জবি প্রতিনিধি: পশ্চিম আকাশে উঁকি দিয়েছে জিলহজ মাসের চাঁদ। জানান দিচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহার উপস্থিতি। ঈদুল ফিতরের পর ঈদুল আজহা মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এ উৎসবে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দ্যেশ্যে পশু কোরবানি করেন। কোরবানি ঈদ মুসলিমদের কাছে আলাদা গুরুত্ব বহন করে থাকে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ত্যাগের মহিমা অনুধাবন করতে পারে। নিজ পরিবারের পাশাপাশি সমাজেও ছড়িয়ে দিতে পারে। তারুণ্যের সেই ভাবনাগুলোই তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক আবু সুফিয়ান সরকার শুভ।
কোরবানির ঈদ আল্লাহ সন্তুষ্ট অর্জনের এক বড় মাধ্যম
মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল আযহা। জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখে পালিত হয় উৎসবটি। মহিমান্বিত আল্লাহর বিধান পালিত হয় বলেই দিনটির এতো মর্যাদা। হযরত ইবরাহীম আ. এর যুগ থেকে হাজার হাজার বছর ধরে এভাবেই পশু কুরবানির রীতিটি পালন করে আসা হচ্ছে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। ত্যাগের এক অপূর্ব উদাহরণ যেনো এই ঈদুল আজহা সেখানে শুধু মাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যেই পশু কুরবানি করে বিভক্ত করে শরিয়ত সম্মত পন্থায় নির্ধারিতদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। পশু কুরবানি তথা ঈদ-উল আযহাকে ঘিরে রমরমা হয়ে ওঠে পশু বিক্রির হাট ও বেচাকানা ও । চলে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত পাশাপাশি, কাছের মানুষদের জন সাথে ঈদের দিনটা উপভোগ করে ঢাকা ছেড়ে দূর দূরান্তে পাড়ি জমায়। হাজার হাজার মানুষ। বাস কাউন্টার, বাস স্টেশন, রেলের কাউন্টার সব জায়গার বিরাজ করে হ-য-ব-র-ল অবস্থান। পরিবারের লোকের সাথে ঈদযাপনের প্রশান্তি যেনো প্রাধান্য পায় এসময় । ১০, ১১, ১২ জিলহজ্জ ধরে চলে। পশু কুরবানি। এবং এর পরপরই বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য সিটি কর্পোরেশন ও কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠে। ও পরিশেষে, ঈদ নিয়ে আসে শান্তির বার্তা অনাবিল সুখের বার্তা। এবং ঈদুল আজহার এই জোর পশু কুরবানির মাধ্যমে ত্যাগের ঐতিফলন ঘটুক প্রত্যেক মুমিনের জীবনে।
আমেনা আক্তার মৌ
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
ঈদ হোক আনন্দময়
ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। মুসলমানদের বড় দুটি উৎসবের মধ্যে একটি হল ঈদ-উল আযহা বা কোরবানির ঈদ। কোরবানির পশুকে কেন্দ্র করে শিশু বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক বৃদ্ধ মানুষ পর্যন্ত সকলের মধ্যে আনন্দের জোয়ার ওঠে। সবাই নিজের মত করে দিনটি উদযাপন করতে চায়। সামর্থ্যবান মানুষেরা কোরবানি করবেন। আর এই কোরবানির মাংস সমান তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয় স্বজনের জন্য এবং আরেক ভাগ সমাজের অসহায় মানুষের জন্য। যেন সমাজের সকল মানুষ এই দিনটিকে আনন্দের সাথে পালন করতে পারে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করতে যাওয়া, নতুন জামা পরে পরিবারের সবাই একসাথে ঈদগাহে যেয়ে ঈদের নামাজ পড়া, ঈদগাহ থেকে ফিরে কোরবানি করা, মিষ্টি খাওয়া সবকিছুর মধ্যে এক অপার আনন্দ রয়েছে। ঈদ সালামি, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া, বাইরে ঘুরতে যাওয়া সবকিছুই ঈদকে আরও স্মরণীয় করে তোলে।
তাজুল ইসলাম তাসিন
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
ঈদের উচ্ছ্বাস থাকুক সকলকে ঘিরে
ঈদুল মুসলিম ধর্মালম্বীদের একটি বড় উৎসব। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে মুসলিম সম্প্রদায় আনন্দের সাথে পালন করে এ উৎসবটি। ঈদুল আজহা আমাদের ত্যাগ ও আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার শিক্ষা দেয়। ঈদ মানেই আনন্দ। আর এ আনন্দ সবার জন্য। এই আনন্দ সবার মাঝে বিরাজ করার ব্যাপারটি স্বাভাবিক হলেও অনেক মানুষই এ দিনটি কাটায় অসহায়ত্বে। তাদের কাছে ঈদ মানে আনন্দ নয় বরং একটি স্বাভাবিক দিন। আবার কোনো কোনো সময় এই দিনটি তাদের জন্য এক দুঃখের দিন, কারণ এদিন সকালে হাসি আনন্দের মাঝে তারা একটু ভাগ বসাতে চাইলেও ভাগ্য যেন তাদের সহায় না। ঈদে দেখা যায় মানুষের তার বাড়ি ফেরা। নিজের শেকড়ের টানে সবাই যেন হাজারো বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে প্রিয় মানুষগুলোর কাছে যাওয়ার এক খণ্ডকালীন যুদ্ধে মেতে ওঠেন। আর বাড়ি ফিরে সকলকে ঘিরে এক উচ্ছ্বাস। ঈদের আসল মর্মার্থ তখনই উজ্জীবিত হবে যখন আমরা সকলের পাশে দাঁড়িয়ে ঈদ এর এই আনন্দ ভাগ করে নিতে পারব। আর এ আনন্দ যেন শুধু নিজেকে ঘিরে না হয়। বরং ঈদ এর এই আনন্দ সবার।
সাফা আক্তার নোলক
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ঈদুল আজহা এক বিশাল আত্মত্যাগ
ঈদুল আজহা ত্যাগের উৎসব ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয় এই উৎসবটি কুরবানি ঈদ নামে পরিচিত। এই উৎসবকে কোরবানি ঈদ বলা হয় এই দিনটিকে মুসলমানেরা ফজরের নামাজের পর ঈদগাহে গিয়ে দু’রাকাত নামায আদায় করে ও আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, উট আল্লাহ নামে কোরবানি করেন। প্রতিবছর গরু-ছাগল হাটে মানুষ তার ভালোবাসাকে বিসর্জন দিতে দেখেছি। যারা হাটে গরু ছাগল বিক্রি করে আসেন তারা বেশির ভাগ গরিব মানুষ তারা গরু ছাগলকে নিজের সন্তানের মতো বড় করে কিন্তু এই ভালোবাসা হেরে যায় টাকার কাছে এই ঈদে মুলত তাদের যারা নিজেদের ভালোবাসাকে চোখের জলে ভাসিয়ে দিয়ে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করেন এই বছর রাজাবাবু কে যেভাবে তার মালিক বিক্রি করে দিলেন তিনি বাড়ি ফিরবেন কিভাবে তা নিয়ে সন্দীহান। যারা আসলে যারা এই ত্যাগ করেন তাদের জানাই স্যালুট।
সালিমা নবী
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
এবারে ঈদ আনন্দ আর আত্মউপলব্ধির
যিলহজ্বের কোন এক প্রাতে চক্ষুদ্বয় মেলতেই মশারি ভেদ করে সিলিং ফ্যানের ঘুরতে থাকা নজরে আসলো। দূর থেকে আম্মুর স্পষ্ট কন্ঠস্বর “আজ ইদের দিনে আর কতক্ষণ ঘুমাবি ?” কিছুক্ষণের মধ্যে আম্মুর কন্ঠস্বর মিলিয়েও গেলো। ঠোঁটের কোনে অস্ফুট হাসির রেখা ফুটে উঠল। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়েও ইদ শব্দটা একইরকম ভাবে আমার অন্তর ও বাহিরের সমস্ত জরাজীর্ণতাকে মাড়িয়ে বাঁধ ভাঙ্গা খুশির জোয়ার এনে দেই। এসব ভাবনা এখানেই সাঙ্গ করেই ফ্রেশ হয়ে পার্থিব জগতের সবচেয়ে ভালবাসার মানুষের হাতের সেমাই লুচি খেয়ে আনন্দময় দিনের শুরু। অতঃপর উত্তম পোশাকে পারিবারিক আড্ডা, ঘোরাঘুরি মধ্যেই মহান আল্লাহর দেওয়া বিধান মতে পশু কুরবানির বিষয় সম্পন্ন হলো। এতসব আনন্দ, খুশি, ভালো লাগার মধ্যে মনে হতে লাগল হৃদয়ের পশুত্ব দমন করে কতখানি ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল করতে পারলো নিজেকে? এভাবেই ১০ যিলহজ্জ্ব পার হলো অসীম আনন্দ ও আত্ম উপলব্ধির দোলাচালে।
মাহজুবা তানিজ
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
ঈদ আত্মার প্রশান্তি বয়ে আনুক
ঈদ-উল আযহা আল্লাহ সন্তুষ্ট লাভের আরেক নাম। পশু কোরবানি করার মাধ্যমে নিজের পশুত্বকে বিলিন করাই এ ঈদের উদ্দেশ্য। পশু কোরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি গোশত বন্টনের মাধ্যমে সমাজের গরীব দুঃখীদের আনন্দের অংশ নেওয়াও এ ঈদের উদ্দেশ্য। পশু কোরবানি যাতে আমরা সকলে সঠিক ভাবে করতে পারি, কোরবানির গোশত সঠিক ভাবে ভাগ করতে পারি এবং নিজ হাতে গরীব দুঃখীদের মাঝে বন্টন করতে পারি এদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত। ঈদ মানে আনন্দ এ আনন্দ সকলকে নিয়েই হোক। ধনী গরীব সকলে মিলে এ বন্ধন গড়ে উঠুক। ভাতৃত্বের বন্ধন নিয়ে এ ঈদ সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক।
জান্নাতুল টুম্পা
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
ঈদে সবার মুখে হাসি ফোটুক
ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ-উল্লাস। কোভিড-১৯ বিগত দুই বছর ঈদের আনন্দ অনেকাংশে ম্লান করে দিয়েছিলো। এবার ঈদের সেই পুরনো আমেজটা ফিরে আসবে। ঈদুল আজহা ত্যাগের উৎসব। ত্যাগের মধ্যেই যে প্রকৃত সুখ নিহিত থাকে ঈদুল আজহা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে প্রতিবছর ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করি। ঈদের সকালে রান্নায় আম্মুকে সাহায্য করা এবং পরিবারের সকলে একসাথে খাবার খাওয়া এরপর কোরবানি করা ও কুরবানীর মাংস গরীব-দুঃখী আত্নীয়, প্রতিবেশীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার মাঝেই থাকে অসীম তৃপ্তি। ঈদুল আযহার লক্ষ্য হচ্ছে সকলের সাথে সদ্ভাব, আন্তরিকতা এবং বিনয়-নম্র আচরণ করা। ঈদে শুধুই দামি পোশাকে বিলাসীতা না করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, শ্রেনী-পেশা দলমত নির্বিশেষে আর্তমানবতার পাশে দাঁড়াবো। হিংসা-বিদ্বেষ ভূলে সাম্য, মৈত্রী, সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবো। অসহায় এবং দুস্থ প্রতিবেশীদের সাহায্য করার মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়াবো, তাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে ঈদের দিনটি সুন্দর কাটবে আশা করছি।
আফরোজা আক্তার
শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
ঈদের আনন্দ হোক সবার
ঈদ মানেই দীর্ঘ এক মাসের সংযমের পর আনন্দ আর খুশী। আনন্দের সংজ্ঞা যদি ও একেক জনের কাছে একেক রকমের। অন্যের জন্য কিছু করার মাঝে যে সুখ আছে তা এই ঈদুল ফিতর এ সবচেয়ে বেশী উপলব্ধি করা যায়! আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবার মাঝে একটা উৎসব উৎসব ভাব দেখা যায়। সবচেয়ে বেশী আমেজ দেখা যায় ছোটো ছেলে মেয়ে আর কিশোর কিশোরীদের মাঝে। সবার নতুন জামা আর হাসি হাসি মুখ যেনো জানান দেয় দীর্ঘ অপেক্ষার পর উৎসবের উপস্থিতিটুকু। দিনশেষে সবার জীবনে ঈদ খুশী আনন্দ বয়ে নিয়ে আসুক, আমাদের এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে পরোপকারী হওয়ার শিক্ষা দিক সেই কামনাই থাকবে।
সাকিবুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
বিপি/কেজে