ফরিদপুর থেকে সংবাদদাতা : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার একটি গুচ্ছগ্রাম ও একটি আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের হত দরিদ্ররা এখন পর্যন্তু সরকারি-বেসরকারি কোন খাদ্য সামগ্রী পায়নি বলে জানা গেছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়া নিন্ম শ্রেণীর এসব মানুষ অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমন মোকাবেলায় সারাদেশে লক ডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া কর্মহীন মানুষদের কাছে সরকার চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
রোববার (১২-০৪-১২) বিকেলে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অর্ধমাসের অধিক সময় ধরে দেশে অঘোষিত লক ডাউন হলেও আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চাপুলিয়া গ্রামে একটি গুচ্ছগ্রামের ৬৫ পরিবার ও একটি আশ্রয়ন প্রকল্পের ১৩০ পরিবারের মধ্যে ৩০টি পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ১০০ পরিবারের হতদরিদ্র মানুষেররা এখনও কোন খাদ্য সামগ্রী বা সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাসিন্দারা কেউ ভ্যান চালক ও কেউ দিনমজুর আবার কেউ ফেরিওয়ালা হিসেবে কাজ করে জীবন যাপন করে। একাধিক পরিবারের কর্তারা বলেন, শুনেছি সব জায়গায় সরকার আমাগোর মত হতদরিদ্রদের চাল ডাল
দিতাছে। কিন্তু আমাদের এই গুচ্ছগ্রামে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্তু ‘কেউ এক কিলো চালও, এক কিলো ডালও দেয়নি’। সাংবাদিকদের দেখে সরকারি লোক মনে করে চাল-ডালের আশায় আশ্রয়ন প্রকল্পের দেড়-দুইশ হত দরিদ্ররা এক জায়গায় জড়ো হয়। এ সময় চাপুলিয়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা কহিনুর বেগম (৬১) বলেন, শুনেছি এখন করোনা ভাইরাস দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য কাজ করতে গেলেও কেউ আমাদের বাড়ির কর্তাদের কাজে নিচ্ছে না। সরকারি সাহায্যের ‘আমরা এখনও এক পোয়া চাল-ডাল পাইলাম না’। কোন জন প্রতিনিধিরা আমদের কোন খোজ রাখে নাই। এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বাররা আমাদের কাছে ভোটের সময় ভোট নিতে আসে পরে আর খোজ নেয় না।
চাপুলিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি আকুব্বর হোসেন বলেন, এখানে ১০০টি পরিবারের প্রায় আড়াই শতাধিক সদস্য রয়েছে। এ পর্যন্তু কোন সরকারি অনুদান বা সহায়তা পায়নি। পুরুষদেরকে কেউ কাজ করাতেও নেয় না। কিছু পরিবারের মহিলারা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে কিছু পেলে তা দিয়ে কোন রকম চলছে। আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দা ফেরিওয়ালা পান্নু শেখ বলেন, এ এলাকায় আমরা যারা বসবাস করি সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। কর্মহীন হয়ে পড়েছি সবাই। এ পর্যন্তু কেউ এক কিলো চাল-ডালও দিলো না আমাদের। আমাদের কাছে আসেও না।
এমপি তো বসন্তের কোকিলের মত আমাদের কাছে। টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রিপন ফকির জানান, তাঁর ওয়ার্ডের ৫টি গ্রামে প্রায় পাঁচ শতাধিক দিনমজুর হতদরিদ্র পরিবার রয়েছে। কিন্তু তিনি করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন মাত্র ২০টি। গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ন প্রকল্পের বসবাসরত মানুষের জন্য আলাদা কোন ত্রাণ সহায়তা আমি পায়নি।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইমাম হাসান শিপন বলেন, গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ন কেন্দ্রের সকল পরিবারকে খাদ্য সহায়তার আওতায় আনতে তালিকা করে উপজেলায় জমা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই হতদরিদ্রের
সরকারি খাদ্য সহায়তা পৌছে দেওয়া হবে। আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুর রহমান জানান, এ উপজেলার প্রতিটি হতদরিদ্র পরিবারকে খাদ্য সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে সরকারি ত্রাণ পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের তালিকা দিতে দেরি হওয়ায় সকল হতদরিদ্রের কাছে ত্রাণ পৌছানো সম্ভব হয়নি। তবে প্রকৃত দিনমজুরদের খাদ্য সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ পৌছে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ন কেন্দ্রের পরিবারগুলো অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে।
বিপি/আর এল