জবি প্রতিনিধি: ঘরের দেওয়ালে আর টেবিলের ডেস্কে সময় এলো ক্যালেন্ডার পাল্টে দেওয়ার। একটি বছর যখন চলে যায়, আমরা ফিরে দেখি বড় ঘটনাগুলো। যেখানে আমরা ভালোলাগা খুঁজি। নতুন বছর আসার কিছু দিন পরই হয়ত আগের বছরের কথা ভুলতে থাকি আমরা। করোনার মতো প্রতিকূলতা মাথায় নিয়েই ২০২১ সাল বিদায় নিতে যাচ্ছে। তাই সবার মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও ছিলো নানা জল্পনা-কল্পনা। তাদের ব্যক্ত করা অভিমত তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।
আপনজন হারানোর কষ্ট ফিরে না আসুক
নিঃসন্দেহে ২০২১ সাল একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বীভৎস বর্ষ ছিলো, যেখানে বাধ্য হয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিলো আপন থেকে আপনজনের দূরত্ব। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য ইত্যাদি সকল খাতেই পড়েছে প্রাণঘাতী এই কোভিডের থাবা। কোভিডের মধ্য দিয়েই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সরকার পাকা ঘর নির্মাণ করে দরিদ্রদের থাকার বন্দোবস্ত করার যে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলো তা বাস্তব রূপ লাভ করেছে। কোভিড-১৯ কাটিয়ে উঠুক পুরো বিশ্ব। নতুন বছরে কোভিডের কারণে যেন নতুন কাউকে হারাতে না হয়। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্য দিয়েই থমকে যাওয়া পুরো পৃথিবীতে প্রাণ ফিরে আসুক।
আবির হাসান সুজন
শিক্ষার্থী, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ
বিদায় নিচ্ছে ২০২১
বৃহস্পতিবারের সূর্যাস্ত আরেকটি খ্রিস্টীয় বছরের সমাপ্তির ডাক দেবে। আর আগামীকালের ভোরের সূর্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসবে আরেকটি নতুন বছর। বলতে হবে-স্বাগত ২০২২! বছরের এই শেষ দিনটিতে এসে ভালো-মন্দ আর আনন্দ-বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন অনেকেই। একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন প্রায় সকলে। অন্তত ঘরবন্দি অবস্থাতেই কেটেছে বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময়। তারপরও রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০২১ বেশ ঘটনাবহুল একটি বছর। নানা ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, ঘটেছে উত্থান-পতনের ঘটনা। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর ভাবনায় নানাভাবে মূল্যায়িত হবে বিদায়ী এই বছরটি।
রিদুয়ান ইসলাম
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ
বিভীষিকায় কেটেছে ২০২১
২০২১ সাল বাংলাদেশও পার করেছে ভালো-মন্দ মিলিয়ে। বাংলাদেশও করোনার ধকল মুক্ত থাকতে পারেনি। তবে যতটা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়েছিল ততটা হয়তো হয়নি বা অর্থনীতি সেভাবে ভেঙে পড়েনি। অনেকে কর্মহীন হয়েছেন, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। রাজনীতিও অনেকটাই করোনাকবলিত। রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতাও সীমিত। ২০২১ সালে উদযাপন করা হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সব মিলিয়ে করোনার কারণে ২০২১ সালকে বিদায় জানাতে হয়তো মন ভারাক্রান্ত হবে কম। এই বছর থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, সংকটকে সবাই একসাথে মোকাবিলা করেছি, বাস্তব জীবনেও উপলব্ধি করেছি। কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি কোভিড-১৯। এই প্রত্যয়ে নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন আর লক্ষ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
ইউছুব ওসমান
শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ
একুশের হতাশা বাইশে আসুক জাগরণ হয়ে
বিষফোঁড়া বিষের সমাপ্তির শেষে করোনা ভ্যাকিসিনের আবিষ্কার একুশের শুরুতেই আনে প্রাপ্তির ছোঁয়া। অতঃপর করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ আবারো সংকটের মাঝে ফেলে বিশ্ববাসীকে। শুরুর দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে জেঁকে বসে হতাশা। সব হতাশার মাঝেও বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে দাঁড়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সফল ভ্যাকসিন কূটনীতি এবং ভ্যাকসিনের সুষ্ঠ বাস্তবায়ন৷ বছরের শেষাংশে তাই ঝুঁকিমুক্ত ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ও জমে যাওয়া পরীক্ষা গুলো শেষ করা হয়৷ ফলশ্রুতিতে জমে যাওয়া হতাশার সমাপ্তি ঘটে। প্রাপ্তি, হতাশা এবং শেষ সময়ের হাসি বা আনন্দ এই তিনে সুন্দর এক কম্বিনেশনে বিদায় জানাতে হচ্ছে একুশকে। প্রত্যাশা থাকবে প্রাপ্তিগুলো নতুন মোড়কে নতুন ভাবে প্রেরণা জোগাবে বাইশে এবং হতাশা, গ্লানি গুলো যাবে ঘুচে। সুন্দর হোক ২০২২।
অনন্য প্রতীক রাউত
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
করোনায় কেটে গেল ২০২১ সাল
করোনার তাণ্ডবে অস্থিরতার মধ্যেই কেটে গেল দুই হাজার একুশ সাল। শরীর শিউরে ওঠা খবর শুনতে শুনতে ভয়ের রাজ্যে ঢুকে গেছে মন। ক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের কাছে অসহায় পুরো পৃথিবী। একে অপরের কষ্টে হাত হাত রেখে, পায়ে পা মিলিয়ে সহযোগিতা করা, ভালোবেসে জড়িয়ে ধরার নেই উপায়। হাহাকার আর বীভৎসতার মধ্যে কেটেছে, কাটছে দিন; বিশেষ করে যারা হারাচ্ছে স্বজন। ভাইরাসের ভয়ে অনেকের অতি রূঢ় আচরণের পাশাপাশি হিংসা, স্বার্থপরতার প্রকাশ দেখা গেছে। করোনা ভীতির পুরো সময়টায় অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রতারকদের কারসাজিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে বার বার। সৃষ্টিকর্তার দয়া আর বিজ্ঞানের দিকে যখন তাকিয়ে ছিল পৃথিবীর মানুষ, এ অবস্থায় ভ্যাকসিনের সুখবর দিয়েছে বিজ্ঞান। সৃষ্টিকর্তার রহমতে, বিজ্ঞানের সহায়তায় বিলুপ্ত হয়ে যাক করোনা ভীতি। কুরুচিপূর্ণ মানুষের মনে জাগ্রত হোক বিবেকবোধ। প্রতিটি পর্যায়ে সুস্থতা পাক পৃথিবী, দেশ ও সমাজ।
শ্রাবন্তী হরি
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
আনন্দ-বেদনায় বিদায় ২০২১
পুরো বিশ্ব নতুনভাবে বাঁচার রাস্তা হাতড়ে বেড়িয়েছে বছরজুড়ে। মানুষজন মাসের পর মাস ঘরে থাকতে বাধ্য হয়েছে। টানা একটা বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুখর হয়নি শিক্ষার্থীদের হইহুল্লোড়ে। এমন তিক্ততাতেই শেষ হচ্ছে ২০২১। সব বিদায়ের সঙ্গেই লুকিয়ে থাকে আনন্দ-বেদনার কাব্য। আজকের সূর্যাস্ত আরেকটি খ্রিস্টীয় বছরের ইতি টানছে। আগামীকালের ভোরের সূর্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসবে আরেকটি নতুন বছর। পেছনে ফেলে যাচ্ছি যে বছর সেটি অর্থনৈতিক দিক থেকে ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে। নানা ক্ষেত্রে ঘটেছে উত্থান-পতন। করোনা মোকাবিলা করে অবরুদ্ধ মানুষ নিজেকে বাঁচানোর প্রক্রিয়া আবিষ্কার করে বেরিয়ে এসেছে ঘর থেকে। সবার আশা, যাবতীয় বাধা পেরিয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার লক্ষ্যে।
নুসরাত জাহান রিজু
শিক্ষার্থী, সংগীত বিভাগ
ভয়-জয়ের সম্মিলিত প্রয়াস ২০২১
ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই। প্রতিটি মুহূর্তেই জীবন থেকে একটি একটি করে সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি পরিসমাপ্তির পথে ২০২১। বছরের প্রতিটি মুহূর্তকে রাঙিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সংগ্রাম। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার মাঝেই অতিবাহিত হলো ২০২১।তবে ২০২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিভিন্ন প্রভাব ফেলেছে আমাদের ওপর। সকল জনগণকে করোনার টিকা প্রদান, অনলাইন ক্লাস করা, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সফলতা, কূটনীতিতে এসেছে সাফল্য, হাফপাশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, দূর্ঘটনা, হত্যা, শিল্পকারখানা ও লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, ধর্ষণ, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন, শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসা এবং পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করা, দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করা, নারী উদ্যোক্তার বৃদ্ধির মাধ্যমেই কেটে গেল ২০২১। আমরা একটা নতুন পৃথিবী চাই, তা আমরা পাব না, কিন্তু তার স্বপ্ন যেন না মরে। তার জন্য একক এবং সম্মিলিত প্রয়াস যেন থেমে না যায় এটাই প্রত্যাশা।
সাঈমা আক্তার
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
বিষাদময় ২০২১
২০২১ সাল বিশ্বের প্রতিটি মানুষ মনে রাখবে, মহামারি করোনার জন্য। ২০২১ এ বিষক্ষয় না হয়ে রয়ে গেল বিষাদময়। গত একটি বছরে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবতে বসলে শুধুই চোখে ভাসতে হারানোর স্মৃতি। এবছর আমরা মহামারি করোনা থেকে বেঁচে থাকার লড়াই করে গেছি শুধু। আর এজন্য আমাদের জীবনযাপনে এসেছে বড় পরিবর্তন। প্রায় সারা বছর স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ, শিশুদের নতুন স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন তুলে রেখেছে তাদের অভিভাবকরা। বছরের শেষে এসে আস্তে আস্তে খুলে দেয়া হয়েছে সব। ২০২১ সাল নিয়ে লিখতে গিয়ে আসলে করোনার বাইরে তেমন কিছুই পাওয়া গেলো না। তবে এই ২০২১ এ দাঁড়িয়েই স্বপ্ন দেখছি ২০২২ এ করোনামুক্ত নতুন ভোরের।
ছামিরা ইসলাম ছনি
শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ
বিপি/কেজে