হাফিজুর রহমান হাবিব, তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় হিমালয়ের-কাঞ্চনজঙ্ঘা ও সমতলের চা সৌন্দর্যের পর মুগ্ধতা কাড়ছে নেদারল্যান্ডের ১০ প্রজাতির টিউলিপ ফুল। ভিনদেশি টিউলিপের সৌন্দর্যে মুখরিত হয়ে উঠেছে তেঁতুলিয়া। এতে করে সৌন্দর্যের টিউলিপের দীপ হয়ে উঠেছে এ উপজেলাটি।
এ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর পর্যটকের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে। ভিনদেশি এ টিউলিপ চাষে পর্যটনে যুক্ত হয়েছে নতুনমাত্রা।
এবার দুই একর জমিতে এক লাখ গাছে ফুটেছে বাহারি রঙের ১০ প্রজাতির রাজসিক টিউলিপ। রং গুলো হচ্ছে- অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সানরাইজ (হলুদ), ষ্টংগোল্ড (হলুদ),জান্টুপিঙ্ক (গোলাপী), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিষ্টিকভ্যান ইজক (গোলাপী), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল ছায়া) এবং গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং ইণ্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভলপমেন্ট (ইফাদ)”র সহযোগিতায় দেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)’র মাধ্যমে পাইলট প্রকল্পে চাষ করা হচ্ছে বিদেশি ফুল টিউলিপ। প্রান্তিক সীমান্ত গ্রাম দর্জিপাড়ায় এ অঞ্চলে টিউলিপ পাইলট প্রকল্প নিয়ে জেলা-উপজেলার গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের অবহিতকরণ করেছেন ইএসডিও’র পরিচালক (প্রশাসন) ড.সেলিমা আখতার।
ড.সেলিমা আখতার বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া পর্যটনে অপার সম্ভাবনাময় এলাকা। হিমালয়কন্যা এ জেলার তেঁতুলিয়ায় আমরা ইকো ট্যুরিজম গড়ে তুলতে ভিনদেশি টিউলিপ ফুলের চাষ পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছি। গত বছর আমরা পরীক্ষামূলকভাবে দর্জিপাড়া-শারিয়ালজোত দুটি গ্রামে ৮জন প্রান্তিক নারী কৃষাণীদের নিয়ে ৪০ হাজার টিউলিপ চাষ শুরু করি। প্রথমবারেই টিউলিপ ফুটিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে নারীরা। দ্বিতীয়বারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ২০ জন নারী কৃষাণীদের হাতে প্রস্ফুটিত হচ্ছে ভিনদেশি নেদারল্যান্ডের উচ্চ মূল্যের দামি ফুল। পর্যটন এলাকায় টিউলিপ ফুলের বাগান সৃষ্টি হওয়ায় পর্যটনের আকর্ষণও বেড়েছে। দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এসে বাহারি রঙের টিউলিপ ফুল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। কেউ সেলফি তুলছেন। আবার কেউ ফুল কিনছেন।
তিনি আরও বলেন, টিউলিপ চাষে এবার ব্যয় হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। বাল্ব বা চারার দাম, শেড নেট, ফেন্সিং নেট, রাসায়নিক সার, জৈবসার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্য ধরেই এই ব্যয় হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি এক লাখ টিউলিপ ফুলের বাল্ব (বীজ) রোপণ করা হয়। রোপনের ১৫-১৬ দিনে আসে চারা গজিয়ে কলি ফুটে। টিউলিপ ফুল উৎপাদন করে ফুলের জগতে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে উৎপাদিত প্রতিটি ফুল বাগান থেকে ৫০ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রি শুরু করেছেন তারা। ফুল বাগানে ক্ষুদ্র পরিসরে বিনোদন পার্ক তৈরি করে পর্যটক ও ফুলপ্রেমিদের জন্য প্রবেশ মূল্য চালু করেছেন। এতে করে ফুল বিক্রি বাদেও তারা অতিরিক্ত টাকা আয় করতে পারবেন।
এখন প্রতিদিনই ফুটছে নতুন নতুন ফুল। এ ফুল ঘিরে নারী কৃষাণীদের আয়ের স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। এ ফুলের পর অন্য সময়টাতেও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষাবাদ করতে পারবেন তারা। সামনে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস রয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস রাঙাবে আমাদের টিউলিপ। মুগ্ধ করবে যেকোন পর্যটকদের।
বিপি>আর এল