Home অন্যান্য আলোচিত সেই ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীম ক্লোজড

আলোচিত সেই ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীম ক্লোজড

by Dhaka Office
A+A-
Reset

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে সংবাদদাতা: আলোচিত সেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ধর্ষণের বিচার চেয়ে দুই নারীর অভিযোগ। সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত অভিযোগপত্র এখন ভোলা জেলা প্রশাসনের দপ্তরে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারি কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীমকে ক্লোজড (ওএসডি) করা হয়েছে। বিষয়টি সোমবার নিশ্চিত করেন ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুম আলম ছিদ্দিক।

তিনি আরো জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে নাদির হোসেন শামীমের বিরুদ্ধে ইমেইল যোগে ভোলা জেলা প্রশাসক বরাবরে দুইজন নারী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আরো দুইজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবী করেন। তবে নাদির হোসেন শামীম গত ৫ জুলাই তারিখে বিয়ে করেছেন অন্য এক নারীকে। বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার বড় ভাই কবীর হোসেন সুজন।

অভিযোগকারী এক ভিকটিম জানায়, প্রায় ৮মাস পূর্বে হবিগঞ্জের এনডিসি নাদির হোসেন শামীমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সহকারি কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শামীমের সঙ্গে এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর এ ভিকটিমকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সিলেটের একটি হোটেলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ করেন। এরপর বিয়ের কথা বললে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছে ওই ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি আরো জানান, পারিবারিকভাবে বিয়ের বিষয়টি মেনে নেয়ার জন্য এরপর তিনি নাদির হোসেন শামীমের ময়মনসিংহের গৌরীপুরস্থ বাসায় যান। সেখানে শামীমের পরিবারের লোকজন তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। মোবাইলে থাকা প্রমাণগুলো ডিলেট করে দেয়। ভিকটিম সিলেটের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক।

তিনি আরো জানান, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নিকট নারী নির্যাতনের শিকার ওই নারী নালিশ নিয়ে সরাসরি গিয়েছিলেন। সেখানে বিচারের বদলে তিনি পেয়েছেন ভয়ভীতি আর হুমকি। আর নাদির হোসেন শামীমকে হবিগঞ্জ থেকে ভোলায় বদলী করে আমার বিচারপ্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। তিনি কোথায় বদলি হয়েছে সেই তথ্য জানতেও সময় লাগে ৩মাস। এভাবেই দায় এড়িয়ে যান হবিগঞ্জের প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ। তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, তার সঙ্গে আমার বিয়ে বা অপকর্মের জন্য বিচার না করেই রাতের আঁধারে নাদির হোসেন শামীমকে ভোলা জেলা প্রশাসনে বদলী করে। অপরাধীকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মামলা নেয়া সম্ভব নয় বলে পুলিশও মামলা নিচ্ছে না।

এ দিকে গৌরীপুরের আরও একটি মেয়ে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ করেছেন। নাদির সেহাসেন শামীম ৩৬তম বিসিএস উর্ত্তীণ হন। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শালীহর গ্রামের আব্দুল কদ্দুসের পুত্র। এ ভিকটিম আরো জানায়, ২০০৭সালে শামীম গৌরীপুর সরকারি কলেজ হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করাকালীন তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ভিকটিম তখন ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। বর্তমানে বাংলা বিষয়ে অনার্স করছে। মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে সর্বশেষ ২০১৮সালের ৩০আগস্ট তার সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করে।

এ দিকে প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে নাদির হোসেন শামীমের সংবাদ প্রকাশিত হওয়া, একাধিক নারী’র স্ত্রী’র স্বীকৃতি দাবি আর অবস্থান কর্মসূচী পালনের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিচারের দাবি জানান অনেকেই।
অপরদিকে এই ম্যাজিস্ট্রেটের বিয়ের খবরে চট্টগ্রামের আরেক নারীও শামীমের স্ত্রী দাবি করেন। ওই নারী এ প্রতিনিধিকে জানান, তার সঙ্গে মুনশী দিয়ে ধর্মীয় শরীয়া মোতাবেক বিয়ে করে আড়াই বছর ঘরসংসারও করেছেন। ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন সময়ে তার সঙ্গে এ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি এ অভিযোগটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও থানা প্রশাসকেও অবহিত করেছেন।

গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম জানান, নাদির হোসেন শামীম একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলে জেনেছি। তার বিয়ের খবরে এক মেয়ে তার বাবার বাড়িতে অবস্থান নেয়। ঘটনাস্থলে পৌর কাউন্সিলার মাসুদ মিয়া রতন ও দিলুয়ারা আক্তারকে পাঠানো হয়। এখন জানা গেছে আরো ২টি মেয়ের সঙ্গে নাদির হোসেন শামীম সাহেব অনৈতিক সম্পর্ক, তারাও মৌখিক অভিযোগ করেছেন। এসব ঘটনায় আমরা বিব্রত। মহিলা কাউন্সিলার দিলুয়ারা আক্তার জানান, মেয়েদের ঘটনা শোনে আমি বিস্মৃত! কাউন্সিলার মাসুদ মিয়া রতন বলেন, একজন ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে নারীদের এতো অভিযোগ শোনে, আমরাও লজ্জিত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি আরেক নারী বিয়ের দাবিতে নাদির হোসেন শামীমের বাবার রেলওয়ে স্টেশন এলাকার ভাড়া বাসায় অবস্থান নেয়। ওই নারী অযৌক্তিক দাবী নিয়ে পরিবারকে নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ এনে শামীমের বাবা উল্টো ওই নারীর বিরুদ্ধে গৌরীপুর থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। জিডি নং ১৩১২, তারিখ ২০/০২/২০২০। এ নারীর বান্ধুবী ঘটনার সাক্ষী দেয়া এবং তার বান্ধুবীকে বিয়ে করার জন্য শামীমের পরিবারের অনুরোধ জানান। এই অনুরোধের ঘটনাকে ‘ভয়ভীতি প্রদর্শন’ উল্লেখ শামীমের ভাই কবীর হোসেন সুজন ২৩ ফেব্রুয়ারি আরেকটি সাধারণ ডায়রী করেন। যার জিডি নং ১৪৩৮। সাধারণ ডায়রী প্রসঙ্গে গৌরীপুর থানার সাবইন্সপেক্টর মোঃ এমদাদুল হক জানান, সাধারণ ডায়রী করা হলেও তদন্তকাজ তাদের অনুরোধে বন্ধ রাখা হয়।

বিপি/কেজে

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী