Home প্রবাস ‘হত্যার পরদিন টুকরো করা হয় ফাহিমের মরদেহ’

‘হত্যার পরদিন টুকরো করা হয় ফাহিমের মরদেহ’

by bnbanglapress
Published: Updated:
A+A-
Reset

নিজস্ব প্রতিবেদক: গোয়েন্দাদের ধারণা অনুযায়ী পাঠাও-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা তরুণ উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ’কে হত্যা করা হয় ১৩ জুলাই (সোমবার)। তবে সন্দেহভাজন খুনি মঙ্গলবার আবারও তার ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল মরদেহ টুকরো করতে। এই হত্যার পেছনের রহস্যগুলো এখন একে একে বের হয়ে আসছে।
১৩ জুলাই (সোমবার) থেকে ভাইকে ফোনে না পেয়ে ফাহিমের এক ছোট বোন মঙ্গলবার তার কামরায় (অ্যাপার্টমেন্ট) ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, শরীর থেকে মাথা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ফাহিমের মরদেহ পড়ে আছে এবং শরীরের একটা অংশ পাশের একটি প্লাস্টিক ব্যাগে ভরা। পাশেই পড়ে আছে একটি ইলেকট্রিক করাত। এরপর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকার সেই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, ফাহিম সালেহকে স্থানীয় সময় সোমবার কোনও এক সময়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী ওই দিন চলে যাওয়ার পরদিন মঙ্গলবার আবার ওই কামরায় ফিরে আসে। ইলেকট্রিক করাত দিয়ে মরদেহ টুকরা করে বড় আকারের ব্যাগে ভরে ফেলে সে। হত্যার আলামত মুছে ফেলারও চেষ্টা করে।
মার্কিন দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দুজন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, হত্যাকারী যখন ফাহিম সালেহর শরীর টুকরা টুকরা করে ব্যাগে ভরছিল, তখনই তার বোন ওই কামরায় ঢুকছিলেন। লবিতে পৌঁছালে হত্যাকারী বিষয়টি টের পায়, তখন কামরার পেছনের দরজা ও সিঁড়ি দিয়ে পালিয়ে যায় সে।
শুক্রবার (১৭ জুলাই) ফাহিমকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী হাসপিলকে। একইদিনে তার বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগ দায়ের করা হয়। এক সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের প্রধান ডিটেকটিভ রোডনি হ্যারিসন সাংবাদিকদের বলেন, ফাহিমের অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়গুলো তদারকি করতো সন্দেহভাজন হাসপিল।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, ফাহিম সালেহ যখন জানতে পারেন তার চিফ অব স্টাফ টেরেস ১ লাখ ডলার আত্মসাৎ করেছে, তখন তাকে ওই টাকার জন্য চাপ দেন। পরে টেরেস টাকা ফেরৎ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর জেরেই ফাহিম সালেহ খুন হন বলে নিউ ইয়র্ক পুলিশের ধারণা।
এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে নিজ কামরা থেকে ফাহিমের খণ্ডবিখণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়। গত বছর সাড়ে ২২ লাখ ডলারে ম্যানহাটানের লোয়ার ইস্ট সাইডে সাফোক স্ট্রিটের ইস্ট হিউস্টন স্ট্রিটের ওপর কন্ডোটি (বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট) কেনেন তিনি।
ফাহিমকে হত্যার ঘটনায় বিশ্ব মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যেই তিনি পশ্চিমা মিডিয়ায় টেক জায়ান্ট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই নিজের প্রযুক্তি প্রতিভার প্রমাণ দেন এ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। ৩৩ বছর বয়সী ফাহিম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের হরিসপুরের আইবিএমের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সালেহ আহমেদের ছেলে।
আগের দিন থেকে ভাইকে ফোনে না পেয়ে তার ছোট বোন মঙ্গলবার ভবনটির সপ্তম তলায় ফাহিমের কামরায় ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, শরীর থেকে মাথা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ফাহিমের লাশ পড়ে আছে এবং শরীরের একটা অংশ পাশের একটি প্লাস্টিক ব্যাগে ভরা। পাশেই পড়ে আছে একটি ইলেকট্রিক করাত।
গোয়েন্দারা জানান, ফাহিমের কাছ থেকে কয়েক হাজার ডলার চুরি করেন টেরেস। বিষয়টি জানার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি ফাহিম। উল্টো মনস্থির করেছিলেন যে, ডলার ফেরত পাওয়ার পর সেখান থেকে তাকে (টেরেস) একটা অংশ দেবেন।
নিউ ইয়র্ক বলছে, লাশ উদ্ধারের আগের দিন সোমবার ফাহিমকে খুন করা হয়। এরপর খুনী হত্যার আলামত মুছে ফেলতে তার মালিকের (ফাহিম) ক্রেডিটকার্ড ব্যবহার করে ২৩ ম্যানহাটন স্ট্রিট থেকে ফ্লোর ও ঘর পরিষ্কারের সামগ্রী কেনেন। পরেরদিন লাশটি খণ্ডবিখণ্ড করতে সে আবার ওই অ্যাপার্টমেন্টে যায়।
গোয়েন্দারা জানান, হত্যাকারী কালো রঙের স্যুট, কালো মাস্ক পরে এসেছিলেন। হাতে ছিল একটি ব্যাগ। সে ফাহিমের পেছন পেছন ওই অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকেছিল।
পুলিশ আরও জানায়, হত্যাকারী ফাহিমের শরীর টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরার সময় তার বোন ওই কামরায় প্রবেশ করেন। বিষয়টি টের পেয়ে এরপর সে কামরার পেছনের দরজা ও সিঁড়ি দিয়ে পালিয়ে যায়।
ফাহিম সালেহর জন্ম ১৯৮৬ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে পড়াশোনা করতেন ফাহিম। নাইজেরিয়া আর কলম্বিয়াতে তার দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানি রয়েছে। পেশায় ওয়েবসাইট ডেভলেপার ফাহিম অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্লোবাল নামক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানেরও উদ্যোক্তা ছিলেন।

বিপি।এসএম

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী