মিনারা হেলেন: কৌশলগতভাবে বিচারকের আদেশ উপেক্ষা করে ভেনেজুয়েলার শত শত সন্দেহভাজন গ্যাং সদস্যকে বহনকারী দুটি ফ্লাইট ফেরত না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এ বিষয়ে অবগত সূত্রগুলো এবিসি নিউজ-কে জানিয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসি জেলা আদালতের প্রধান বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ সরকারকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করা যে কোনো উড়োজাহাজ যদি তখনও আকাশে থাকে তবে সেটিকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
শনিবারের শুনানিতে বোয়াসবার্গ বলেন আপনাদের ক্লায়েন্টদের অবিলম্বে জানাতে হবে যে এই ব্যক্তিদের বহনকারী কোনো ফ্লাইট যদি উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত থাকে বা ইতোমধ্যেই আকাশে থাকে তাহলে সেটিকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে হবে। এটি যেভাবেই হোক, উড়োজাহাজ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আনা হোক বা কাউকে এতে উঠতে না দেওয়া হোক।এই আদেশ অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করতে হবে।
বিচারক বোয়াসবার্গ যুক্তি দেন যে এই বহিষ্কারাদেশ গুরুতর এবং অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে অন্তত ১৪ দিনের জন্য এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট (এইএ) ঘোষণার আওতায় থাকা সব অনাগরিককে বহিষ্কার করা থেকে বিরত রাখেন এবং একটি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা (টিআরও) জারি করেন।
এই সময়ে মামলাটি আদালতে চলতে থাকলেও অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ (আইসিই) সংস্থাকে এই অনাগরিকদের হেফাজতে রাখার কথা ছিল।
তবে প্রশাসনের শীর্ষ আইনজীবী ও কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেন যে যেহেতু ফ্লাইটগুলো আন্তর্জাতিক জলসীমায় পৌঁছে গেছে তাই বোয়াসবার্গের আদেশ কার্যকর নয়।
সূত্র মতে, প্রশাসন দাবি করেছে যে ‘কার্যক্রমগত’ ও ‘জাতীয় নিরাপত্তাজনিত’ কারণে উড়োজাহাজগুলোকে অবতরণ করতে হবে।
এই শুনানির সময়েই দুটি ফ্লাইট উড্ডয়ন করেছিল। সূত্রগুলো জানায় প্রশাসন চেয়েছিল যে বিচারক কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই ফ্লাইটগুলো যেন আকাশে উঠে আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম করে।
তবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট রবিবার বলেন যে প্রশাসন ‘আদালতের আদেশ মেনে চলতে অস্বীকার করেনি।’ তিনি দাবি করেন, বিচারকের আদেশটি জারি হয়েছিল তখন, যখন ‘সন্দেহভাজন গ্যাং সদস্যদের ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিখিত আদেশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।’
লেভিট আরও উল্লেখ করেন যে, ‘ফেডারেল আদালত সাধারণত প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতি এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট (এইএ) -এর অধীনে তার ক্ষমতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাটি থেকে বিদেশি সন্ত্রাসীদের অপসারণের ক্ষমতার উপর কোনো বিচারিক এখতিয়ার রাখে না।’
রবিবারই ট্রাম্প প্রশাসন বোয়াসবার্গের রায় স্থগিত করার জন্য ডিসি সার্কিট কোর্টে আবেদন করে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা যুক্তি দেন যে বোয়াসবার্গের টিআরও জারির কোনো এখতিয়ার ছিল না এবং আদালতে দাখিল করা এক নথিতে প্রশাসন এটিকে ‘অভূতপূর্ব’ বলে অভিহিত করে।
জরুরি আবেদনে বিচার বিভাগের এক আইনজীবী লিখেছেন, ‘এই আদালতকে নির্বাহী শাখার জনগণ বহিষ্কারের ক্ষমতায় এই বিশাল, অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ করা উচিত। এই ফ্লাইটের যাত্রীদের আমরা ট্রেন ডি আরাগুয়া (টিডিএ) গ্যাং-এর সদস্য বলে চিহ্নিত করেছি, যাদের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তাই এই বিপজ্জনক অভিবাসীদের বহিষ্কার করার নির্বাহী শাখার ক্ষমতায় এই আদালতের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা উচিত।’
শনিবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, ট্রেন ডি আরাগুয়া গ্যাং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অনিয়মিত যুদ্ধ’ পরিচালনা করছে এবং তাই এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট (এইএ) ১৭৯৮ -এর অধীনে তাদের বহিষ্কার করা হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে দাবি করেছে যে, এইএ-র আওতায় প্রেসিডেন্টের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিচারিক পর্যালোচনার আওতায় পড়ে না এবং আদালতের এই আদেশ কার্যকর রাখার কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
বিচার বিভাগের আবেদনে আরও বলা হয়েছে, যদি এই টিআরও বহাল থাকে, তাহলে কোনো আদালত যেকোনো জরুরি জাতীয় নিরাপত্তার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া মাত্র নির্বাহী ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
ডিসি সার্কিট কোর্ট মামলাটির বাদীপক্ষের আইনজীবীদের মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক জবাব দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম