ফরিদপুর থেকে সংবাদদাতা: ফরিদপুরে ঢিমেতালে চলা জাতীয় পার্টির রাজনীতি দৃশ্যত গতি হারিয়ে ফেলেছে। সাম্প্রতিক করোনার এই দুর্যোগকালে দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দেখা যায়নি দলটিকে। জনগণের পাশে না থেকে পদপদবী নিয়ে ব্যস্ত ফরিদপুর জাতীয় পার্টি। এ কারনে সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
ফরিদপুরের জাতীয় পার্টির সাধারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাংগঠনিক ও সমাজকল্যাণমূলক তৎপরতা না থাকায় তাদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর শহরের অম্বিকা মেমোরিয়াল হলে বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হয়। দীর্ঘ ৯ বছর পর ওই সম্মেলনের মাধ্যমে এসএম ইয়াহইয়াকে সভাপতি ও মির্জা জাকির হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
তবে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর কোতয়ালী থানা কমিটির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের পর তিনমাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও এখনো সেই কমিটি গঠন হয়নি। সহযোগী সংগঠন যুব সংহতির কমিটিও এক বছর যাবত মেয়াদোত্তীর্ণ। আর ছাত্র সমাজের কমিটি এখনো অনুমোদনের অপেক্ষা।
শুধু ভোটের সময় দৃশ্যমান পদধারী নেতারা পরে আর মানুষের খবর নেন না’ এমন অভিযোগ দলটির তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ কর্মীদের। তাদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট বলয়ের ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে সকল পদপদবী। নতুন প্রজন্ম হতে নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ হচ্ছে না। অথচ এখনো সাধারণ মানুষের মাঝে জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সক্রিয় নেতা বলেন, ফরিদপুরে জাতীয় পার্টি একেবারেই নিস্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। জেলার শীর্ষ পদধারীদের বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক তৎপর না হওয়ায় দলটি গতিহীন হয়ে রয়েছে। এছাড়া দল চালানোর জন্য বড় নেতারা টাকা খরচ করতে চান না। এটিও বড় সমস্যা।
আশির দশকে জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় থাকাকালে ফরিদপুরের জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার নেতারা এই দলে যোগ দেন। তবে ক্ষমতার পালাবদলে তাদের বেশিরভাগই আবার সরে গেছেন। এদের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন সদর আসনের নেতা মরহুম ইমরান হোসেন চৌধুরী। আমৃত্যু জাতীয় পার্টির সঙ্গে থাকা এই নেতার পর তার স্ত্রী জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হাসিনা ইমরান চৌধুরী জেলায় জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তবে গত দুবছর যাবত তিনি আর আগের মতো সরব নন। দলের দুটি সম্মেলনেও তাকে দেখা যায়নি।
দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভিমত, যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্বেও ফরিদপুরের নেতৃবৃন্দ দলকে সংগঠিত করতে মোটেও তৎপর নন। তারা পদপদবী ব্যবহার করে নিজেদের কর্মকাণ্ড নিয়েই ব্যস্ত। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সময়েও জেলার শীর্ষ নেতারা সাধারণ কর্মীদের খবর নেননি। কোনো ত্রাণ তৎপরতাও চালাননি বলে তাদের অভিযোগ।
ফরিদপুর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক শফিকুর রহমান স্বপন এ ব্যাপারে বলেন, ফরিদপুরে জাতীয় পার্টির জেলা কমিটি সফলভাবে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে। কোতয়ালী থানা কমিটিও শিগগিরিই গঠিত হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দলে কোনো গ্রুপিং নেই। ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা নেতাকর্মীদের একত্রিত করার একটা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির হোসেন বলেন, সভাপতি ও অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করেই দল পরিচালিত হচ্ছে। এখানে বিশেষ কারো ব্যর্থতাকে দায়ি করা যাবে না।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এএইচ এম ইয়াহইয়া বলেন, সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের সময়ে আমরা একেবারেই ত্রাণ তৎপরতা চালাইনি এটি সঠিক তথ্য নয়। প্রথম দফাতেই আমরা নেতাকর্মীদের একত্রিত করে মানবিক সহায়তা দিয়েছি।
বিপি/কেজে