আমদানি করতে হয় । আমদানির খরচ মাটির তুলনায় অনেক বেশি ।বালুর উৎস নদী থেকে সংগ্রহের খরচ বেশি এবং সব বালু দিয়েও ব্লক তৈরি হয় না । সিমেন্ট ফ্যাক্টরির এলাকা পরিবেশবান্ধব নয় । সব মিলিয়ে ব্লক তৈরিতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে গ্রাহকদের জন্য তা সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে । তাই আমার মতে জিগজ্যাগ ভাটার দূরত্ব কমিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভাটা মালিকদের জন্য সুবিধা হবে । আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অনুরোধ করছি বিষয়টি নিয়ে পুনরায় বিবেচনা করা হোক ।
এ বিষয়ে কথা হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের নীলফামারী জেলা সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন এর সাথে , তিনি জানান যাদের পূর্বে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে , যাচাই বাছাই করে তাদেরকেই দেওয়া হবে । এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে মিটিং করে রেজুলেশন করা হয়েছে । ছাড়পত্রের বিষয়ে এখনো কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি । তবে ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেকেই ছাড়পত্র পাবে ।
বিপি/টিআই