আবু সাবেত: যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট-এর অধীনে ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের বহিষ্কারের জন্য পরিচালিত ফ্লাইটগুলোর বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একজন ফেডারেল বিচারক। স্থানীয় সময় সোমবার (১৭ মার্চ) একটি ব্যতিক্রমী শুনানি চলাকালীন সময় মার্কিন জেলা বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এর আগে বিমানগুলো ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়ার পরও তারা তা করেননি।
এটি ছিল একটি ব্যতিক্রমী শুনানি। যেখানে মার্কিন বিচার বিভাগ (ডিওজে)-এর এক আইনজীবী বারবার ফ্লাইট সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন যে তিনি ‘অনুমোদিত নন’। এটি ছিল এক বিরল ঘটনা। যেখানে একজন আইনজীবী সরাসরি বিচারকের প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
মার্কিন জেলা বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ সোমবার শুনানির আহ্বান জানান, যখন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) সকালে আদালতে একটি আবেদন দাখিল করে অভিযোগ তোলে যে প্রশাসন হয়তো আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করেছে।
শুনানির সময় ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাটর্নি জেনারেল অভিষেক কাম্বলি যুক্তি দেন যে বিচারকের মৌখিক আদেশ বাধ্যতামূলক ছিল না কারণ লিখিত আদেশে বিমান ফিরিয়ে আনার নির্দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
বিচারক বোয়াসবার্গ কঠোর ভাষায় প্রশ্ন করেন, ‘আমি এটি সংক্ষেপে উল্লেখ করেছিলাম কিন্তু আপনি বলতে চাইছেন যে খুব স্পষ্ট একটি নির্দেশ আপনি উপেক্ষা করতে পারেন কারণ এটি লিখিত আদেশে ছিল না?
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিমানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ফেরানো কি ভালো সিদ্ধান্ত হত না, তার বদলে আপনারা বললেন, ‘আমরা যা ইচ্ছা করব’?
কাম্বলি জবাব দেন, ‘আপনার অনুগ্রহে, আমরা এই যুক্তি উপস্থাপনে সে দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করিনি।’
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার বিকেলে বলেন, ‘এই বিচারকের লিখিত আদেশ আসার আগেই সংশ্লিষ্ট সব বিমান যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছেড়ে চলে গিয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, একটি মৌখিক আদেশের আইনি কার্যকারিতা কি লিখিত আদেশের সমান, সে বিষয়ে আমাদের আইনজীবীরা আদালতে প্রশ্ন তুলতে চায়। তবে আদালতের আদেশ মৌখিক হোক বা লিখিত সাধারণত সমানভাবে বাধ্যতামূলক।
এসিএলইউ জানিয়েছে যে বিচারক বোয়াসবার্গ শনিবার সন্ধ্যা ৬:৪৫ (ইডিটি)-এ বিমান ফিরিয়ে আনার মৌখিক আদেশ দেন এবং তা রাত ৭:২৬ (ইডিটি)-এ আদালতের ডকেটে পোস্ট করা হয়। তবে, সরকারের দেওয়া ফ্লাইট তথ্য অনুযায়ী, বিমানগুলো হন্ডুরাসে অবতরণ করে ৭:৩৬ (ইডিটি) এবং ৮:০২ (ইডিটি)-এ।
এসিএলইউ অভিযোগ করেছে যে এই ফ্লাইটগুলো হন্ডুরাস থেকে পুনরায় উড্ডয়ন করে এবং পরে এল সালভাদরে অবতরণ করে যা বোয়াসবার্গের আদেশের কয়েক ঘণ্টা পর ঘটে।
শুনানির সময়, বিচারক বোয়াসবার্গ বিস্ময় প্রকাশ করেন যে প্রশাসন শনিবার সকালেই জানতে পারত যে বিকাল ৫টায় ফ্লাইটগুলোর আইনি বৈধতা নিয়ে শুনানি হবে তবুও কেন ফ্লাইটগুলো চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল?
ট্রাম্প প্রশাসন শনিবার অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট কার্যকর করে, দাবি করে যে এটি তাদের ট্রেন দে আরাগুয়া গ্যাং-এর সদস্য বলে বিবেচিত যেকোনো ভেনেজুয়েলানকে শুনানি ছাড়াই বহিষ্কারের ক্ষমতা দেয়।
এল সালভাদর সরকার ৩৬১ জন বহিষ্কৃত অভিবাসীকে গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে যার মধ্যে ১৩৭ জনকে অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্টের আওতায় বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুনানির সময় বিচারক বোয়াসবার্গ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, যদি ফ্লাইট সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব না হয়, তবে গোপনীয়তার জন্য ‘হাশার’ ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন তথ্য গোপনীয়, তাহলে আমি এটিকে নিরাপদ পরিবেশে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।’
বিচারক বোয়াসবার্গ সোমবারের শুনানি শেষে আদেশ দেন যে প্রশাসনকে ফ্লাইটের নির্দিষ্ট সময়সীমা জমা দিতে হবে বা এ সংক্রান্ত তথ্য না দেওয়ার যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে হবে মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে।
বিচারক ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেন ‘আমি এটি লিখিত আদেশে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করব, যেহেতু আমার মৌখিক আদেশের খুব একটা মূল্য নেই বলে মনে হচ্ছে’ ।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম